স্মৃতি

“দাদু ভাই রাগ করেছো নাকি নিজের দাদাজানের
উপর?” (দাদী জান আমার পাশে এসে বসলেন)

“না দাদী জান, উনার উপর কেনো রাগ করবো?”

“তো মন খারাপ করে কেনো বসে আছো? “(দাদী জান)

“না দাদী জান মন খারাপ করিনি, কিন্তু আমি কোথাও গেলে আসতে দেরি হলে উনি অনেক বকাঝকা করেন।আপনি ই বলেন কাল রাতে আসতে দেরি হয়েছে তাই জন্য উনি রেগে বসে আছেন।আর কাল রাতে খাবার ও খায়নি তিনি। আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে দেরি করিনি বাড়ি আসতে, রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো যে কারনে লেট হয়ে গেলো। তার জন্য আমার সাথে ঠিক মতো কথা বলছেন না তিনি।”

“না দাদু ভাই উনি রাগ করেনি, তোমার বাবা মা কে হারানোর পর থেকে উনি এরকম হয়ে গেছেন। তুমি কোথাও গেলে উনার একটা ভয় কাজ করে। উনার তো আর কেউ নেই বলো তোমার ছাড়া।তুমি উনাকে ভালো করে বলবে উনি বুঝে যাবেন।”(দাদী জান)

“জ্বী দাদী আমি জানি উনি রাগ করে বেশিক্ষণ থাকতে পারবেন না।”

“আরাফ দাদু ভাই উঠে পর ফজরের আযান হচ্ছে নামাজ পরতে হবে তো।” ( ইমরান সাহেব এসে আরাফ কে ডেকে তুলতে লাগলেন নামাজের জন্য)

দাদা জানের আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।চোখ খুলতেই বুঝতে পারলাম এতক্ষন আমি স্বপ্ন দেখছিলাম।দাদা জান আমার পাশে এসে বসলেন। আমার মাথায় হাত রেখে বললেন,

“দাদু ভাই, কাল আমার রাগ করা ঠিক হয়নি।আসলে তোমার বাবা আর মায়ের পর আমার সাথে তুমি আর তোমার দাদী জান ছিলো, কিন্তু সে ও আমাকে একা করে চলে গেছে। আমার তো আর কেউ নেই তোমার ছাড়া। খুব ভয় করে যদি তোমাকে ও হারিয়ে ফেলি। তাই এতো চিন্তা হয়।” (দাদাজান)

“না দাদা জান ঠিক আছে।আর আমি ও কাল অনেক রাত করে ফেলেছিলাম বাড়ি ফিরতে। পরের বার থেকে আর হবে না ইনশাআল্লাহ।”

“দেরী হলে ও তুমি শুধু আমাকে একটা ফোন করে বলে দিও। এতে আমি কিছু টা হলে ও চিন্তা মুক্ত থাকবো।” (দাদাজান)

“জ্বী অবশ্যই।”

“তবে তোমার দাদী জান আমার সাথে অনেক বড়ো অন্যায় করে চলে গেল। সে তো বলে ছিলো আমার সাথে থাকবে, আমার হাতটা ছাড়বে না। কিন্তু আমাকে আর তোমাকে ছেড়ে সে না ফেরার দেশে চলে গেলো।” ( দাদাজান)

আমি বুঝতে পারলাম দাদাজান আর একটু হলেই কেঁদে দেবেন,তাই উনাকে বললাম,

“চলুন দাদাজান নামাজ টা পড়ে নেওয়া যাক, নইলে দেরী হয়ে যাবে।আর যা হওয়ার সেটা হয়ে গেছে এতে আমাদের কিছু করার নেই।”

দাদাজান একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

“হ্যাঁ, চলো।”
বলে তিনি উঠে চলে গেলেন।

কিছু দিন হচ্ছে দাদী জান আমাকে আর দাদাজান কে একা করে চলে গিয়েছেন।হঠাৎ করেই উনার হার্ট এ্যাটাক হয়।যখনি আমার আর দাদাজান এর মধ্যে রাগারাগি হতো তিনি এসে আমাদের বোঝাতেন, ঠিক যে রকম আজ স্বপ্নে দেখলাম। খুবই খারাপ লাগছে।

খুব ভালোবাসতেন তিনি আমাকে আর দাদাজান কে।তাই তো দাদাজান দাদী জানের মৃত্যু তে এতোটা ভেঙ্গে পড়েছেন। মানুষ টি চলে গেলো আর উনার সাথে কাটানো মূহুর্ত গুলো স্মৃতি হয়ে আমাদের কাছে রয়ে গেলো।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *