একাকী বৃষ্টি

ঝমঝম বারিবিন্দু,

না জানিয়েই আজকাল হঠাৎ হঠাৎ নিঃশব্দে নেমে আসে

এ জীবনের অকালসন্ধ্যায়, অথচ তার শেষ ঘুমটুকু আজও

শুধু আমার জন্যই; প্রতি পলকের আবেশে

বর্ষা বলে ডেকেছিলাম যাকে,

সদ্যস্নাত আমপাতায় কাচের মতন জল

সবেমাত্র হাতের চেটোয় চুঁইয়ে চুঁইয়ে পড়ছে তখনও;

এক খামখেয়ালি কুড়ুনির অনভ্যস্ত চোখে

সে হয়তো আমাকেই আলগোছে কুড়িয়ে নিচ্ছে ,

আর খামে মোড়ানো গোলাপের ভেজা ভেজা গন্ধ

কখন জড়িয়ে গিয়েছিল উষসীর সাথে…

দোমড়ানো কথাগুলো তাই গুছিয়ে নিয়ে

তাকেই জমা রাখতে বলেছিলাম, ঠিক যেমন খোলা মনটা

আমার কাঁধে ফেলে দিয়ে ও হেসেছিল, নুপুরের বাজনায়

ছাইরঙা মেঘটাকে পর্যন্ত ভুরু কুঁচকে তাকাতে বাধ্য করেছিল,

আমি তবুও অবাধ্য হইনি;

সিক্তার এলোমেলো চুলের ঘের কপাল জুড়ে

নামতে থাকে, খাতাভর্তি আগেকার ঝুরঝুরে পাতাগুলোকে

একটা টানে উপড়ে ফেলে এই সামান্য ছেলেটাকেই

বারবার আঁকড়ে ধরতে চায়; বেশ বুঝি

ডাগর চোখের অভিমানটা কেবল আমার ওপরেই,

চেয়েছিলাম তো আমিও

দিনশেষের ক্লান্ত নিঃশ্বাস ভিড় করুক

এই অকূলের ভেলায়; শময়িতার মতো আবার তুমি ফিরে এসো

পলে পলে…মেঘমল্লারে…

তোমার ঠোঁটের ওঠানামায়

একটু অন্তত সুর দেখা দিক; সেটাই খালি শুনতে চাই,

সস্তার নেশায় বুঁদ হয়ে

রাস্তায় ছাতাটা ছুঁড়ে ফেলে একা একা ভিজতে চাই না,

তারপর পাগলা জ্বরের ঘোরে একগাদা পথ্য গিলে

বসে বসে ঝিমোতেও পারব না,

সবে শ্রাবণ, আকাশের অপার নীলিমা জমাট বেঁধে

আমার বাড়িতেই আসছে, ওই যে…ঘরে দাঁড়িয়ে দেখছি,

জানালার শার্সিটা বড্ড ঝাপসা, কার্নিশ বেয়ে টপটপ করে জল পড়ছে,

না না, আমার চোখে জল নেই…

এবার বলো, তুমি ফিরছ কবে?…ফিরছ না?

তবে যে বলেছিলে, সামনের বছর আমরা ভিজব;

নিয়ম ভেঙে, ব্যস্ত রাস্তায় ছন্দহীন হয়ে…

আমার কাছে এতটা অপরিচিতা তো তুমি নও!

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *