পুজোর তো আর ক’দিন মাত্র। ছোটো-বড়ো সক্কলের একসাথে হইহই করে মেতে ওঠার পালা। সাদা মেঘের ভেলা, কাশের বন, শিউলিফুল প্রভৃতিগুলো জানান দেয় ‘পুজো তো এসেই গেল।’ পুজো আসার এই আনন্দটা জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আগমনির সুরে মনটা মেতে ওঠে। চারপাশে একটা পুজো পুজো গন্ধ, আলোর রোশনাই… উপচে পড়া আনন্দ ঝলমলে একটা পরিবেশ।
এরমধ্যেই একটা রবিবার দেখে চট্ করে পুজোর শপিংটা সেরে ফেলা। নতুন জামাকাপড়,জুতো,ঘড়ি,ম্যাচিং জুয়েলারি বেশ একটা আনন্দে ডগ-মগ ব্যাপার। দুটোর জায়গায় চারটে জামা হয়ে গেলে মন্দ হয় না আর কি!
আবার কোথাও আনন্দের মানেটা একটু অন্যরকম। যারা পুজোয় ফুচকা,ভেলপুরি,পাপড়িচাটের স্টল্ দেয় তাদের কথা বলছি। পুজোয় তারাও একটু বেশি রোজগারের আশায় থাকে। বাড়ি ফিরে বউ-বাচ্চার মুখে একফালি হাসি দেখার আশা রাখে।
এদিকে আবার কচিকাচার দল বইখাতা শিকেয় তুলে একরাশ আনন্দে মেতে উঠেছে। টিউশন, হোমওর্য়াক সব ছেড়ে তারা গানের সুর, নাচের তাল আর নাটকের রিহার্সাল নিয়ে ব্যস্ত।
অন্যদিকে, ফুটপাতে থাকা বাচ্চাগুলোর আনন্দও কিছু কম নয় কিন্তু। আগের বছরের মতো এবারেও কিছু দাদা-দিদি এসে খাবার, জামাকাপড় দিয়ে যাবে- এই আশাতে তাদের মুখেও হাসি ফোটে। আর ছেঁড়া নয়; আস্ত একটা জামায় গা ঢাকবে তারা।
হোয়াটস্আপে ম্যাসেজের ঢল, উপচে পড়া আনন্দ, নতুন নতুন গ্রুপ খুলছে, হাজারও রকমের প্ল্যানস্। কবে কি পড়বে, কোথায় যাবে, কোথায় খাবে এই নিয়ে মস্ত ডিবেট!
হাড়ভাঙা ওভারটাইম করা বাবাও আজ খুশি। ওভারটাইমের পয়সায় ছেলেমেয়েদের নতুন জামা কিনে দেবে, তাদের মুখে একটু ভালমন্দ খাবার তুলে দেবে। এতেই তার আনন্দ।
কোথাও আবার কোনো বৃদ্ধ বাবা-মায়ের মনে আনন্দের ছোঁয়া, ছেলের ফোন পেয়ে। পুজোতে ছেলে, বউমা, নাতিনাতনি বিদেশ থেকে আসছে যে! পুজোর চারটে দিন হইহই করে, আনন্দ করে কাটবে।
এতসবের মাঝেও পুজোর প্রেমের আনন্দটা বাদ দিই কি করে! অষ্টমীতে শাড়ি-পাঞ্জাবিতে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে অঞ্জলি, আড়চোখে দেখা, মুচকি হাসি আর হালকা ঝাড়ি। জমে যাবে একবারে। কি বলেন!
পুজোয় আনন্দ করে না এমন কি কেউ আছে? পুজোর আনন্দের ভাগ ওই বেলুনওয়ালাটার, পাড়ার ওই খিটখিটে দাদুটার, ওই ছোট্ট মেয়েটার, সদ্য কলেজে ওঠা প্রেমিক-প্রেমিকার, প্রবাসী দাদার, আমার, আপনার সবার। শুধু এক এক জনের কাছে এক এক রকম।
বছর বছর একই উত্তেজনা, একই আনন্দ, একই অপেক্ষা, পাল্টালো আর কই? আসলে রোজগারের আশায় হোক বা হুল্লোড়ের আশায়, পুজো আসার আনন্দ কিন্তু সকলের।
অপেক্ষার আর কদিন, মা আসছেন একরাশ আনন্দ নিয়ে।।
“পূজা, পূজা, দশভূজা, দেবীর আগমনে!
চারিদিকে আজ, রব সাজ সাজ, অকাল এ বোধনে!”