বৈদ্যবাড়ির প্রাচীন পুজো।
আমাদের এই বঙ্গদেশের নানান জায়গায় ভিন্ন ভিন্ন পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে কোনো কোনো গুলো অত্যন্ত প্রাচীন। যা বিগত সময়ের নানান কথা জানান দেয়।
অনেক ক্ষেত্রে মন্দির গুলো ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়। প্রাচীন মন্দির গুলোতে জাঁকজমক করে পুজোর নিদর্শন আজ হাতে গোনা।
সেরকমই একটা প্রাচীন পুজোর কথা আজকে বলব। বৈদ্যবাড়ীর প্রাচীন পুজো। হাওড়া জেলার সাঁকরাইল ব্লকের অধীনস্থ নলপুর পঞ্চায়েত। এই পঞ্চায়েতের অধীনে মনোহরপুর গ্রামে এই মন্দির অবস্থিত।
এই পুজোর বয়স প্রায় আশি বছর। এই পুজো সাধারনত চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহে অনুষ্ঠিত হয়। বৈদ্যবাড়ির প্রবীণতম সদস্য মতিলাল বৈদ্যের কাছ থেকে এ পুজোর ইতিহাস জানা যায়।
রাম বৈদ্য এবং লক্ষনচন্দ্র বৈদ্য প্রায় নব্বই বছর আগে বর্তমান স্থানে এসে বসতি স্থাপন করেন। সেই সময় জায়গাটাতে জংলি গাছে ভর্তি ছিল। মানুষের বসবাসের অযোগ্য।
পরবর্তীকালে এই মন্দির প্রতিষ্ঠিত করেন তাঁরা। মতিলাল বৈদ্যের মা এই মন্দিরে নিয়মিত পুজো করতেন। উনি মারা যাবার পর ঠাকুরমশাই দিয়ে পুজো করা হয়।
বিগ্রহটি পঞ্চানন্দ ঠাকুরের মঙ্গলময় ঘট। প্রতি বছর চৈত্রের শেষে এই পুজো হয়। রীতিমতো ঢাক বাজিয়ে, ঘটা করে চারদিন ধরে পুজো চলে। মন্দিরটির বয়স প্রায় আশির উর্ধ্বে।
এখানে ‘নীলের ঘরের বাতি’ অনুষ্ঠানটি হয়। তাছাড়া বাড়ির মহিলারা গন্ডি কাটেন। এছাড়া মন্দিরের পাশে বিশাল পুকুর আছে যেখানে ‘ঝাঁপ’ অনুষ্ঠান হয়।
বর্তমান সদস্যদের মধ্যে তরনীকুমার বৈদ্য পুজার ব্যাপারে বিশেষ ভাবে উদ্যোগী। তিনি প্রতি বছর এই পুজো উপলক্ষ্যে গ্রামবাসীকে খিচুড়ি ভোগ খাওয়ান।
তাকে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, “আসলে এই উদ্যোগ পরম্পরাতে পাওয়া। আমার বাবারা করেছেন। পরে আমরা এর পর আমার মেয়েরা এর ভার নিক এই আমি চাই।”
ভগবানের উপর শ্রদ্ধা আজকাল ধীরে ধীরে বিলুপ্ত হচ্ছে। তার মাঝে বৃদ্ধ মতিলাল বৈদ্যের স্মৃতিচারণ যেন অতীতে ঘটনা তুলে ধরে। কীভাবে বারো টাকার সিমেন্টের বস্তা দিয়ে মন্দিরের চাতাল বানানো হয়েছিল তা ভাবলে বৃদ্ধ পুলকিত হন।
তরনীবাবুর সঙ্গে আলাপচারিতায় ভেসে এলো তার আক্ষেপ। “আমি চেয়েছিলাম মন্দিরটাকে মার্বেল দিয়ে বাঁধাতে। কিন্তু পারিনি। মনে আশা আছে আমার বড় মেয়ে আমার ইচ্ছে পূরণ করবে”।
প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পুজো দেখতে হলে বা উইকেন্ডের একদিনের ঘোরার জন্য এখানে আসতেই পারেন। মনে শান্তি পাবেন। আর আতিথেয়তার কমতি হবে না।