নীল টিক
পর্ব- ১
আমার এখন বয়স পঁচিশ, কলেজের চৌহদ্দি পেরিয়ে খোলা আকাশের নীচে দাঁড়িয়ে আছি৷ হাতে হাত রেখে আশ্বাস দেওয়ার মতন মানু়ষটিকে এখনও খুঁজে পাইনি, কাঁধে হাত রাখা বন্ধুগুলোও সব হারিয়ে গেছে স্বার্থপরতার নেশায়৷ সঙ্গী বলতে গেলে শুধুমাত্র হোয়াটসঅ্যাপ। টিউশন পড়িয়ে ফেরার পর প্রতিদিন রাতে বাবার বকবকানিও জোটে কপালে। এই বয়সে চাকরি জোটাতে না পারলে যা হয় আর কি! তার উপর সংসারে অভাব, সব মিলিয়ে জীবন একেবারে অসহনীয় হয়ে উঠেছে৷ সময়ের এই করাল গ্রাস মাথা পেতে নিয়ে অক্লান্ত পথিকের মতো চলছিলাম এক অজানা লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে এত বছর ধরে, কিন্তু এভাবে আর কতদিন চলা যায়? জীবনের প্রতি একটা বিতৃষ্ণা চলে এসেছে৷
আজ সকালে বাবার সাথে তুমুল ঝামেলা হল; বুঝতে পারলাম এই অক্লান্ত পথিকের এবার থামার সময় হয়েছে৷ আর নয়, আর সইতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিল সবাই যেন আমার বুকের ভেতরের পোড়া দগদগে ঘায়ে নুনের বস্তা উপুড় করে দিয়েছে৷
রাতে বাড়ি ফেরার সময় ওষুধের দোকান থেকে এক শিশি ঘুমের ওষুধ নিয়ে ফিরলাম, কাউকে বুঝতে দিইনি৷ তাড়াতাড়ি রাতের খাওয়া সেরে ঘরে ঢুকে পড়লাম৷ অন্ধকারে খাটে একা বসে আছি। ঘরের ওই অন্ধকার যেন আমার জীবনের কিছু অন্ধকার সময় মনে করিয়ে দিচ্ছে, আর আমার চুপচাপ বসে থাকাটা জীবনযুদ্ধে পরাজিত সৈনিকের স্বরূপকে ব্যক্ত করছে।
অন্ধকারে হঠাৎ কে যেন বলে উঠল ”কিরে কালকে চাকরির ইন্টারভিউয়ে যাবিনা?”
তৎক্ষণাৎ নিজের মনে মনে বললাম, আর এই পৃথিবীর মায়ায় মোহিত হবোনা, আজই শেষ রাত৷
কাল আমার জন্মদিন, যেদিন এসেছিলাম সেদিনই ফিরে যাবো। জীবন থেকে মুক্ত হবো। মুক্তি পাব সমস্ত জ্বালা-যন্ত্রণা থেকে, সেটাই হয়তো আমার জন্মদিনের সবচেয়ে বড় উপহার হবে।
হঠাৎই মোবাইলের স্ক্রিনে আলোটা জ্বলে উঠল, অন্ধকারে আলোকিত হল মুখটা৷ “হোয়াটসঅ্যাপে মনে হয় মেসেজ ঢুকলো”, মনে মনে বলে উঠলাম৷ ঘড়িতে ঢং ঢং করে রাত বারোটার ঘন্টা বাজছে৷ এক কোন অজানা নেশায় ভ্রমিত হয়ে মোবাইলটা তুলে হোয়াটসঅ্যাপটা খুলে দেখলাম একটা আননোন নাম্বারের একটা মেসেজ। লেখা আছে ”শুভ জন্মদিন”, পাশে দুটো স্মাইলি৷ সিন করে রিপ্লাই দেবোনা ভেবে মোবাইলটা রাখতে যাবো হঠাৎ ওই নাম্বার থেকে আরও একটা মেসেজ ঢুকলো, ”কিরে থ্যাঙ্ক ইউ বললি না?” মেসেজটা যেন আমাকে আকর্ষিত করলো। তৎক্ষণাৎ মেসেজ করলাম ”কে আপনি?” আমার মেসেজটা সাথেসাথেই একট টিক, দুটো টিক হয়ে নীল টিকে পরিণত হল৷
উত্তর এলো,…..
(চলবে)