“আমার ভিনদেশী তারা..” (প্রেমিকার চিঠি)

আমার ভিনদেশী,

বহুদিন যাবৎ তুমি এমন নিশ্চুপ কেন? “নব প্রেম জালে” কি আমি বর্তমানে পুরাতনী? এখন আর কথাদের প্রলাপ পছন্দ হয়না বুঝি? দেখো, প্রেমের মরশুম কড়া নাড়ছে দরজায়, বসন্ত এসে হাত নেড়ে কেমন ডাক দিচ্ছে…

তবে আমাদের যে প্রেমের মরশুম বর্ষা। আষাঢ়ের এক প্রবল বৃষ্টিস্নাত দিনে “তুমি” নামক বনের পাখিটা ধরা দিয়েছিলে আমার প্রেম পিঞ্জরে। মনে পড়ে সেই শুরুর দিনগুলো?

মনে পড়ে সেই প্রথম দিনটা? বাইরে অঝোরধারায় ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আর মুখপুস্তিকার উভয় পাশে আমরা দুজন। আমি নেহাত ঝড়-বাদলায় আটকে পড়ে সময় কাটাচ্ছিলাম ফেসবুকে। সেদিনের তুমি ছিলে লাজুক, আর আমি দুঃসাহসী! বন্ধুত্বের হাতছানিটাও কিন্তু আমিই দিয়েছিলাম, ভোলোনি নিশ্চয়!

প্রথম বার্তালাপ, একে অপরের পরিচিতি পাওয়া… সেই ছোট্টবেলার দেখা হওয়াটা তুমি ভুলেছিলে, তবে আমার কিন্তু মনে ছিল তোমায়, সবটা। সেই ছোট্ট “তুমি”টাকে, খেলার ছলে যার হাত ধরতে চেয়েছিলাম বলে ভয়ে পালিয়েছিলে। না, সেদিনও পরিবর্তন ছিলনা কোনো, বরং ততোধিক লাজুক হয়েছিলে। আচ্ছা, সেদিন আমি নম্বরটা না চাইলে বোধহয় কোনোকিছুর শুরুই হত না, তাই না? আর সে ঘটনা না ঘটলে জানতেও পারতাম না কীভাবে ভরা বাদলার দিনেও বসন্ত এসে বাসা বাঁধে মনের গহীনে…

নিখাদ বন্ধুত্বটা কেমন হঠাৎ করেই ভালোবাসায় পরিণত হল, তাই না? তখনও আমরা দেখিনি দুজন দুজনকে, গলার আওয়াজটুকুও পৌঁছায়নি কান অবধি, তবুও কেমন ধারা প্রেম করতাম আমরা!

বড় সেকেলে ছিলাম, বলো? তখনের সেই ৩০ টাকার ৩০০ মেসেজ মনে পড়ে? আর গোটা বর্ষা জুড়ে মনখারাপি পালা? বৃষ্টির প্রতিটা ফোঁটা গায়ে মেখে আত্মস্থ করতাম কেমন একে অপরকে!

না, এক ছাতায় হাঁটা হয়তো হয়নি, কারণ তুমি যে ভিন রাজ্যের বাসিন্দা আর আমি… বৃষ্টিভেজা “আমি”র চোখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দেওয়াটাও হয়নি কোনোদিনও, কিন্তু আমাদের সেই দূরত্বযাপনের বর্ষাকেও কেমন দূরত্বহীন করে দিত বৃষ্টির প্রতি ফোঁটা, মেঘের প্রতিটা গর্জন… আজও প্রতি বর্ষায় প্রেম নামে অঝোরধারায়। তোমায় না পাওয়ার মুহূর্তরাই প্রেমে ফেলে মুহুর্মুহু, আরও একবার নতুম করে প্রেমে পড়ি তোমার। প্রথম প্রেম যে, ভোলা কি সম্ভব! দূরত্ব আসবে, দূরত্ব যাবে, কিন্তু বৃষ্টির প্রতি ফোঁটায় তুমি এভাবেই ফিরবে আমার কাছে ততদিন, যতদিন…

ইতি-
এক নেপথ্য প্রেমিকা

প্রেমিকের উত্তর…..(ক্রমশ)

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *