দ্বিতীয় পর্ব
সারাদিন সাগ্নিকের খোঁজ পাওয়া গেল না, ওদিকে বৃষ্টি কম বেশি হয়েই চলেছে। হঠাৎই সানন্দার কি খেয়াল হল সাগ্নিকের স্টাডি রুমে গিয়ে ওর ডাইরিটা খুঁজতে লাগল। সাগ্নিক ইচ্ছে করে ওকে ছেড়ে চলে যায়নি তো? সাগ্নিক মাঝে মাঝেই বলতো যেদিন বুঝবো আমাদের আর একসাথে থাকা সম্ভব হচ্ছে না, সেদিন আমি নিজে থেকেই হারিয়ে যাব। কিন্তু এমন তো কিছু হয়নি যেখানে ওদের একসাথে থাকা সম্ভব হবে না, তাহলে কী সত্যিই সাগ্নিক হারিয়ে গেল নিজের ইচ্ছায়?
না! এর কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি, বাইরের বৃষ্টি যেমন থেমে গেছে ঠিক তেমনই সানন্দার চোখের বৃষ্টি আস্তে আস্তে থেমে গেছে। এইভাবেই কেটে গেছে ছয় মাস সাগ্নিকের কোন খোঁজ আসেনি। পুলিশ স্টেশন, হসপিটাল, মর্গ কোন জায়গায় সাগ্নিকের কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ওদিকে সানন্দা কলকাতার এই ফ্ল্যাটে একা থাকতে থাকতে হাঁপিয়ে উঠেছে তাই ও জোর করে কাজে বদলি নিয়ে নর্থ বেঙ্গল এসেছে। কারন ওর বিশ্বাস নর্থ বেঙ্গলের কোথাও না কোথাও সাগ্নিক থেকে গেছে, আর সাগ্নিককে ও খুঁজে বের করবেই। সানন্দা নর্থ বেঙ্গল আসার দিন থেকে এখানেও বৃষ্টি শুরু হয়েছে।আজকাল সানন্দা বৃষ্টি শব্দটাকেই খুব ভয় পায় ওর খুব কান্না পায়, মনে হয় চিৎকার করে বলে সাগ্নিক তুমি একবার ফিরে আসো। আর বলে যাও কেন আমাকে একা ফেলে চলে গেলে? কিন্তু আবার নিজেকে মানিয়ে নেয় ও নিজেই কারণ সাগ্নিককে ও খুঁজে বার করবেই আর এটা ওর নিজের কাছে নিজের প্রতিজ্ঞা। একের পর এক দিন যেতে থাকে পাহাড়ের বৃষ্টি সানন্দাকে শান্ত করে, ও নিজেকে সামলে নতুনভাবে কাজ শুরু করে। যেন এক নতুন জীবন; কালো মেঘের মুষলধারার বৃষ্টি সরিয়ে এক নতুন সূর্যোদয়।
তবে এই জীবনেও সানন্দা সাগ্নিকের খোঁজে অবিচল, এইভাবেই সময় পেরিয়ে যেতে যেতে একদিন আবার সেই বৃষ্টি আর সাথে সেই চেনা গন্ধ যা সানন্দাকে পাগল করে দিত একসময় আজও তার অন্যথা হয়নি কিন্তু কই কোথায় সে কত খুঁজল সানন্দা কিন্তু কই সাগ্নিক তো নেই ওর আসে পাশে তাহলে কি ওর মনের ভুল! দুদিন পর খুব ভোরে একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন; হ্যালো! সানন্দা, বাইরে আসো। সাগ্নিক! শুধু এটাই বলে ফোন ফেলে রেখে বাইরে ছুটে এসে দরজা খুলতেই সানন্দা দেখল বাইরে কেউ নেই তবে একটা খাম আর কিছু পাহাড়ি ফুল। সানন্দা পাগলের মত বাড়ির বাইরে সাগ্নিককে খুঁজে বেরাল, তবে কেউ কোথাও নেই। শেষে ক্লান্ত চোখে খামটা খুলে একটা চিঠি পেল সানন্দা; চিঠিতে লেখা ছিল…
প্রিয় নন্দা,
আমি তোমার জীবনে এসেছিলাম ‘এক পশলা বৃষ্টি’ হয়ে চলেও গেলাম সেইভাবেই। আগের থেকে অনেক শান্ত হয়েছ তুমি, অনেক দায়িত্ব নিতে শিখে গেছো, তাই এবার আমার ছুটি; এবার নিজের জীবনটা সুন্দর করে গুছিয়ে নাও আর আমাকে খুঁজো না। এই জন্মে নাহোক, পরের জন্মে কিংবা অন্য কোথাও আবার আমাদের দেখা হবে কোনো এক বৃষ্টি ভেজা দিনে। চোখের জল বাঁধ মানছে না সানন্দার, তাও চিঠিটা ভাঁজ করে ওই দূরে পাহাড়ের দিকে তাকিয়ে সানন্দা কথা দিল; হ্যাঁ! সাগ্নিক আমাদের আবার দেখা হবে, দেখা হবে ঠিক। সাথে সাথেই ‘এক পশলা বৃষ্টি’ এসে ভিজিয়ে দিল সানন্দার সারাটা শরীর, যেন সব কষ্টের উপশম ঘটল এক মুহুর্তে।