দিন খারাপ যায় সবাই বলে, কিন্তু রাত যে তার থেকেও খারাপ যায়- এটা কেউ বলে না কেন?
ঘন্টাখানেক টিভির সামনে বসে থাকার পর কি খেয়াল হলো, নিজের ঘরে এসে ফ্যানটা ফুলস্পীডে চালিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলাম। আসলে এটাই আমার সবচেয়ে বড় গুণ, অক্লান্তভাবে ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে ল্যাদ
খেয়ে যেতে পারি। হঠাৎ খেয়াল হলো, ফেসবুকটা খোলা হয়নি সারাদিন। মোবাইলটা পাশেই কোথাও একটা ছিল…প্যাটার্ন খুলতেই দেখি দুটো মিসকল। প্রথমে ভাবলাম অনু হবে। তারপর দেখলাম দুটোই কাস্টোমার
কেয়ার। মনকে বোঝালাম এমনটা হয়, বাংলাদেশী ক্রিকেট সাপোর্টার-রাও এক্সপেক্ট করে যে তারা একদিন ওয়ার্ল্ড কাপ পাবে।কয়েকদিন আগেও ফেসবুকের প্রতি অ্যাডিকশন ছিল প্রচুর, কিন্তু আজকাল আর খুলতে ইচ্ছে হয় না। সম্পর্কে থাকাকালীন অনুর সাথে যতবারই ঝগড়া হয়েছে ততবারই ফেসবুক খুলে দেখেছি রাজ্যের ন্যাকা ন্যাকা
পেজগুলোর পোষ্টে আমাকে টেগিয়ে রেখেছে, কোনো কোনোটা আবার ফেক স্মাইলি ক্যাপশন জুড়ে শেয়ারও করেছে। প্রথম প্রথম কমেন্টবক্সে গিয়ে ঝগড়া করতাম, নিজের মতবাদ প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করতাম কিন্তু আমার প্রত্যেক কমেন্টে ওই মেঘ এসে ‘হা হা’ রিয়্যাকশন দিয়ে ভরিয়ে দিত।
আমিও সুযোগ ছাড়তাম না, অনুর প্রোফাইল ঘেঁটে ঘেঁটে মেঘের কমেন্ট খুঁজে বের করে ‘হা হা’ রিয়্যাকশন দিয়ে চলে আসতাম। হয়তো এখান থেকেই আমাদের একে অপরের প্রতি ইন্ডিয়া-পাকিস্তান সম্পর্কের সূচনা।
আসলে ‘আমিই কেন প্রথমে কথা বলবো’ মানসিকতাই আমাদেরকে বন্ধু হতে দেয়নি কোনোদিন।
তবে দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব পাতাতেই অনু একবার একটা গ্রুপ বানিয়েছিল ঠিকই, কিন্তু মেঘ সেখানে- ‘থ্রি সাম করবি?’ লিখেই গ্রপ লেফট করে গেছিল। অনু ব্যাপারটাকে ক্যাজুয়ালি নিলেও আমি নিতে পারিনি, রাগে ফেটে পড়ছিলাম; যদিও অনুকে বুঝতে দিইনি।
অনু তারপর বেশ হেসে হেসেই বলেছিল যে মেঘ নাকি এরকমই ছেলেমানুষ; মুড অফ থাকলে এরকমই রিয়্যাক্ট করে, ফ্লিপকার্ট থেকে কি একটা প্রোডাক্ট ডিফেক্টিভ এসেছে তাই নাকি…
আমি যেন ওর কথায় সেরকম কিছু মনে না করি।
ইচ্ছে হচ্ছিল মেঘকে ইনবক্স করে বলি, তোর মুড খারাপ জেনে আমার ছেঁড়া যায়। কিন্তু মেঘের চাইতেও অনু ছিল আমার কাছে বেশি ইম্পরট্যান্ট। আর শুধু আমি কেন, পৃথিবীর কোনো প্রেমিকই জেনে বুঝে তার প্রেমিকাকে কষ্ট দিতে চায় না। উত্তরে আমি শুধু বলেছিলাম, আমি ওর সাথে আর কোনোদিন কোনো কথা বলতে চাই না।
অনু হয়তো বুঝতে পেরেছিল যে আমার খারাপ লেগেছে,
তাই পরদিন দেখা করে আমাকে স্মুচ করে বলেছিল- ‘মেঘ সত্যিই ছেলেমানুষ রে, তোর মতো অতটা ভেবেচিন্তে কথা বলে না। ওর কথা ছাড়, যে যার নিজের জায়গায় ঠিক থাকলেই হল।’
হাসিমুখে সেদিন ব্যাপারটাকে সামলে নিলেও মেঘকে নিয়ে কোথাও যেন একটা সন্দেহ দানা বাঁধা শুরু হয়ে গিয়েছিল আমার মনে।
তারপর থেকেই না চাইলেও মাথায় আজব আজব সব প্রশ্ন ঘোরাফেরা করা শুরু হয়েছিল, যেমন- অনু মেঘকেই কেন সাপোর্ট করে বারবার? মেঘের প্রতি কি অনুর অন্যরকম কোনো উইকনেস আছে? ওদের বেস্টফ্রেন্ডশিপ-টায় কোনোরকম সেক্সুয়াল ইন্ডিকেশন নেই তো? ওরা কোনোদিন কি আমায় লুকিয়ে চুমু খেয়েছে একে অপরকে? প্রশ্নগুলো নিজে থেকেই মাথায় আসতো, চাইলেও সেই প্রশ্নের পাহাড় থেকে নেমে আসতে পারতাম না। তারপর থেকেই খেয়াল করতাম- মেঘ নামটা শুনলেই আমার মধ্যে কেমন যেন একটা রিয়্যাকশন হয়। অনুকে ফোনে বিজি পেলেই মনে হতো ওরা প্রেম করছে। ঘুমে চোখ বন্ধ হয়ে আসতো, তবুও জেগে থাকতাম অনু না ঘুমিয়ে পড়া অবধি। আর মাঝে মাঝে অনুর কাছ থেকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে জানতে চাইতাম- ওর হোয়াটসঅ্যাপে
লাস্ট সিন শো করে না কেন, মেঘ ওকে ইনবক্সে কিস ইমোজি দেয় কিনা…এরকম আরও অনেক অবাক করার মতো প্রশ্ন। ওরা দেখা করে কী কী গল্প করে, কী করে সময় কাটায়, যেগুলো আগে অনু বলতে চাইলেও
শুনতে ইচ্ছে হতো না, সন্দেহের বসে সেগুলোই খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে জিজ্ঞেস করা শুরু করেছিলাম অনুকে। ঝগড়া বাঁধতো সেসব নিয়েই। ভালো করেই বুঝতে পারছিলাম অনু আর আমার মাঝে কেউ আসুক চাই না আসুক,
কিছু একটা এসেছে।
ফেসবুকটা খুলেই নোটিফিকেশন গুলো একঝলক দেখে নিলাম, দেখলাম অনুর একটা বান্ধবী আমায় কোন একটা কমেন্টে মেনশন করেছে কিছুক্ষণ আগে, নোটিফিকেশনটা চেক করেই চোখ ছানাবড়া হয়ে গেল। চোখের
সামনে যা ভেসে উঠলো- তা… তার মানে অনু আমাকে সত্যি কথাই বলেছে! এতক্ষণ ধরে যা শুধুই মনে হচ্ছিল, এখন তা বিশ্বাস করতে বাধ্য হচ্ছি। স্ক্রিনটা ঝাপসা হয়ে গেল নিমেষে। শরীরটা কাঁপছে। চোখ বন্ধ, তবুও
পোস্টটা যেন স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি- ‘অনুরিমা মিত্র ইস ইন আ রিলেশনশিপ’। তারপর…