দীর্ঘ দুটো বছর পর আবার প্রেম অনুরাগ-এর আবেশে,
ভাঙা আরশির মতো টুকড়ো টুকড়ো
হয়ে গেছিল আমাদের বিচ্ছেদের গন্ডিটা,
সেদিনের সরস্বতি পূজোয়।
যতোই হোক, বাঙালীর তো প্রেম নিবেদনের দিন-ই এই দিনটা।
তোমার দেওয়া প্রিয় হলুদ শাড়িটা পড়ে গেছিলাম-
কলেজের মাঠ।
মনের কোনে হয়তো অভিমান জমে ছিল হাজার….
কিন্তু শাড়িটার কি দোষ বলো?
ভালোবাসার মায়াজালে বোনা যে..
তাই শাড়ির অনুুুুরাগ মাখা মোহো টা ছাড়তে পারিনি।
দূর থেকে লক্ষ্য করেছিলে আমাকে..
তোমার দেওয়া হলুদ শাড়িটা,
হ্যাঁ,ওটা দেখেই তো আবার..
সব অভিমান ভুলে নতুন করে আমার প্রেম অনুরাগ-এ পড়েছিলে।
জানো আমি তখনো তোমাকে লক্ষ্যই করিনি।
ভাবিইনি,তুমি আসবে বলে..
বাড়িতে আমাদের প্রেম-এর কথা কেউ মানতে চাইনি দেখে যখন বললে সম্পর্ক ভেঙে দিতে,
ভীষন রাগ হয়েছিল আমার।
পরের দিন কথা বলিনি,তাই তুমি ও অভিমান করে চলে গেছিলে।
কতদিন যোগাযোগ রাখোনি,ভেবেছিলাম,
সব ভুলে হয়তো নতুন কাউকে জুটিয়ে দিব্যি আছো।
(ছবি-সংগৃহীত)
কিন্তু,সেদিন আমার সব ভ্রান্তি তুমি দূর করে দিয়েছিলে..
মাথার খোঁপাটা ফাঁকা দেখে
তুমি যখন টাটকা হলুদ ফুলটা
মাথায় গুঁজে দিয়ে বললে-
“এবার পুরো সাজটা সম্পূর্ণ হল।”
পেছন ফিরলাম,দেখলাম,একি! তুমি!
জানো, বাকরূদ্ধ হয়ে গেছিলাম ক্ষনিকের জন্য।
অবাক চোখের বিস্ময় টা ছিঁড়ে দিয়ে..
পুরোনো রাগ ও অভিমান নিমেষেই ভেঙে দিয়েছিলাম-
তোমার অনুরাগ-এর পরশে,
সবটা ভুলে গিয়ে আবার হাত ধরে ঘুরেছিলাম সেদিনটা।
দেখলাম, তুমিও ম্যাচ করে হলুদ পাঞ্জাবী টা পড়ে এসেছো।
মূহুর্তের বশবর্তী আমার জানতে ইচ্ছে করেছিল খুব..
এতদিন পর তুমি আবার ফিরে এলে?
হলুদ পাঞ্জাবী টা দেখে অবাক ও হয়েছিলাম..
আগে তো পরতে এবং দেখতে কোনোটাই পছন্দই করতে না।
তুমি বলেছিলে-
“তোমার আতরের গন্ধ,আমাকে বিভোর করে তুলেছিলো।
পরনের হলুদ শাড়িটা দেখে সব অভিমান ভেঙে গেছিল সেদিন।
আবার নতুন করে তোমার প্রেম মাখতে ইচ্ছে করছিলো।
জানো খুব কষ্টে ছিলাম এতদিন..
ভুলে থাকতে পারছিলাম না,
তোমার মতো ভালোবাসার গাঁথা মালা..
আমি যে কোথ্থাও পাইনি আর।
জানতাম তুমি পূজোয় মাঠে আসবে..
তাই তোমার জন্যই আজ পাঞ্জাবি পরে আসা।”
এই উচাটন মনে,আমার আঁধার কালো চোখে জল আটকাতে পারিনি ।
তুমি হাতটা শক্ত করে ধরেছিলে এবং ভালোবেসে দেওয়া নাম ধরে ডেকে বলেছিলে..
“রাই,আমি আর তোমাকে ছেড়ে যাবো না।”
পুরোনো রাঙতা মোড়া,জংধরা অনুরাগ-ই প্রেম..
যেন শিশির ভেজা ভোরের নতুন ফুটে ওঠা ঘাসের
মতো সজাগ হয়ে গেছিলো সেদিন।
আচ্ছা,তোমার মনে আছে..
কলেজ শেষে মাঝে মাঝে আমরা গঙ্গার ঘাটে যেতাম,
হাওয়ায় যখন চুলগুলো মুখে আঁছড়ে পড়তো,
তুমি আলতো করে সরিয়ে দিয়ে কপালে চুম্বন এঁকে দিতে।
নদীর অথৈই জলে পা চুবিয়ে এবং তোমার কাঁধে মাথা রেখে কত্তো গল্প করে সময় কাটিয়েছি,স্বর্ণবঙ্গ সূর্যাস্ত আকাশের দিকে চেয়ে।
কামিনীর পাপড়ি জড়ানো চেনা রাস্তার মোড়,চেনা ট্রাফিক কাকু….
ল্যাম্পপোস্টের নীচে ফুচকার দোকানটা ও
রাস্তার ধারে অনাদরেই বেড়ে ওঠা বুনো গাছের
কচি পাতায় ঐশর্য্য ভরা জোনাকির চিকন আলোর থেকে ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক..
সবটা আমাদের অনুরাগ আলাপের স্মৃতি হয়ে রয়ে গেছে আজ ও।
বৃষ্টির দিনে এক ছাতার নীচে যেতে যেতে..
যখন তোমার প্রিয় গানটা গাইতাম –
“আমার নিশিথ রাতের বাদল ধারা।”
তুমি গুনগুন করে আমার সুরে সুরে সুর মেলাতে।
আজ সাতটা বছর পর..
আমরা এক ছাদের নীচে।
আজ আমাদের বিয়ের প্রথম রাত।
নিয়ন আলোর প্রেম টা,জোড়ালো অনুরাগ রামধনুর সাতরঙা স্পর্শালো অবশেষে।
তোমার কোলে মাথা রেখে পুরোনো অনুরাগ-এর-সাতকাহনি স্মৃতিগুলো মনে করতে করতে আমাদের অর্ধেক রাত কি ভাবে কেটে গেল বুঝতেই পারলাম না।
জানো আজ কি ভীষন আনন্দ হচ্ছে,
আমাদের প্রেম টা আজ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
দুটো বাড়িতে মানিয়ে নিয়ে আমরা আজ ভালোবাসার যুদ্ধে জয়ী।
হ্যাঁ,প্রেমমাখা অনুরাগ কে মর্যাদার আসনে বসিয়ে,
তোমার-আমার ভালোবাসার সাতকাহন আজ জয়ী।
(ছবি-সংগৃহীত)