দুধরাজ পাখি চাক্ষুষ দেখিনি, পড়েছি একটু আধটু। কবিতা লেখা বা কবিতার খোঁজ পাওয়া খুব সহজ? এমনিতেই জীবনে ব্যর্থতা ছাড়া কিচ্ছু নেই। প্রতিটা মুহূর্ত অসহায়, নিঃস্ব দের মতো কাটাচ্ছি। সময়ের সাথে ক্ষয়ে যাচ্ছি, কেমন যেন ফুরিয়ে যাচ্ছি। তারও এখন বিরক্তি লাগছে হয়তো আমাকে। সবে তো শুরু।
কয়েক বছর পরে আরো বিরক্তি লাগবে জানি। একদিন তোমার কাছেও আমার কোনো দাম থাকবেনা, এটাই হয়। চিরটা কাল এটাই হয়ে আসছে।
কবি হবো বললেই তো আর হলোনা। ব্যতিক্রমী আশা করাটাই বোকামি। পুরুষ দুধরাজ সাদা লম্বা লেজের হয়। এর সঙ্গিনী লালচে-বাদামি হয়।
লেজ পুরুষ পাখিটির চেয়ে ছোট। প্রকৃত আর প্রাকৃতের মাঝে অনেক যোজন ফারাক। সেটা থাকবেই। তোমার প্রতি আমার কোনো অভিযোগ নেই। ভুল বুঝোনা। তুমিও মানুষ। স্বাভাবিক আচরণ করাটাই স্বাভাবিক। আমার জীবনের বিধিলিপিই হয়তো এরকম, এই ভেবেই মেনে নিয়েছি, মেনে নিই।
কাউকে দোষ দিইনি, দিইনা, দেবও না। দেওয়ার ক্ষমতা নেই আমার। দুধরাজ পাখির মতো ডিমসুদ্ধ বাসা পাহারা দিতে পারিনা।লেখার টেবিলে বসেছিলাম। এলোমেলো চিন্তাগুলোকে শব্দ দিয়ে জব্দ করতে না পারার দরুন অস্থিরতা দু’হাত তুলে নেত্য করছিল আমার দিকে চেয়ে।
এটাও পড়তে পারেন মিয়াগি: দ্য জাপানীস ওয়াইফ
দুধরাজ পাখি রাঙা পৃষ্ঠায় আলোর প্রতিফলন সত্ত্বেও সারারাত্রির ক্লান্তি চোখের পাতাজোড়া একে অপরকে টান দিলো। অসহায় লাগছিলো খুব। ঘুম নাকি আচ্ছন্ন অবস্থা জানিনা।
কবিতা কে দেখলাম তারপর, নীল আলোয়।
বললাম, তোমার বাড়ি যাবো। কিন্তু ঠিকানা?
সে বললে, কাব্যপুর নেমে পায়ে হেঁটে মিনিট কুড়ি।
বিরামচিহ্ন সরনী শেষ হলেই পদ্যপাড়া। খুঁজতে হবে মিল-অমিল পুকুর। তার গায়েই আমার অর্থাৎ কবিতার ঘর-বাড়ি।
-আচ্ছা। সেখানে আর কারা থাকে কবিতা?
-গদ্য কবিতা, শব্দ, বাক্য, মাত্রা আরও সব্বার সাথে আমি।
– খুব সুন্দর। আচ্ছা, সেখানে পেটের জ্বালা থাকে?
– না। তবে মনের অতৃপ্তি থাকে।
সৃষ্টিহাট এ বিকিকিনি হয়।
অক্ষর শুধু খবর পাঠায়। রংতুলি বেচে যুক্তাক্ষরে।
– ওওওও। সেখানে স্বাধীন থাকতে পারো। অশান্তি তো আর হয়না!
– হাসালে! পঙক্তি আর ছন্দের দিনভর কুটকাচালি,
স্তবক ঠান্ডা মেজাজী। সয়ে নেই সব মুখ বুজে।
কবি যদি বিরক্ত না করে তবে স্বাধীন কেবল ওই কল্পনা।
আমিও যাবো। নিয়ে যাবে? তুমি আমি একসাথে থাকবো।
– গাঁয়ে যেতেই পারো। আমায় দেখতে পাবেনা সবসময়।
– কেন, তাহলে কখন কিভাবে পাবো?
– যদি পাগল হয়ে খুঁজতে পারো আমায় অন্য কবিদের মতো।
যখন কল্পনাসহ আমার পাড়া-প্রতিবেশী সবাইকে খুশি করতে পারবে। আমি প্রকাশিত হবো।
চোখ খুলে দেখলাম। দুধরাজ পাখির পালকের মতো পৃষ্ঠায় লেখা এই “কবিতার ঘর-বাড়ি” ।