চিত্রকলা ও চিত্রশৈলীর মধ্যে আরেকটি নাম না বললেই নয় তা হল- মিথিলা চিত্রকলা। ভারতীয় চিত্রের ইতিহাসে এই নাম যদিও পরিচিত নয়। অন্য নামেই এর পরিচিতি। তবে বলা যেতেই পারে, এর অস্তিত্বও আমাদের জীবনকে সুন্দর করে তুলেছে। এতে কোনো দ্বিচারিতা নেই।
রং আর আঁকা আমাদের চিরাচরিত জীবনের নিত্য সঙ্গী। কেউ বলতেই পারবে না এসব কারো ভালো লাগে না। কারোর যদি রং ভালো না লাগে তবু তার বিভিন্ন ধরনের আঁকা ভালো লাগেই। মিথিলা রাজ্যের এই চিত্র মিথিলা চিত্র নামেই প্রচলিত। কথিত আছে – মহারাজা জনক তাঁর কন্যা সীতার বিয়ের আগে, রাজ্যবাসীদের আদেশ দিয়েছিলেন, রাম-সীতার বিয়ে উপলক্ষে গোটা রাজ্যকে রঙিন চিত্রে সুসজ্জিত করার জন্য। তাই রাজ্যবাসী সারা রাজ্যকে রাম-সীতার বিবাহের বিভিন্ন চিত্র এঁকে সাজিয়ে দিয়েছিলেন। সেই থেকে এর জন্ম।মিথিলায় সৃষ্টি হওয়ার কারণে এই চিত্রকলাকে “মিথিলা চিত্রশৈলী” বলা হয়। তবু এর আরেকটি নাম আছে যেটিতে এটি বহুল প্রচলিত- মধুবনী চিত্রকলা। প্রাকৃতিক রং আর রজ্ঞকের ব্যবহারে যা আরো উৎকৃষ্টতা পায়। আঙুল, পাতলা ব্রাশ কিংবা নিব কলমের ব্যবহারে এই অঙ্কন করা হয়ে থাকে।
এই চিত্রশিল্পের ভার্ণি, কাচনি, তান্ত্রিক, গোড়না এবং কোহবার নামে পাঁচটি স্বতন্ত্র শৈলী রয়েছে। আগে যদিও ঈশ্বর বা ধর্মীয় বিবৃতির রূপ দেখা যেত এতে কিন্তু বর্তমানে সেসব আর নেই। এই চিত্র বিশ্বব্যাপি বিশাল নাম করেছে।
বিহার সরকার সীতা দেবীকে রাজ্যিক পুরস্কার দান করার পরে ১৯৯৯ সালে মধুবনী চিত্রকলা প্রথমবারের মত সরকারী স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৭৫ সালে ভারতের রাষ্ট্রপতি জগদম্বা দেবীকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেন। এছাড়াও আর অনেক শিল্পীদের জাতীয় পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়। জন্ম, বিয়ে এবং দোলযাত্রা, কালীপূজা, উপনয়ন এবং দুর্গাপূজার মতো উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য এটির নির্দিষ্ট ও আলাদা রীতিগত বৈশিষ্ট্য ছিল। আগে যদিও দেওয়ালে বা কাগজে এর চিত্রকর্ম প্রদর্শনী হত বর্তমানে তা আমাদের পোষাকেও স্থান পেয়েছে।