|| অদৃশ্য টান ||
সম্পর্কদের তো অনেক নাম থাকে, কিন্তু কিছু কিছু নামহীন সম্পর্করাও থাকে, যা মনের খুব কাছাকাছি থাকে, আর নিজের না হয়েও নিজের থাকে। অথবা কিছু কিছু মানুষ, যাদের তুমি মনে করবে খুব কাছের মানুষ হবে কোনো একদিন এরা আমার, তুমি তাদের ব্যাপারে সব জানবে।
এই ধরো, তারা কেমন মানুষ, অথবা তাদের পছন্দের লিস্টে কি কি আছে, অথবা অপছন্দের লিস্টই বা কি…
সব তোমার জানতে ইচ্ছে হবে, এমনকি জানবেও।
তবে তোমার ব্যাপারে, তারা কিন্তু ঘুণাক্ষরেও কিন্তু জানতে পারবে না।
যেমন, আমার খুব কাছের বন্ধু সুতপা, ও রনি নামের একটা ছেলেকে খুব ভালোবাসত, না দেখেই, ওই আজকাল যেমন হয় না, ফেসবুক প্রেম, ঠিক তেমনই।
রনির বাড়ি সোদপুর, আর চাকরিসূত্রে তখন ব্যাঙ্গালোরে থাকত, আর সুতপা কলকাতাতেই, তাই ওদের প্রেমের আগে দেখাটাও আর হয়ে ওঠেনি…
কিন্তু, সুতপা যখন যখনই আমায় রনির বাড়ির গল্প করত, তখন তখনই আমি ওর মুখে আলাদা এক খুশী লক্ষ্য করতাম, কেমন সুখী সুখী মুখে ও সবটা এক নিমেষে বলে যেত। এই যেমন রনির বাড়িতে কজন থাকত তার কথা, ওদের যৌথ পরিবারের কথা, অনেকজন খুড়তুতো, পিসতুতো ভাই-বোনেদের কথা, ওদের বাড়িতে হওয়া দুর্গা পুজোর কথা, এমনকি রনির বাড়ির পেট ‘ডলার’ অবধি সুতপার খুব কাছের ছিল, সব শুনে মনে হত, রনির বাড়ির মানুষজনকে সুতপা জানো কত কাছ থেকে চেনে, কতদিন ধরে…
সুতপার সাথে রনির প্রথম দেখা হয়েছিল, দুর্গা পুজোতেই। রনি আর সুতপা দুজনেই দেখা করার জন্যে খুব উৎসাহী ছিল, তবে সুতপা ছিল রনির থেকেও বেশী উৎসাহী, তার কারণটা শুধুমাত্র রনি নয়, তার কারণটা ছিল ওর বাড়ির লোকও, ও ভেবেছিল যাদের এত গল্প শোনে, যাদের সম্বন্ধে ফেসবুক স্টক করে করে এত্ত তথ্য সংগ্রহ করে রোজ, তাদের অবশেষে ও দেখতে পাবে, আর রনিও প্রায় রোজ বলত ওকে দুর্গাপুজোয় ওর বাড়ি নিয়ে গিয়ে সবার সাথে আলাপ করিয়ে দেবে, এইসব কারণেই।
তবে, প্রথম দেখার করার জায়গা ঠিক করার সময় রনি বারবারই কোনো না কোনো রিসর্টে যাওয়ার কথা বলছিল, একবারও সুতপার মতামত জানার প্রয়োজন বোধ করছিল না। সুতপা প্রশ্ন করেছিল কেন ওকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাইছে না, ওকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছিল যে, কোনো মেয়েকে নিয়ে গেলে বাকি ভাই বোনেরা হাসি-ঠাট্টা করবে তাই।
তারপর সুতপাকে খানিকটা জোর করেই রাজী করিয়েছিল।
শুধু সেদিন সুতপাকে বাড়ি ঢোকার পর কাঁদতে দেখেছিলাম, যদিও মেয়েটা সেটাও লুকিয়ে যেতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি।
তার পরের দিন সকালে সুতপা যথারীতি ওর বাড়ির লোকজনকে স্টক করতে করতে দেখতে পেল, রনির এক দিদি রনিকে দুর্গাপুজোর সব ছবির মধ্যে একটা ছবিতে ট্যাগ করেছে “আমার ভাই আর ভাইয়ের হবু বৌ” লিখে, যেখানে রনির পাশে দাঁড়িয়েছিল একটা মেয়ে, বয়স ওই আমাদের মতই ছিল, তারপর বাকিটা জলের মত স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিল সুতপার কাছে, ওকে বাড়িতে না নিয়ে গিয়ে পুরো সন্ধ্যাটা রিসোর্টে কাটাবার কারণ বা ওকে না নিয়ে যাওয়ার কারণ, সবটাই।
আসলে সুতপার ভুল ছিল, ও স্বপ্ন দেখেছিল। রনির সাথে সাথে বাকি মানুষ গুলোকে নিয়েও একসাথে থাকার।
তবে, যে মেয়েটা এত ভাবতো মানুষগুলোকে নিয়ে, সেই মানুষগুলো তো মেয়েটাকে কোনোদিন চিনতোই না।
সুতপা কিন্তু আজও ওর বাড়ির লোকজনকে স্টক করে, শুধু রনির ছবি চোখে পড়লেই, চোখ সরিয়ে নেয়…