শীতের পরশ

শীতকাল আসা মানেই বছরটাকে শেষবারের মত একবার ফিরে দেখা। শীতের আমেজ গায়ে মেখে আরেকবার ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন। শীতকাল মানেই মাংকি টুপি, উলের কাঁটা। শীতকাল মানেই নলেন গুড়, খেজুরের রস, কমলালেবু, জয়নগরের মোয়া এসবের মধ্যে হারিয়ে যাওয়া। শীতকাল মানেই আলমারিতে ঘুমিয়ে থাকা লেপ-কম্বল বের করে একটু রোদ মাখানো।

দুপুরে খেয়ে উঠে বাড়ির ছাদে কিংবা উঠোনে বসে রোদের পরশ মেখে দুলে দুলে পড়া মুখস্থ করা। শীতকাল মানেই হরেকরকম মেলার সম্ভার। কলকাতা বইমেলায় একটু ঘোরাঘুরি। শীতকাল মানেই স্কুলের স্পোর্টস, যা বিগত দুই বছরে করোনার কবলে পড়ে স্থগিত হয়ে আছে। শীতকাল মানেই পার্কস্ট্রিটের ক্রিস্টমাস ইভ। আলোয় ঝলমল পার্কস্ট্রিটের রাস্তা ধরে কত হাত ধরা লোকজনের আনাগোনা, নতুন বছরকে স্বাগত জানানোর প্রস্তুতি। বাড়িতে প্রথম ফ্রুট কেক বানানোর প্রচেষ্টা। শীতকাল মানেই মা-কাকিমার দুপুরে মাদুর পেতে বসে রোদ মাখা আড্ডা।

শীতকাল মানেই বিকেলে ব্যাডমিন্টন-শাটল কক। অনেক সময় সেই খেলাটা রাতে আলো জ্বেলে ছোট-খাটো ম্যাচে পরিণত হয়ে যায়। পাবজি, ফ্রীফায়ারের সময়ে এইসব আনন্দের দিনগুলো ধীরে ধীরে কেমন যেন ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। অলিগলিতে আর আগের মতো আগুন ধরিয়ে গোল করে বসে আড্ডা দিতেও দেখা যায় না। যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে শীতকাল কাটানোর ধরনও বদলে গেছে।

পাটিসাপটা, চিতল পিঠের জায়গায় আজ আসছে ধীরে ধীরে বিভিন্ন ধরনের কেক, প্যাটিস। তবুও এসবের মাঝেও এই ঋতু আমাদের সবার কাছে কমবেশি প্রিয়। দিন বদলাবে, মানুষ বদলাবে, কিন্তু শীতের পরশ আমাদের মধ্যে সতেজ থাকবে চিরন্তন।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *