একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে পড়ে থাকা শেষ সিগারেটটা ধরালো পার্বত্য। সিলিং ফ্যানটা বনবন করে ঘুরছে আর যেন উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে সব এলোমেলো চিন্তাগুলোকে। হঠাৎই কিছুটা ছাই এসে পড়লো হালকা খয়েরি কাচে। পার্বত্য চশমাটা খুলে রেখে দিল পাশের টেবিলে। এই এক অদ্ভুত অভ্যেস পার্বত্যর, অন্ধকার ঘরে ডার্ক গ্লাস পরে শুয়ে শুয়ে কিসব ভাবে মাঝে মাঝেই। তাই ঘনিষ্ট বন্ধুরা ওকে ‘অন্ধ কাশ্মীর’ বলে ডাকে। শেষ বড় টানটা দিয়েই সিগারেটটা ছুঁড়ে দিলো খাটের নিচের অতল খাঁদে।
বেলা একটা বাজে। চোখটা লেগে গেছিলো আবার! তীব্র ভাইব্রেশনে বালিশটা কেঁপে উঠতেই ধড়ফড়িয়ে ফোনটা রিসিভ করলো ও। টানা দুদিন কথা হয়না মৃত্তিকার সাথে। 600 মাইল দূর থেকে বেশ উঁচু গলাতেই কথা বলছিল মৃত্তিকা। অনেক অনেক অভিযোগ, চাওয়া, না পাওয়া কিছুই যেন পার্বত্যর মুখের পরিভাষায় কোনোরকম বদল আনতে পারলো না। কিছুটা দমে গিয়েই মৃত্তিকা তার শেষ অস্ত্র মন্ত্রপূতঃ মিথ্যের তির চালনা করলো। কাঁদো কাঁদো গলায় বললো, “তুই সেদিন তনিমার সাথে সিনেমা দেখতে গেছিলি না? ভাবিস আমি কিছু বুঝিনা! থাক তুই ওই ন্যাকাষষ্ঠীর সাথে। আমি রাখলাম। আর কোনোদিন কথা বলবিনা আমার সাথে। বাই।”
এই কয়েকটা লাইনই পার্বত্যর রক্ত সঞ্চালন 20 থেকে 100 kmph দ্রুত করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট ছিল। এক সপ্তাহ ধরে না খেতে পাওয়া চিতার মতোই ক্ষিপ্রতার সঙ্গে পার্বত্য হুঙ্কার দিল, ” লজ্জা করে না মিথ্যে বলতে!” গলার আওয়াজ 90 ডেসিবেলের মাত্রা ছাড়িয়ে আবারো হুঙ্কার ছাড়লো সে। “মিথ্যে বলে কি প্রমান করতে চাস তুই! এসব নোংরা কথা বলতে বাঁধে না? প্রমান দিতে পারবি তুই? যত্তসব; আর যদি করেই থাকি বেশ করেছি। তুই আর কথা বলিসনা আমার সাথে। যা যা।”
ফোনের ওপার থেকে খিলখিলিয়ে হেসে উঠল মৃত্তিকা। দুদিন পরে পার্বত্যর গলা শুনতে পেল সে। বলল, “আমি তো মজা করছিলাম সোনা। আমি তো জানি তুমি কারো সাথে সিনেমায় যেতে পারোই না আমায় ছাড়া… ভালবাসি…চুমু চুমু চুমু।”
ওপার থেকে ভেসে আসা চকাস চকাস শব্দের মাঝে পার্বত্য শুধু ভাবছিল, কাকতালীয় বলে একটা শব্দ হয় জানতো সে, তবে এরকম একটা কাকতালীয় ব্যাপার তার জীবনে ঘটবে সে আশা করেনি। মৃত্তিকা তার সাথে এরকম ইয়ার্কি আগে করেছে ঠিকই তবে এবার যে সত্যিটাকেই মিথ্যে বললো। মানে গেলো মঙ্গলবার সে সত্যি তনিমার সাথে সিনেমা দেখতে গেছিলো, আর… আর সেটাই কিনা মৃত্তিকা বানিয়ে বানিয়ে তাকে বললো।…
যাই হোক “চুমু…”।
Feature Image Courtesy: http://laoblogger.com/