ধরুন একদিন সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে আপনি দেখলেন যে আপনার প্রিয় ফুলগাছের চারাটা আগেরদিন রাতের ঝরের কারণে গোড়া থেকে উপড়ে পরে আছে, বা ধরুন দেখলেন অনেক প্রিয় কোনো বই যেটা অনলাইনে অর্ডার দিয়েছিলেন, সেটা আসার পর তার দুটো পাতা ছেড়া..আপনি অনেক কষ্ট পাবেন অবশ্যই, অনেক কিছু মাথামুণ্ড ভাববেন, নিজেকে দোষারোপ করে… সারাটাদিন কাটিয়ে দেবেন, এরকমই হয় তো? আপনি ভাবতে থাকেন যে – আমারই দোষ, যদি কাল বৃষ্টি আসার আগে গাছটা ঘরে তুলে রাখতাম.. বা দায়সারা ভাবে অনলাইন অর্ডার না করে বইটা যদি কলেজস্ট্রিট থেকে কিনে আনতাম, তাহলে এইগুলো দেখতে হতোনা।
হ্যাঁ, সত্যিই হতোনা। এইগুলো তো ছোটো-ছোটো উদাহরণ.. আরও কত জিনিস আমাদের সঙ্গে ঘটে, যা সারাজীবন শুধু মনে নয়, মস্তিস্ককেও দাগ কেটে দিয়ে যায়।
যেমন ধরুন খুবকরে পরিশ্রম করে পরীক্ষা দিতে গেলেন কিন্তু এক্সামহলে গিয়ে কনফিডেন্স হারিয়ে কিচ্ছুটি লিখতে পারলেন না। ইন্টারভিউতে আপনার জানা প্রশ্নগুলোর উত্তর দিলো আপনার নীরবতা, অথবা ধরুন এমন একটা মানুষ যাকে প্রচন্ডভাবে অবহেলা করতে চেয়েও তার প্রতি দুর্বল হয়ে পরা থেকে নিজেকে আটকাতে পারলেন না।
তখন মনে হয়না যে কি জন্য বড়ো হলাম? কিই বা শিক্ষা পেলাম এতদিন যে সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা করতে পারলাম না? অনেকেই উত্তর দেবে – ভাই তোর সময়টা ভালো যাচ্ছেনা, বা – এত চিন্তা করিসনা, ওই চাকরিটা বা ওই মানুষটা ঠিক তোর জন্য নয়রে, তুই অন্যকিছু দেখনা।
তবে বিশ্বাস করুন.. এইগুলো বিশ্বাসযোগ্য নয় এবং আপনার বিশ্বাস করা উচিতও নয়, যদি পরীক্ষাহলে বা ইন্টারভিউতে আপনি চুপ হয়ে বসে থাকেন তবে সেটা সময়ের দোষ নয়, দোষটা আপনার..আপনারই নিজেকে তৈরী করাতে কোনো খামতি থেকে গেছে, শিক্ষা শুধু পুঁথিগত হয়না, শিক্ষা মানুষ তৈরী করে আর মানুষের মান আর হুশ দুটোই থাকে। আর আপনার হুশ থাকলে আপনি চুপটি করে বসে থাকতেননা।
আর যদি বিষয়টা অন্য কোনো মানুষের হয়, তবে আমি বলবো একটা গোটা মানুষকে নিজের করে পাওয়ার লোভ সবার হয়, আজীবন রাখার ইচ্ছা সবাই প্রকাশ করে ফেলে, কেউ মনে-মনে আর কেউ মুখে-মুখেও।
এই জিনিসটাতে আপনি একদম নির্দোষ। লোককে ছোট করা, কটু কথা বলা, অপমান করা এসব এর ক্ষমতা নিয়ে অনেকেই জন্মেছে তবে ভালোবাসার মতন সুন্দর কাজটা করতে সবাই সহজে পারেনা।
যে পরীক্ষাটা ছেড়ে এসেছেন সেটা নিয়ে মন খারাপ করুন, কাঁদুন.. তবে উঠেও দাঁড়ান। ভাবুন একবার, ভগবান আপনাকে ক্ষমতা দিয়েছে, আপনি যোগ্য বলেই তো দিয়েছে। সবাই মানবজন্ম পায়না, পেলেও অনেকে দুবেলা খেতে পায়না, মাথার উপর ছাদ পায়না… আর কেউ এইগুলো পেলেও পড়াশোনা করার সুযোগ পায়না। আপনি পেয়েছেন, এতো সহজে হাতছাড়া করে দেবেন? স্বামীজী বলে গেছিলেন – সব শক্তি আমাদের ভিতরেই আছে.. সেটা খুঁজে বের করুন।
যে মানুষটিকে অবহেলা করার চেষ্টা করেও পারেননি, দুর্বল হয়ে পড়েছেন, আগে নিজে একবার ভেবে দেখুন অবহেলা করতে চাইছেনই বা কেনো? কারন গুলো খুঁজে বের করুন.. অংক কষার মতন হিসেব করে দেখুন তো.. কারণ গুলোর কোথাও গোজামিল আছে কিনা, যদি দেখেন যে মানুষটা অযোগ্য নয়, তাহলে এগিয়ে যান.. জানান..তবে যদি কোনো উত্তর না পান তাহলে দ্বিতীয়বার আর যাবেন না, কারণ ওই যে, মান আর হুশ.. হুশ এর কথা তো শুনলেন, এবার মানটাও বজায় রাখুন।
কষ্ট-দুঃখ ছাড়া জীবন হয়না ঠিক যেমন আলো আর অন্ধকার নিয়েই তো গোটা দিন। পৃথিবীতে অনেক কিছুই হবে.. যা কাঁদাবে, হাসানোর লোক বা জিনিস তো গুটিকয়েক হাতেগোনা। তবে একটা কারণ খুঁজে পেলেও মন খুলে হাসুন, পরে কি হবে, কি করবো এসব তো সারাদিনই ভাবেন…
একবার ভেবে দেখুন তো, আপনি একদিন মরে যাবেন এটা আপনি জানেন, তাই জন্য কি আপনি বাঁচা ছেড়ে দেন? দেন না তো.. তাহলে যে ফুলগাছটা মরে গেলো, সেরকম একটা আবার কিনে আনুন, পরীক্ষাটায় আবার বসুন, একটা মানুষ যদি নাও চায় আপনাকে তাহলে আপনি কি এতটাই ফেলনা যে আপনার সব শেষ হয়ে যাবে?
ভুলে যাবেননা.. আমাদের সাথে যা-যা ঘটে তা শুধু আমাদের জীবনের একটা অংশ, আর আমরা আমাদের গোটা জীবনটা। বিশ্বাস করুন, ভালো থাকতে জানতে হয়, আপনার ভালো থাকার দায়িত্তটা শুধুই আপনার, ওটা অন্যকেউ আপনার হয়ে করে দেবেনা।