বুড়ো বয়সে ধেড়ে কীর্তি
“শেখবার কি আর কোনো সময় সুযোগ আছে, ইচ্ছে থাকলেই হয়!”— হ্যাঁ ইচ্ছে থাকলে উপায় হয় বটে, তবে বুড়ো বয়সে ধেড়ে কীর্তি না করলেই নয় আর কি! স্কুল, কলেজের পর পড়াশোনা করতে কার আর ভালো লাগে, তাও আবার চাকরিজীবন ছেড়ে।
আজকালকার দিনে কোনোমতে গ্রাজুয়েশনের গণ্ডিটা পেরোতে পারলেই অনেক, তবে সবাই আমার মতন ভাবলে তো হয়েই যেত।
শিক্ষা কোনো গণ্ডির মধ্যে থাকা উচিত নয়, সেটা বয়সের গণ্ডি হোক কি সমাজের। জীবনের প্রতিটা অংশকে হয়তো যুক্তি এবং ব্যাখ্যা দিয়ে বিচার করা কঠিন কিন্তু নির্দিষ্ট পথের বাইরে গিয়ে উচ্চশিক্ষার ঝুঁকি নেওয়াটা নেহাত শুধু আলাদাই নয় সঙ্গে একটা বড়ো পদক্ষেপ। শেখার হয়তো কোনো সময় নেই কিন্তু মধ্যচল্লিশে এসে দীর্ঘ বৃত্তিমূলক পেশাদারীর জীবন ছেড়ে পড়াশোনায় ফিরে আসা কোনো সহজ সিদ্ধান্ত নয়। তবে এরকম করারও কিছু কারণ আছে, যাই হোক যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা না করেই নিশ্চয় কেউ হঠকারিতার বশে সিদ্ধান্ত নেয়না।
অনেক আমেরিকানরা মনে করে যে কলেজে ফিরে যাওয়া একটি সার্বজনীন ভাল ধারণা। তারা মনে করে যে একজনের শিক্ষার উন্নতির জন্য সময় এবং অর্থ ব্যয় করা— আরও বেশি বেতনের চাকরি, ভালো সুযোগ এবং সুখী জীবনের দিকে পরিচালিত করে। ইউ.কে. ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশনের মুখপাত্র জেনি গ্লিকম্যান বলেন, “পুরনো মানুষ সবসময় স্কুলে সাময়িক সময়ের শিক্ষার জন্য চলে যায়। তবে পুরাতন ছাত্রদের মধ্যে যত বেশি লোক চাকরি হারায় বা সাময়িক সময়ের কাজ করে যায়, পূর্ণকালীন শিক্ষার ক্ষেত্রে তাদের ইচ্ছা স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।”
স্কুলে ফিরে আসার ফলে বয়স্ক শিক্ষার্থীরা তাদের বর্তমান পেশাগুলি প্রত্যাহার করে ভাল চাকরি পেতে পারে, অথবা তাদের বর্তমান কোম্পানির মধ্যে কর্পোরেট লিডারে আরোহণ করতে সহায়তা করে। কিন্তু এটি উচ্চ আয়ের জন্য প্রত্যাশা ছাড়াও ঋণের বোঝা সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঝুঁকি বহন করতে পারে।
বয়স্ক ছাত্ররা যেহেতু পেশাদারিত্বের কম বছর বাকি থাকতে আবার স্কুলে ফিরে যায়, বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে তাদের স্কুলঋণ শোধ করার জন্য তারা সাবধানে সম্ভাব্য ঝুঁকি নিয়েই এগোয়।
জর্জিয়ার আলফারতেতে অক্সিজেন ফিন্যান্সিয়ালের একজন আর্থিক পরিকল্পনাকারী ক্রিস্টিনা বিব্রোনেরিয়া বলেছেন, “আমি যে পরামর্শ দিয়েছি তা আসলে ব্যক্তির উপর নির্ভর করে, আপনি আপনার বয়স, আপনার খরচ, আপনি স্নাতকের পরে কত টাকা বেতন আশা করতে পারেন বিবেচনা করতে হবে।” অনেক মধ্যবিত্ত মানুষ উচ্চতর জীবনযাত্রার জন্য ব্যয়, শিশুদের এবং বৃহত্তর সময়ের চাহিদাগুলির ভিত্তিতে প্রথাগত কলেজ শিক্ষার্থীদের তুলনায় নিজেদেরকে অসুবিধাজনক অবস্থায় মনে করে কিন্ত তারা যদি একটি নিয়োগকর্তা খুঁজতে সক্ষম হয় যে তাদের অব্যাহত শিক্ষা প্রদানের জন্য সাহায্য করবে তাহলে সেটা একটা বড়ো সুবিধে হবে। উইস বলেছেন, “মধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের জন্য, আদর্শভাবে তুমি অন্য কারো টাকায় স্কুলে ফিরতে চাও। তুমি এই সব ঝুঁকি নিজে থেকে নিতে চাও না এবং এর প্রত্যাশা করোনা।”
লক্ষ লক্ষ মধ্যবয়সী শিক্ষার্থীরা সিদ্ধান্ত নেয় যে মধ্যচল্লিশে কলেজ যাওয়াটা একটি ঝুঁকি যা তারা গ্রহণ করতে ইচ্ছুক, এর ফলে কলেজের মুখ ধীরে ধীরে পরিবর্তিত হয়। কলম্বাসের কলম্বাস স্টেট কমিউনিটি কলেজে ৫০ বছর বয়সী ছাত্রদের সংখ্যা ২৪ শতাংশ থেকে বেড়ে প্রায় ১৫০০ পর্যন্ত হয়েছে। কলেজে একজন মুখপাত্র উইল কপ বলেছেন, “গত কয়েক বছর ধরে আমাদের মধ্যবয়সী শিক্ষার্থীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে যা এতদিনের ইতিহাসে প্রথমবারই কেউ বলতে পারবে।” তবে ধরুন আপনি মধ্যবয়সেও স্কুল বা কলেজ থেকে নতুন ডিগ্রি নিয়ে পাশ হলেন, তারপর কি? আপনি কি প্রস্তুত!
দ্বিতীয়বার আপনি একটি নতুন ভূমিকা গ্রহণের জন্য, মানুষের সাথে দেখা করার আগে আপনার কর্মজীবনের আগের ২০-২৫ বছরের সময়টা দেখুন। কৃতিত্ব, বৃদ্ধি এবং ধারাবাহিকতা নিয়ে যে গল্পটি এসেছে, আপনার ভবিষ্যত নিয়োগকারীদের চাহিদা মেটাবার জন্য আপনি এই গল্প কীভাবে ভালো করে বলতে পারেন? কোন সেক্টর, ফার্ম এবং শহর আপনাকে আরো মূল্য দেবে সেটা ভাবুন ! তাহলেই আপনার সাময়িক সময়ের ঝুঁকিটা আপনার সারাজীবনের সাফল্যে পরিণত হবে।
তবে মধ্যবয়সে স্কুল বা কলেজ ফিরে যাওয়াটা যুক্তি ও ব্যাখ্যা দিয়ে বিচার বিবেচনা করা যায় হয়তো কিন্তু শেখার জন্য আদৌ কোনো বয়স হয়না, কোনো সময় হয়না, হয় শুধু শেখবার জন্য অদম্য পিপাসা আর সেটাকে মেটাবার জন্য অব্যর্থ প্রচেষ্টা।