দিনটি ছিল ১২ই ডিসেম্বর, রবিবার। শীতের দিনে ছুটির অলসতা জাঁকিয়ে বসেছে আমার উপর। দুপুরে আহার শেষ করে ছাদের দিকে যাব, হঠাৎ ফোনটা বেজে উঠলো।
-হ্যালো, মণি তাড়াতাড়ি চলে আয়, তোর দাদুর শরীরটা আবার খারাপ হয়েছে। আমি একা কিছু বুঝতে পারছি না।
-তুমি শান্ত হও, চিন্তা করো না দিদা, আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব পৌছানোর চেষ্টা করছি। তুমি পাড়ার ডাঃ বাসু কে একবার ডাক পাঠাও। আমি রাখছি।
ঘড়িতে তখন ৪টে বাজে। শিয়ালদহ-এর উদ্দেশ্যে ৫:২০র কৃষ্ণনগর লোকাল ধরার জন্য রওনা হলাম। স্টেশনে পা দিতেই দেখলাম ট্রেনটি ছেড়ে দিল। রবিবার তাই খুব ভিড় ছিল না। অপেক্ষা করছিলাম ৭:২৫ এর শেষ ট্রেনটি ধরার জন্য। যত রাতই হোক যেতে তো হবেই, দিদা কে কথা দিয়েছি যে।
ট্রেনটি যখন কৃষ্ণনগর পৌছালো তখন ১০:৩৫। ছুটির দিন শীতের রাতে স্টেশন জন শুন্য। কুয়াশা যেন অন্ধকার কে আরও গাঢ় করে দিয়েছে। কনকনে শীতের হাওয়া, শুকনো পাতাগুলো গায়ে এসে লাগলেই চমকে উঠলাম। রাত তখন প্রায় ১১টা। বাড়ি যাওয়ার জন্য কোনো রিক্সা পাবো না জেনেই দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে দ্রুত পায়ে হাঁট ছিলাম।কানে হঠাৎ একটা স্বর ভেসে এলো-
ও… মণিমা, কোথায় যাচ্ছো? বড়োবাবু যে আমায় পাঠালো তোমায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। যাও দেখি সামনে আমার রিক্সায় গিয়ে বসো।
গলার স্বর আমার চেনা- হরেনকাকার, দাদুর বাড়ি আসলেই তার রিক্সা তেই যেতাম স্টেশন থেকে বাড়ি।
থমকে গিয়ে দেখি কুয়াশায় একটি লন্ঠনের আলো এগিয়ে আসছে আমার দিকে,খুব একটা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম না।
-তুমি এসেছো হরেনকাকা, তাড়াতাড়ি নিয়ে চলো।
-হ্যাঁ হ্যাঁ, চলো মণি মা।
কয়েকটা কথা বলতে বলতে বাড়ির সদর দরজার সামনে এসে পৌঁছালাম। নেমে ভাড়া দিতে গিয়ে দেখি হরেনকাকা রিক্সা নিয়ে হন হন করে এগিয়ে গেলো। কুয়াশাতে দেখতে পাচ্ছিলাম না। ভাবলাম বাড়ি যাওয়ার তাড়াতে ভুলে গেছে।
বাড়িতে ঢুকে দেখলাম দাদু তখন একটু সুস্থ। দিদা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো- এতো রাতে কী হাঁটা পথে এলি মণি? আমি হেসে বললাম-না না, তোমরা হরেনকাকা কে পাঁঠিয়ে ছিলে সেই তো আমায় নিয়ে এল।
দাদু -দিদা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো- তোর কোথাও ভুল হচ্ছে মণি।আমরা হরেন কে কী করে পাঠাবো? সে যে পাঁচ মাস আগে মারা গেছে।
শিউরে উঠলাম আমিও।
না, শুধু সেদিন শিউরে উঠেছিলাম তা নয়। আজ এক বছর পরেও ঘটনা টা ভেবে মন কেঁপে ওঠে। আজ ও বুঝতে পারিনি সেদিন সে কে ছিল।
সমাপ্ত।