আমি অমিত। আর পাঁচটা সাধারন ছেলের মতোই। গ্র্যাজুয়েশেনের পর চাকরির আশায় মাস্টার্স করলাম।
কিন্তু বুঝতেই পারছেন চাকরির যা বাজার! আজকের দিনে শুধু মাস্টার্স করে কিছু কি হয়!
বলতে গেলে আমি এখন বেকার। রাজ্যে আরও অনেক সাধারন ছেলের মতোই ।
প্রতিদিন কাজের খোঁজে বেরোই।ইন্টারভিউ টেবিলে সবার হাসির খোরাক হই। ক্লান্ত হয়ে ফিরে আসি। এরকমই চলছিলো সব। মা বাবার আমাকে নিয়ে সমালোচনা সবই হজম করে নিতাম।
কিন্তু সীমা ছাড়ালো সেদিন, যেদিন মা আমাকে শুনিয়ে বললো “পাশের পাড়ায় বাবু রেলে চাকরি পেয়েছে। যে কিনা উচ্চ মাধ্যমিকে পঞ্চাশ শতাংশও পায়নি আর একে দ্যাখো ! বলি এত ভালো রেসাল্ট কোন কাজে লাগলো? আমার পেটেই যত অপদার্থ! শুধু গিলছে আর পয়সা নষ্ট!”
আমি চুপ থেকে গেলাম। সত্যি তো মায়ের কি দোষ ? সংসারের যা অবস্থা তাতে এই কথাগুলোই মুখে আসবে। বাবাও আর পেরে উঠছেনা।
কিন্ত আমি মা কে বোঝাতেই পারলাম না বাবুর কাস্ট রিজার্ভেশনে চাকরিটা পেয়েছে।
চোখ ফেটে জল এলো। মা কে আমি কি করে বলবো আমি যে খুব সাধারন। আজকালকার দিনে শুধু পড়াশোনা জানলেই চলে না। ছোট শহরে থাকা এক সাধারন মুদির ছেলের পক্ষে শহুরে কর্পোরেট হওয়া কি করে সম্ভব!
খুব অসহায় লাগছিলো নিজেকে! কাকে বলবো এসব? মা বাবা কেউ বুঝবে না জানি।
ফ্যান টা বন্ধ করে দিলাম। একটা মায়ের শাড়ী নিলাম। আহ্! সেই চেনা গন্ধ ।শাড়ীটা ফ্যানের দিকে ছুঁড়ে দিয়ে, চেয়ারে উঠে গলায় একটা ফাঁস। যতটা শক্ত করা যায় আর কি। চেয়ারটা ফেলে দিলাম।
খানিকক্ষণের ছটফটানি। সব শেষ।
শান্ত হয়ে গেলাম আমি। এতদিনের অপমানের একটাই উত্তর, “আর পারলাম না” ।
এখনও আমার নিথর শরীর টা ঝুলছে। আমার লড়াইটা এভাবেই শেষ হয়েছিলো।হ্যাঁ! আর পাঁচটা সাধারন বেকারের মতোই।