পিছুটান

পিছুটান নাকি অন্যকিছু! কিরে পাগলী কি ওদিকে কি দেখছিস আর বিড়বিড় করছিস? সৌম্যর প্রশ্নে প্রায় চমকে তাকায় মিঠি, তারপর হাল্কা হেসে উত্তর দেয় নদীর জল দেখছি রে। সৌম্য নদীর দিকে তাকিয়ে বলল কতদিন পর এখানে এলাম আমরা, এখন তো করোনার জন্য বেরোনোই বন্ধ। মিঠি বলল হ্যাঁ, তাও প্রায় তিন মাস পর আমাদের দেখা হলো বল।

চিত্র : সংগৃহীত

আচ্ছা তোর মনে আছে শেষ যেদিন আমাদের দেখা হয়েছিল তুই প্রত্যেকবারের মতো আমাকে বাড়ি পৌঁছে দিতে যেতে পারিস নি। সেদিন তোর একটা জরুরী কাজ ছিল, যদিও তখন আমরা বুঝিনি সেদিনের পর বেশ কিছুদিনের জন্য বাড়ি থেকে বেরানোই বন্ধ হয়ে যাবে। মাঝে মাঝে বেশ কষ্ট হলেও অবশ্য ভিডিও কলে আমাদের দেখা হয়েছে আর কথাও হয়েছে তবুও সেই দেখা আর সামনে থেকে দেখার মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে তাই না। বল কেমন আছিস? আচ্ছা আজকাল সেইভাবে নিজের দিকে খেয়াল রাখছিস না নাকি? কেমন যেন রুক্ষ -শুষ্ক লাগছে তোকে। সৌম্য হাসি হাসি মুখ করে বলে ওঠে, না না আমি তো ভালোই আছি রে পাগলী; এতদিন পর দেখলি তাই এমন লাগছে তোর। আচ্ছা তখন পিছুটান বলে কি বলছিলি রে এড়িয়ে গেলি আমি প্রশ্ন করতে। মিঠি বলল ছাড় বাদ দে তো ওইসব কথা; আচ্ছা হাতে এতগুলো গোলাপ এনেছিস যে দেখছি, তা গোলাপগুলো তো আমার জন্যই এনেছিস মনে হয় বলে সৌম্যর মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে থাকে মিঠি। সৌম্য ওর কথা শুনে বলে ওঠে হ্যাঁ রে বাবা হ্যাঁ তোর জন্য এনেছি; তুই তো ফুল খুব ভালোবাসিস, এখানে আসার সময় একটা দোকানে গোলাপ দেখতে পেলাম তাই তোর জন্য নিয়ে এলাম। এই নে বলে সৌম্য গোলাপ গুলো মিঠির হাতে তুলে দিল।

মিঠি গোলাপ গুলো নিয়ে হেসে প্রশ্ন করে আচ্ছা আমার মন ভোলাতে নাকি রাগ কমানোর জন্য এটা নিয়ে এলি রে? পিছুটান এখনও রয়ে গেছে তবে। উফফফ আবার শুরু করলি তো তুই, এইজন্য বলে ভালো মনে কিছু করতে নেই.. এবাবা বৃষ্টি নামল যে শীগগির ওই দোকানটাতে চল, ছাতা এনেছিস কি? দে তাহলে চটপট। হ্যাঁ, এই নে বলে মিঠি ছাতাটা হাত বাড়িয়ে সৌম্যকে দিল। তারপর দুজনেই ছাতা মাথায় দিয়ে দোকানের দিকে এগিয়ে গেল।  বাইরে অঝোরে বৃষ্টি পড়ছে ওরা দুজনেই চুপ করে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে আছে। হঠাৎ মিঠির মনে পড়ল ওদের সেই প্রথমদিন দেখা হওয়ার কথা সেদিনও তো এমনই বৃষ্টি হচ্ছিল।

চিত্র : সংগৃহীত

এই পাগলী চুপ করে কি ভাবছিস রে সৌম্যর প্রশ্নে একটু চমকে উঠে মিঠি আস্তে আস্তে বলল দেখতে দেখতে চারটে বছর আমাদের সম্পর্কের পেরিয়ে গেল বল; তুইও নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছিস অনেকদিন হল আর আমিও আমার মতো করে চালাচ্ছি নিজের জীবনটা। আচ্ছা আজ সত্যি একটা প্রশ্নের উত্তর দিবি রে সৌম্য তুই কি কিছু ভাবলি আমাদের সম্পর্কের ভবিষ্যৎ নিয়ে? দেখ এইভাবে তো আর চলতে পারে না। সৌম্য খানিকটা আনমনা ভাবেই বললো এতদিন পর দেখা করেও সেই একই কথা বলবি তুই; মিঠির ভারী রাগ হল ও বলে উঠল কি বলব আর তোকে! তোকে তো একই কথা বলে যাচ্ছি কিছুদিন ধরে যে আর আমার পক্ষে অপেক্ষা করা সম্ভব নয় এবার তোকে একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সৌম্য একটু বোঝার চেষ্টা কর তুই কী করবি কিছুতো একটা বল আমাকেও তো আমার ভবিষ্যৎ নিয়ে এবার ভাবতে হবে।

আমি এভাবে যে পিছুটান নিয়ে আর থাকতে পারছি না। চার বছর ধরে আমরা কিন্তু খেলা করিনি আমরা দুজনেই একসাথে মিলে এত কিছু বিষয় ভেবে একটা ডিসিশন নিয়েছি এখন তুই যদি পিছুপা হয়ে যাস তাহলে আমার কষ্ট হলেও আমাকে আমার মতো করে ভাবতে হবে, এই পিছুটান কাটিয়ে উঠতে হবে। সৌম্য মিঠিকে থামিয়ে বলল আমাকে আর একটু সময় দে। সময়! আর কত সময় চাস তুই? মিঠি আবার রেগে গেল। সৌম্য বলল দেখ মিঠি বিয়ে বললেই তো আর বিয়ে হয় না আমাকে একটু ভাবতে দে, আর কিসব পিছুটান না কি বলছিস আমি বুঝতে পারছি না।

মিঠি বলল হ্যাঁ সেই, শেষ ৬ মাস ধরে এই এক কথা বলছিস তুই। এমন তো না যে আমরা দুজন দুজনকে চিনি না তাহলে আর কত ভাববি তুই আর যদি নাই ভাবতে পারিস যদি মনে হয় যে এভাবে থাকতে পারবিনা আমার সাথে তাহলে বলে দে খোলাখুলি এভাবে আমার প্রশ্নগুলো এড়িয়ে যাস না। আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পারি রে সৌম্য তুই আজকাল আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছিস। জানি তুই ব্যস্ত থাকিস কিন্তু তোর আকাশছোঁয়া ব্যস্ততার মাঝে কি একটু সময় হয় না আমার জন্য? নিশ্চয়ই হয় কিন্তু তাও তুই আমার প্রশ্ন দেখে এড়িয়ে যাস এখন আমার সাথে সেইভাবে কথা বলতে চাস না ফোন কলগুলো আজকাল কেমন ভাবে কেটে দিস কেমন যেন নিষ্ঠুর মনে হয় তোকে। কেন এমনভাবে বদলে গেলি রে বেশ তো ছিলাম আমরা। যাইহোক দয়া করে এবার একটা সিদ্ধান্ত নে, আমি যেটা বলছি সেটা বোঝার চেষ্টা কর এতে দুজনেরই ভালো হবে। তুই যদি মনে করিস যে তুই আমার সাথে থাকতে পারবি না তোর অন্যকোনো পিছুটান আছে যার জন্য তুই আসতে পারছিস না আমার কাছে তাহলে সেটা তুই আমাকে বলতে পারিস রে।

চিত্র : সংগৃহীত

আর যদি তোর মনে হয় আমরা একসাথে থাকতে পারব তাহলে সেটাও বল না হয় তার জন্য আমি আরও ছটা মাস অপেক্ষা করব। কিন্তু তুই তো কোনো উত্তরই ঠিক করে দিতে পারছিস না, আমি যদি মুখ বুজে আরও ৬টা মাস অপেক্ষা করার পর শুনি যে তুই আমার সাথে থাকতে পারবি না তাহলে আমি কি করবো তখন তুই বল। এইভাবে আর আমায় পিছুটানে বেঁধে রাখিস না। শেষবারের মতো প্রশ্নটা করলাম এবার ভালো করে ভেবে উত্তরটা দিস, অনেকদিন পর দেখা হল তোকে কথাগুলো আজ বলতে ইচ্ছে করছিল না কিন্তু না বললেও নয় সব কথা ফোনে বলা যায়না তাই বলছি একবার ভেবে দেখ কারণ এই পিছুটানে বেঁচে থাকতে বড় কষ্ট হয় রে। না আমি ঠিকভাবে তোকে নিয়ে ভাবতে পারি না আমি তোকে ছাড়তে পারি; আমি বুঝতে পারিনা আমি কি করবো কোন দিকে চলবো জানি তুই ছেড়ে চলে গেলে বড় কষ্ট হবে তোকে ছাড়া দিনগুলো বড় কষ্টের হবে কিন্তু তবুও তোকে আমি বেঁধে রাখতে পারিনা জোর করে।

তুই বলিস তুই কি চাস সেই মতোই না হয় আমরা আমাদের পরবর্তী দিনগুলো কাটাবো যদি সাথে থাকিস পাশে থাকিস তাহলে তাই সই আর যদি না থাকিস তাহলেও তাই হবে, তোকে ভুল বুঝবো না জানবো একসাথে থাকা হলো না একসাথে থাকার জন্য যেটা প্রয়োজন ছিল সেই পরিমান বিশ্বাস ও ভালোবাসা হয়তো এই বন্ধুত্বে মিশতে পারেনি কিন্তু তোর জন্য আমার যে অগাধ ভালোবাসা আছে তা হয়তো আজীবন মনের মাঝে থেকে যাবে।

এতক্ষণে নীরবতা ভেঙে সৌম্য বলল আচ্ছা সব ভেবে দেখব এখন চল বৃষ্টি কমেছে, কে এফ সি যাবি অনেকদিন যাইনি। মিঠি হুম বলে মাথা নাড়িয়ে সৌম্যর হাত চেপে একটা কথাই বলল এরপর তুই কি ভাববি বা কি বলবি সেটা তোর ইচ্ছে তবে আমি বলব আর পিছুটান রাখিস না, পিছুটানে থাকিস না। ওরা চলে গেল কিন্তু পিছুটান! সেটা হয়তো আজ এই মুহূর্ত থেকে আবার ওদের মধ্যে নতুন করে তৈরি হল। আসলে আমরা জীবনে এগিয়ে যাই তবে কিছুক্ষেত্রে পিছুটান অদৃশ্যভাবে আমাদের সাথে থেকে যায়, আর সময়ে অসময়ে তার উপস্থিতি জানিয়ে যায়।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *