জীবন সঞ্চার

বেঁচে থাকার নাম জীবন, জীবনে কিছু কিছু সময় সত্যের সম্মূখীন হতে হয় মানুষ কে, আজ আমি হলাম।
Woodland Hospital থেকে কিছু ব্যক্তিগত কাজ সেরে ফিরছিলাম, আমার গন্তব্য হাতিবাগান।
230 বাস এ চেপে আমি বসে আছি। PG hospital এর সামনে থেকে একজন মানুষ, বয়স প্রায় 55 বছরের উর্ধে, আমার পশে উনি Handicapped সিটে বসতে গিয়ে প্রায় পড়ে যাচ্ছিলেন, আমি ধরে বসিয়ে দিলাম। মানুষটার চোখে তাকালাম, একটা অদ্ভুত শান্তি আর চাপা কষ্ট লক্ষ্য করলাম।
ভীষণ জানতে ইচ্ছে হল সেই মানুষটাকে, বাক্যালাপ শুরু করলাম। কথায় আছে কাউকে সহানুভূতি দেখালে যদি সামনের মানুষটা তোমাকে বিশ্বাস করে ফেলে, তাহলে তার কষ্ট, সুখ ও মনের আবেগ তোমায় জানাবে।
পদ্ধতি টা কাজে লাগিয়ে আমি ওনার ব্যাপারে জানতে আগ্রহ দেখালাম।
তাতে যা শুনলাম তাই বলছি…
উনি একসমায় জীবনে যথেষ্ট সফল মানুষ ছিলেন, উচ্চ মধ্যবিত্ত মানুষের ছাপ তার রুচিবোধে বুজতে পারলাম। কিন্তু জীবনের নিষ্ঠুর পরিহাস থেকে কেউ কখনো নিস্তার পায় না; ওনার গল্প বা বাস্তব যাই বলুন না কেন, ভাগ্য এই মানুষটার সাথে সেই খেলা খেলেছে।
ওনার একটি কন্যা ও একটি পুত্র, সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবার। মেয়েকে অনেক পণের বিনিময়ে বিবাহ দিয়েছেন, তাতে তার জীবনের ষোলো আনার ভেতর ১০ আনা সঞ্চয় শেষ। ছেলেকে M.A Pass করিয়েছেন, কিন্তু ছেলে প্রতিষ্ঠিত হবার পর নিজের ভাগটা বুঝে নিয়ে তার স্ত্রীকে নিয়ে আলাদা সংসার গড়েছে। এই বৃদ্ধের সব সঞ্চয় শেষ আজ, আছে কেবল নিজের মাথা গোঁজার ছাদটুকু। কোন এক দুর্ঘটনায় তাঁর একটা পা অকেজো হয়ে গেছে, চলতে গেলে তাকে ক্রাচ এর সাহায্য নিতে হয়, চিকিৎসার খরচ ও সংসার চালানো প্রায় দায় হয়েছে আজ।
একদিন যাঁর সব ছিল, আজ তিনি নিজের সংসার চালাতে হাত পেতে ভিক্ষা করেন। কিন্তু তার স্ত্রী সেই কথা জানেন না বা তিনি জানতে দেননা।
P.G. তে চিকিৎসা করতে আসেন নিয়মিত আর হাসপাতালের সামনে ভিক্ষা করেন, তারপর বাড়ি ফেরেন। স্ত্রীকে বলেছেন যে তিনি একটা বেসরকারি ফার্মে চাকরী করেন।
কিন্তু আজ তার শরীরটা সঙ্গ দেয়নি, তাই কামাই হয়নি। শারীরিক ও মানসিক ভাবে বৃদ্ধ বড়ই ক্লান্ত।
বলতে বলতে প্রায় কেঁদে ফেললেন।
তাঁর ভাগ্যের পরিহাস শুনে নিজেকে খুব অসহায় মনে হতে লাগলো। আমিও একজন ছাপোষা মানুষ, খুব কষ্টেই সংসার চলাই। তাছাড়া মাস পড়েছে সবে, মাইনে হয়নি। তবু বিশাল একটা সাহস জানিনা কোথা থেকে পেলাম – আমার কাছে মাত্র ১০০ টাকা ছিল, তার থেকে ৫০ টাকা তাকে দিয়ে দিলাম। জানি না বাকি টাকায় এই সপ্তাহটা কিভাবে চালাবো। কিন্তু দিলাম, কারণ এই চালানোর মনোবল বা সাহসটা এই মানুষটার কাছ থেকে নিলাম ওই ৫০ টাকার বিনিময়ে।
এখন আমার পকেটে ৫০ টাকা ছাড়াও মনে আছে ৫০ লক্ষ সাহস, যা আমায় জীবনের পথে চলতে প্রতি পদে সহায়তা করবে।
জীবনে সব হারিয়ে বেঁচে থাকার সাহস আজ আমি কিনলাম।
নিজেকে ভিতর থেকে খুব খুশী মনে হচ্ছে।

জয় মণ্ডল (বকুল মন্ডল)

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *