প্রতি ১২ বছর অন্তর পরিবর্তন করা হয় জগন্নাথ দেবের বিগ্রহ

প্রতি ১২ বছর অন্তর জগন্নাথ, সুভদ্রা, বলরাম এবং সুদর্শন এর কাঠের বিগ্রহ তৈরি করা হয়। তা এই বিগ্রহের কাঠ কি যে কোনো গাছের কাঠ দিয়ে তৈরী হয়? না, এর জন্য জগন্নাথ মন্দিরের বেশ কিছু পুরোহিত আছেন যারা কোনারক মন্দির থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে বিপদতারিনি মায়ের মন্দিরে ধ্যানে বসেন এবং মায়ের নির্দেশ মতো চার জনের বিগ্রহের কাঠ নির্দেশিত চার জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং ওই গাছের গোড়ায় বিষধর সাপ ঘিরে থাকে আর এই নিম গাছগুলিতে এক বিশেষ ধরনের চিহ্ন থাকে যা গাছ নির্বাচন করতে সাহায্য করে আর তারপর সেই গাছ কেটে মন্দিরে আনা হয়।

এই কাঠ কোনো প্রকার যন্ত্র চালিত গাড়িতে আনা হয় না। সাধারণত গরুর গাড়ি বা মানুষ টেনে নিয়ে আসেন। এই কাঠ সংগ্রহ করার ১৪ দিনের মধ্যে নতুন বিগ্রহ বানানো হয়ে থাকে। এই বিগ্রহ তৈরির সময় যে কাঠের আওয়াজ হয় তা যাতে বাইরের মানুষ শুনতে না পায় তার জন্য মন্দিরে অবিরত ঘন্টা ঢাক বাজতে থাকে এবং চারিদিক কাপড় দিয়ে ঘিরে দেওয়া হয় যাতে কেউ না দেখতে পায়।

নতুন বিগ্রহ তৈরি হবার পর নতুন এবং পুরোনো মূর্তিকে সামনা সামনি রেখে জগন্নাথ দেবের নাভি পরিবর্তন করা হয়, কারণ জগন্নাথ দেবের নাভিতে জীবন্ত শিলাগ্রাম আছে তাই মনে করা হয় যে জগন্নাথ দেব জীবিত এবং তিনিও একজন মানুষ।এই সময়ে প্রায় ৪৫দিন মন্দির বন্ধ থাকে যা নবকলেবর নামে পরিচিত। সাধারণত প্রতি বছর আষাঢ় মাসে ১৫ দিন স্নানযাত্রার পর থেকে বন্ধ থাকে জগন্নাথ দেবের জ্বর হবার জন্য।

এবার আসি জগন্নাথ দেব এবং বাকিদের বিগ্রহ কি করা হয় যখন নতুন বিগ্রহের প্রাণ প্রতিষ্ঠা হয়ে যায় তখন জগন্নাথ মন্দিরের উত্তর দ্বার দিয়ে বেরিয়ে বাম দিকে একটি ঘেরা জায়গা আছে যেখানে প্রায় ২১ ফুট গর্তের নীচে একটি কষ্ঠিপাথরের সিংহাসনে চার জনকে সমাধিস্থ করা হয় এবং এই জন্য এক বিশেষ শ্রেণির ব্রাহ্মণ আছেন যাঁরা এখানে সব কিছু দেখা শোনা করেন। এনাদের কে অগ্রদানি ব্রাহ্মণ বলা হয়ে থাকে।

– পলাশ দে

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *