‘break up’ শব্দটার মানে বিভিন্ন জনের কাছে কাছে বিভিন্ন ভাবে উপস্থিত হয় । কারো কাছে রাগ,কারোর কাছে অভিমান,কেউ কেউ খুঁজে পায় বিশ্বাসঘাতকতার গন্ধ,কারোর কাছে গুমরে মরতে থাকা এক মুঠো depression । না আমি কোনো জ্ঞান দেবো না কারণ আমি জানি যার হয় সেই বোঝে । তখন জ্ঞান-ট্যান সব বোগাস লাগে । তো আমিও চলে গেলাম সেই depression এর জগতে যেখান থেকে হাজার হাজার প্রেমিকের মধ্য থেকে কবিসত্তা এর জন্ম হয় । তো আমার একজন বন্ধু বললো একটা motivational ভিডিও দেখতে তো আমিও ইউটিউবে গিয়ে চ্যানেলটা খুললাম, TEDx,ওখানে যা বোঝালো তার সারমর্ম হলো যে বেশির ভাগ উচ্চমানের ভাবনাযুক্ত শিল্পকলা break up এর পরই নাকি মাথা থেকে বেরোয় । আর একটা কথাও বলা হয়েছিল,যেটা আমার শুনতে ভালো লেগেছিল যে সব সিনেমায় দেখায় happy ending কিন্তু তারপরে কি?তারপরে কি নায়ক নায়িকা সারাজীবন একসাথে থাকে?আসলে এইসব গল্প বানানো হয় আমাদের সান্তনা দেওয়ার জন্য ।
তো সে যাই হোক,আমার যখন ব্রেক আপ হলো ভাবলাম হয়তো আমি মেয়েটার মনে কষ্ট দিয়েছে বলে এরকম হলো কিন্তু পরেরদিন দেখলাম,ওরে বাবা মেয়েটা অন্য একটা ছেলের সাথে হাত ধরাধরি করে ঘুরে বেড়াচ্ছে । মানে ঠিক আছে তোর অন্য কাউকে ভালো লাগতেই পারে তা বলে ব্রেক আপের পরের দিন ছেলে পেয়ে গিয়ে তার সাথে রিলেশনসিপেও চলে গেল । পুরো লটারির টিকিট । হ্যাঁ এবার যেহেতু মেয়েটা ব্রেক আপ দিয়ে নতুন রিলেশনসিপে এসেছে তার মানে ছেলেটারই শুধু দোষ ছিল,উফফ্ অবাক হবেন না এটাই তথাকথিত সমাজ ভাববে । যেমন আমার ক্ষেত্রে লোকজন বলে বেড়াচ্ছিল যে,আমি নাকি খুব চুপচাপ,আমি ওকে girl friend হিসেবে ভাবিনি,আমাদের দেখে মনে হয়নি আমরা রিলেশনে আছি তাই নাকি ও depression এ চলে গিয়েছিল তাই ও নতুন রিলেশনসিপে । প্রথম কথা এইসব কথা যারা বলে তারা বোধহয় ২৪ ঘণ্টা আমাদের নজরে রাখতো তাই দুর থেকে দেখে বললো যে আমাদের দেখে মনে হয় না ব্লা ব্লা— । আরব্যাপারটা একটা মেয়ের ক্ষেত্রেও একি হয় ।
তো এখন সেইসব ব্যর্থ প্রেমিক বা প্রেমিকার দল এখন করে কি,কিছুজন ভাবে নেশা করে ভুলে থাকবো,কিছুজন অরিজিৎ সিং এর sad song এ ডুবে,কিছুজন একটু পাগল টাইপ হয়ে যায়,কিছুজনের মনে হঠাৎ পুরোনো কথা মনে পড়ে যায় তখন নিজের মনে হাসে,আবার কিছুজন সত্যি কারণ টা না জানতে পেরে— । আর হ্যাঁ আজকাল প্রেমে ধাক্কা খেয়ে সুইসাইড করছে মানে সিরিয়াসলি যে দেশে লোকে আগে স্বাধীণতার জন্য ফাঁসি নিতো সেখানে এখন প্রেমে আঘাতের জন্য ফাঁসি নিচ্ছে ।
তোমারা লক্ষ্য করেছো কিনা জানি না দেখবে ব্রেক আপের পরের দিন নিজেকে কেমন একটা লাগে মনে হয়, মাথাটা কেমন যেন গুবলেট পাকিয়ে গেছে,বুকটা কেমন কেমন করছে,হঠাৎ হঠাৎ কারণ ছাড়া হাসি পাচ্ছে । সবচেয়ে বড়ো কথা কিছু মানুষ থাকবে যারা এর কথা তাকে গিয়ে বলবে ওর কথা আমাকে এসে বলবে,এদের থেকে সাবধান আর একপ্রকার মানুষজন থাকে যারা দুর থেকে দেখে একে অপরের কানে ফিসফিস করবে । এদের পাত্তা দেবেন না কারণ এরা বিনা পয়সায় সার্কাস দেখার জন্য এইসব করে ।
এতকিছু দেখার পর একদিন ঠিক করলেন এবার আমায়ও একটা নতুন কাউকে খুজতে হবে । আমাকেও ছবি তুলে ফেবুতে পোস্ট করতে হবে । তো ফেসবুক ঘেঁটে ঘেঁটে মেয়ে দেখা শুরু,তাতেও না হলে লাভগুরু টাইপ ফ্রেন্ডটির কানের কাছে বলতে থাকতে হবে,“ভাই একটা মেয়ে/ছেলে খুঁজে দে না —”। তো এইসব মনের দুঃখে এখন আবার লোকজনেরা whatsapp স্টোরি দেয় কি “how much i love you”টাইপ ,তারপর নিজের profile picture উড়িয়ে দেওয়া । দুঃখী দুঃখী ভাব এগুলো নাকি modern genration এর উপর break up এর after effect এর ফল । তো এইভাবে চলতে থাকে কিন্তু ভাগ্য এতটাও ভালো থাকে না যে ……বুঝতেই তো পারছেন । তারপর লুকিয়ে লুকিয়ে ওর profile picture দেখা বা whatsapp স্টোরি দেখা টাও চলতে থাকে । আর শালা এমন ভাগ্য এইসময় ফেসবুক করলেই সব দুঃখের পোস্ট টাইমলাইনে আসবেই মাঝে মাঝে মনে হয় ফেসবুকটাই আসল girl friend,আমায় কত ভালো বোঝে,আমার অবস্থা বোঝে । আরে ব্রেক আপের দিন আমি একবার টয়লেটে গেলাম,এমনিতে মন মেজাজ খারাপ তারপর কোথ থেকে কানের ধারে বেজে উঠলো “গোবিন্দ বোলো হরি গোপালা বোলো—”
যাই আমি বলবো একলা জীবনটাকেও ভালোবাসুন যতটা আগে বাসতেন । যে পার্কের বেঞ্চে আগে প্রেম করতে যেতেন আবার সেখানেই যান, বিকালের রোদ্দুর গায়ে মাখুন কিংবা ভোরে শিশির পড়লে খালি পায়ে ঘাসের উপর হাঁটুন,আবার এলোমেলো জীবনটাকে নিয়ে বাঁচুন,আবার ট্রেনে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়ার সময় ছোট বাচ্চাটাকে দেখে হাসুন—
কারণ,বলা যায় না ভবিষ্যতে যদি আবার আপনাকে প্রেম যাপটে ধরে—