তাহলে কি মানুুষ না সত্যি ভূত – ভূভূভূভূতত! কিরে আর কত ঘুমাবি? সন্ধ্যে হয়ে গেল যে উঠে পর, মামনির ডাকে চমকে ওঠে সৌজন্যা, একি আমি বিছানা শুয়ে? মামনি এখানে? তাহলে ছাদের ঘটনাটা, একটু সামলে নিয়েই সৌজন্যা বুঝতে পারে ও স্বপ্ন দেখছিল। মিতা দেবী আবার প্রশ্ন করেন কিরে এত ঘেমে গেছিস কেন রে, শরীর ঠিক নেই নাকি? না না ঠিক আছি আমি উত্তর দেয় সৌজন্যা তবে স্বপ্নের কথাটা আর ও বলল না। সৌজন্যা ভাবল আর এইসব নিয়ে ও মাথা ঘামাবে না, এই মানুুুষ না ভূত নিয়ে ভাবনা চিন্তা গুলো সত্যিই হয়তো ওর ছেলেমানুষী।
দেখতে দেখতে ১০ দিন ভালোভাবেই পার হল কোথাও কোনো ঝামেলা নেই কোনো সন্দেহজনক কিছুই চোখে পড়েনি ওদের কিন্তু সব ধারণা পাল্টে দিয়ে এক নিমেষে বদলে গিয়েছিল ওদের সুখের জীবন, বিশ্বাস করতে হয়েছিল এক অবাস্তবিক বিষয়কে। ঘটনাটি ঘটল এক রাতের অন্ধকারে, প্রতিদিনের মতো সবাই খেয়ে ঘুমাতে চলে গেল। সৌজন্যার সাথে ওই ঘটনাটা ঘটার পর ও আর রাত জাগে না, সেদিনও সবাই ঘুমিয়ে পড়েছিল। হঠাৎ একটা চিৎকারে দীপ্ত সৌজন্যা দুজনের ঘুম ভেঙে গেল, দীপ্ত ফোনে দেখল ২.৩০ বাজে কে এত রাতে চিৎকার করল বলোতো মাম? সৌজন্যাও কিছু বুঝতে না পেরে বলল বাইরে বাগানের দিকে থেকে এল আওয়াজটা তাই না। বাইরে গিয়ে দেখি বলে দীপ্ত উঠতে যাবে এমন সময় দরজায় ধাক্কা পড়ল, বাবু তাড়াতাড়ি দরজাটা খোল তো, বাইরে আয় একবার। বাবাই এতরাতে! নিশ্চয়ই কোনো বিপদ হয়েছে ভেবে দীপ্ত আগে গিয়ে দরজা খুলে বাইরে গেল, সৌজন্যাও গেল ওর পিছনে। একি বাবা এত ঘেমে গেলে কি করে? কি হয়েছে বল? দীপ্ত প্রশ্ন করতেই ওর বাবা উত্তর দেয় তোর মা ঘরে নেই, বাইরে একটা চিৎকারও শুনলাম কি করব বুঝতে না পেরে তোকে ডাকলাম। সেকি মা কোথায়? মাম ঘরে নেই মানে? দীপ্ত, সৌজন্যা দুজনেই অবাক হয়ে বলে তাহলে কি মা বাইরে গেল। ওরা তিনজনেই বাইরে যেতে গিয়ে দেখল, বাইরে যাওয়ার দরজাটা খোলা আর তার সামনে বেশ কিছুটা জায়গায় রক্ত পড়ে আছে, সাথে রক্তমাখা পায়ের ছাপও রয়েছে।
চিত্র : সংগৃহীত
ওরা তিনজনেই খুব অবাক হয়ে দৌড়ে বাইরে গেল; একি! মামনি বাগানে পড়ে আছে বলে সৌজন্যা চিৎকার করে উঠলো। সবাই তাড়াতাড়ি ছুটে মিতা দেবীর কাছে গেল, গিয়ে দেখলো উনি অচৈতন্য অবস্থায় পড়ে আছেন এবং মাথা থেকে প্রচুর রক্ত বেরাচ্ছে। এরপর ওনাকে দীপ্ত কোলে তুলে ঘরে নিয়ে গেল আর ডাক্তারও ডাকল। ডাক্তার দেখে যাওয়ার কিছুদিন পর থেকে মিতা দেবী ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠলেও ভয়ে তাঁর কথা বলা প্রায় বন্ধ হয়ে গেল। বাড়ির সবাই কী ঘটল, কীভাবে কী করবে বুঝে উঠতে না পেরে আত্মীয়স্বজন ও প্রতিবেশীদের কথা মতো এটা মানুষ না অশরীরীর কাজ, বাড়িতে ভূত এসেছে এইসব শুনে অনিচ্ছা থাকা স্বত্বেও বাড়িতে এক তান্ত্রিক ডেকে আনল। এই কাজে বাড়ির কারোর মন সায় না দিলেও তান্ত্রিকের কথা মতো ওরা সমস্ত নিয়মকানুন পালন করল। তান্ত্রিক যদিও ওদের ঘটনাটা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বললো না, তবে সৌজন্যাকে বলে গেল এই বাড়ির মেয়েরা যেন রাত ১২ টার পর খোলা চুলে না থাকে।
চিত্র : সংগৃহীত
যদিও বাড়ির সবাই তান্ত্রিকের কাছ থেকে ঘটনাটি শোনার জন্য আগ্ৰহী ছিল না, কিন্তু এই সমস্ত নিয়মকানুন বাড়িতে আগের মতো শান্তি ফিরিয়ে আনায় ওরা মনে মনে বেশ খুশিই হয়েছিল।
যদি পড়ে না থাকেন – ভূত না মানুষ (প্রথম পর্ব)
এই ঘটনার পর প্রায় বেশ কিছুদিন পেরিয়ে গেলেও, সৌজন্যা ও মিতা দেবীর সঙ্গে কি ঘটেছিল তার ব্যাখ্যা ওদের কাছেও স্পষ্ট হয়নি। তবে তান্ত্রিক বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর ওদের কামিনী ফুলের গাছ টা তে আর কোনোদিন ফুল ফোটেনি। বাড়ির সবাই হয়ত মনে মনে ভেবেছিল কামিনী ফুলের গাছের সাথে এই ঘটনার কোনো সম্পর্ক আছে, তবে কেউই তা মুখে প্রকাশ করেনি। এই সবকিছুর পরেও সৌজন্যা কোথাও গিয়ে অনুভব করেছে কখনও রাত ১২ টার পরে ভুলবশত চুল খোলা রাখলেও ওর সাথে অস্বাভাবিক কিছুই ঘটেনি, আবার হয়তো বিনা কারনেই ওর মনে হয়েছে ওর পাশে কেউ ছায়ার মতো ঘুরছে কিংবা ওর নাচ শেখানোর ঘরে কেউ ওরই ঘুঙুর পড়ে ছমছম শব্দে নেচে চলেছে। আসলে কিছু ঘটনার ব্যাখ্যা হয়তো পাওয়া যায় না বলেই আমাদের একটা নির্দিষ্ট জায়গায় গিয়ে থেমে যেতে হয়; এক্ষেত্রে সৌজন্যাও সব বাদ দিয়ে শুধু অনুভবই করেছে। তাই ভূত না মানুষ আজ সেটা ব্যাখ্যা নয় অনুভবেই মিশে গেছে।