শনিবার। উইকেন্ডের ছুটি । তাই শনি রবি এই দুদিন সৌপ্তিক দেরি করেই ঘুম থেকে ওঠে। বাকি পাঁচটা দিন তো দশটা পাঁচটায় বাঁধা। সবকিছু থেকে দুদিন ছুটি।
ঘুম থেকে উঠে চায়ের ঠেকে এই দুদিন সকাল বিকেল জমিয়ে আড্ডা দেয় সৌপ্তিক। উইকেন্ড, ছুটি , আড্ডা তর্কে বেশ কাটে এই দুদিন।
শনিবার সকালে চায়ের ঠেকে যেতেই সৌপ্তিক দেখলো কয়েকটা লোকজন মিলে তুমুল তর্ক লেগেছে। তর্কের বিষয় বুঝতে বুঝতেই ধৈর্যের বান ভাঙলো সৌপ্তিকের। জোরে ধমক দিয়ে বললো ‘ সাট আপ’ ।
শনি রবি ছুটি বলে অনেকরকম লোকের জমায়েত হয় চায়ের ঠেকে। এরমধ্যেই একজন বয়স্ক বলে উঠলেন ‘আজকালকার ছেলেমেয়েদের যে কেমন শিক্ষা। একটা আলোচনা চলছে তার মাঝে ধমক দিয়ে দিল। আজব সব। কান্ডজ্ঞ্যান নেই কোনো।’
বুড়োর এই কথায় রাগ হলেও নিজেকে শান্ত করে সে ভদ্রভাবে তর্কের বিষয় জানতে চাইল। আড্ডার কোনো এক কোণা থেকে আওয়াজ এলো ‘জলের সমস্যা এবং সরকারের পদক্ষেপ’।
জলের সমস্যা এখন আমাদের দেশে সবচেয়ে বড় সমস্যা। আগামী ৩০ বছরের মধ্যে ভারতের ভূগর্ভ থেকে ছুটি নেবে জল! তাই এই বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপ নিয়েই চলছে তর্ক বিতর্ক।
আড্ডায় বসে থাকা জ্ঞানী গুনীজন জল মোকাবিলায় দিল্লি সরকারের বাহবা দিচ্ছেন। স্বভাবতই এ রাজ্যের সরকারকে নাক ধরে চায়ের ঠেকে সবক্ শেখাচ্ছেন তাঁরা।
সৌপ্তিক তখন রবি ঠাকুরের কথা ভাবছে। রবি ঠাকুর ঠিকই বলেছিলেন, বাঙালি ভাতঘুম আর তাসেই থাকে। তর্কের ভোল্টেজ বেড়েই যাচ্ছে। সৌপ্তিক চাইলেও তর্কের মধ্যে প্রবেশ করতে পারছে না।
এরই মাঝে সিগারেটের টান দিতে দিতে সে বলে উঠল,
‘মাগো আমায় ছুটি দিতে বল, সকাল থেকে চলছে এখানে তর্ক বিতর্ক খেলা’। অর্ধেক লোকজন ওখানেই হেসে গড়াগড়ি খেলেন।
এই সুকৌশলে তর্কে প্রবেশ করল সৌপ্তিক। প্রথমেই সে বললো, ‘ জলের সমস্যা গোটা ভারতবাসীর। সমস্যার জন্য দায়ীও আমরা। সমস্যার সমাধান তবে শুধু সরকার কেন আমাদেরও দায়িত্ব। আর সবকিছুতে সরকারের দোষ দেওয়াটা বন্ধ করুন’
সবাই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলেও মানতে বাধ্য হলো সৌপ্তিকের কথা। তর্কে নিজের মতামত প্রকাশ করে স্বস্তি পেল সে।
আড্ডা প্রায় শেষের মুখে। স্কুল ভ্যানে ফিরছে তখন স্কুলের কচিকাঁচারা। চায়ের ঠেকের ঠিক পাশের ট্যাপ টাতে অনেকক্ষণ ধরে জল পড়ছিল। সেটা বন্ধ করে দৌড়ে পালালো একটা বাচ্চা।
ছুটি দিল সে আড্ডা তর্কের সমস্ত বিষয়কে। আর ছোটো হয়েও বড়োদের অনেকটা শিখিয়ে দিল বাচ্চাটা।
চায়ের ঠেক থেকে নীচু মাথায় বেরিয়ে এল সৌপ্তিক সহ অন্যান্য লেকজন।