কই রে বাবু?উঠে পড়।এই দুইটা বাসি রুটি খেয়ে পইড়তে বস।আমি যাই মাটি কাইটতে হবে।এই বরষার সময়টায় চাষের ফলন ভালো হয়।সকাল থেকে লেগে পড়লে কাজে দিবে।এই সুময়টায় দেখে শুনে চলা ফেরা কইরতে হবে লয়ত মা মনসার বাহন গুলান বাইরবে। বাবুর বাবার মতন আমার ও অকালে চলি গেলে হবে লাই।উয়ার বাবার অনেক স্বপন ছিল বাবু বড় হইবে।চাষ কইরবে না।সারা গেরামের মানুষ ওরে লিয়ে গরব কইরবে।
মাটি কোপাতে কোপাতে মনে পরে যায় পুরানো দিনের কথা।এই ভাবতে ভাবতে যে কখন বেলা পড়ে এসেছে সে খেয়াল নেই।
-লতা ও লতা এখনো কোদাল চালাস নাকি?পেটে কিছু দিয়েছিস?
-খিদে লাই গো
-ও কি কথা বলিস।দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চলল।না খেয়ে অসুখ বাধালে দেখবে কে শুনি?ছেলেটার তো তুই ছাড়া লাই কেউ তিনকুলে।
-তাই তো আমি ডরাই গো লক্ষি দি। এমন এক বরষায় তো বাবুর বাবার পেরান টা গেল।
-এই নে শুকনো মুড়ি দুটো চিবিয়ে নে কেনে।ও লতা তোরে আবার মুকুন্দ বাবু ডাকেরে।
-যাই শুনে আসি কেনে।
আমি লতা। আমার দুচোখে এখন একটা ই স্বপন আমার বাবুকে মাইনষের মতোন মাইনষ করা।আমার এখন সর্বক্ষনের সাথী লক্ষি দি।মাইনষ টা বড় ই ভালো।এখন আমি সারাদিন চাষের কাজ করি৷ সন্ধ্যে বেলায় যাই সেলাই শিখতে।সরকার থেকে লোক এসে আমাদের সেলাই শেখায়।মুকুন্দ বাবু লোকটা ভালো। কোনও কুমতলব নেই।বাবুর বাবা মারা যাওয়ার পর আর কোনো লোককে বিশ্বাস হয় লাই।কিন্তু এই লোকটার কোনো বদমতলব দেখি লাই।মুকুন্দ বাবু আমায় স্নেহ করেন। বিয়াও কইরতে চান।কিন্তু না আমায় লিজেরে লিয়ে ভাবলে চলবেনি আমার বাবুর একটা মান ইজ্জত আছে।
-লতা খেয়েছ তুমি? কত দিন না বলেছি তোমাদের তোমরা পেট খালি রাখবেনা।এতে অসুখ করতে পারে।
-হা বাবু শুকনো মুড়ি চিবালাম।
মুকুন্দ বাবুর লগে দাইড়ে বেশি কথা কওয়া যাবেনি।গেরামের লোক গুলান মহা শয়তান।একবার দেখে নিলে এরা বাবুর কানে লাগাই দিবে।ছেলেটার আমার পড়া শোনায় বড় মন।তাই লোকে তাকে হিংসা করে।এই বার কেলাসে সেকেন্ড হইছে।
-ও লতা। মুকুন্দ বাবুর মন পইরছে তোর দিকে?
-চুপ কর অমন খারাপ কথা মুখে আনিসনে।এরা সব ভগবান মানুষ।গেরামের উন্নতির কাজে এয়েছে।এদের অপবাদ দিসনে।এইসব ছিষ্টিছাড়া কথা শোনাও পাপ।
জানিস লতা দিদি মেলা বইসছে।বাবুটা জিলিপি খেতে বড় ভালোবাসে।দুটা জিলাপি লিয়ে যাই৷ ছেলেটা তো মুখ ফুটে বলেনা কিছু৷
-মা ওই লোকটা কেড়া?
-কোন লোকটা? এই নে বাবু তোর লগে জিলাপি আইনছি।
-ওই লোকটা ওই দিন আমাদের বাড়ি আইল।তোমার সাথে কথা কইল।
-সে তো মুকুন্দ বাবু। ভগবান লোক।গেরামের উন্নতিতে কত কাজ করে।এরাই আমাদের সেলাই শেখায় হাতের কাজ শেখায়। সরকারের লোক৷
-তা সে আমাদের বাড়ি আসে ক্যান?
-আমি কাজে যাই নাই।তাই খোজ লিতে এয়েছিল।
-গোপালের মা আরো সবাই আমায় তোমাকে আর ওরে লিয়ে কত্ত কথা কইল যে।
-কি কইল?
-কইল ওই লোকটারে তুমি বিয়া কইরবে।
-কি! লোকের কথায় তুর কি?
মুকুন্দ বাবুর কথাটা বাবুর কানে এমন বিষ করে তুইলছে।হায় রে এখন আমি কি করি বাবু ও শেষকালে আমায় অবিশ্বাস কইরবে।বাবুর বয়স কম এখন যদি আমার উপর রাগ করি খারাপ সংগে পড়ে।না মুকুন্দ বাবুর কাজ ছাড়ি দিতে হইবে।কাজ ছাড়ি দিলে এ পোড়া গায়ে কাজ পাওয়াও মুস্কিল।তালে দুটো পেট চইলবে ক্যামনে?আর বাবুর লেখাপড়া?(ক্রমশ)
সুবর্ণলতা-দ্বিতীয় পর্ব
Facebook Comments Box