#বাজা_বাপ
আজ বাড়িতে খুব হইচই, আমার জা-এর স্বাদ,
বর্ধমান থেকে সীতাভোগ, মিহিদানা এসেছে, lake market থেকে মাছ এসেছে,
আরও কত কিছু সব আমি list করে দিয়েছি, আমার শাশুড়ি তো সবাইকে বলে একা হাতে আমার বড় বউমা রিনিতা সব সামলায়,
সত্যি তো তাই, কম দিন তো হল না আমার আর পলাশ এর বিয়ের,
সেই প্রথম দিন থেকে আজ প্রায় আট বছর হতে যায় এই সংসারের প্রতি কম কথায় বলতে গেলে আমার অবদান কম নেই,
বাড়ির ছোটো থেকে বড় কোন অনুষ্ঠানই এই রিনিতার সাহায্য ছাড়া আজ অবধি হয়নি, শুধু অনুষ্ঠান বললে হয়ত ভুল হবে এই সংসারের ওঠা-নামাতেও পাশে ছিলাম।
যেমন বিয়ের ঠিক দু বছর পরই নন্দাই এর একটা বড় accident হয়,
টাকার অসুবিধে থাকায় আমার বাপের বাড়ির গয়নাগুলো পলাশকে লুকিয়েই দিয়ে এসেছিলাম।
আজও জা-এর স্বাদে আমি সব কেনাকাটা করেছি নিজে গিয়ে,
আমি নিজের জমানো টাকা দিয়েই ওর জন্য একটা সোনার আংটি গড়িয়ে এনেছি।
আজ নিজে হাতে ওকে সাজাব, আমারই তো ছোট বোনের মত।
আর আমার দু বছরের ছোট নিজের বোনটা তো আমার সাথে কোন সম্পর্কই রাখেনি,
তার অনেক বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে, স্বামী-পুত্র নিয়ে একেবারে যাকে বলে ভরপুর সংসার,
হয়ত সেই কারনেই আমার মত দিদির সাথে কোনই সম্পর্ক রাখেনি।
তাই আমি আমার এই ছোট জা-কে খুব ভালবাসি,
আর ভালবাসব নাই বা কেন?
সারাক্ষণ আমার কাছে আঠার মত লেগে থাকে।
আজ ওর জীবনের একটা বড় খুশীর দিন তাই আমারও আজ আনন্দ ধরছে না, কাল রাত্তির থেকেই শুরু হয়ে গেছে আমার প্রস্তুতি,
আজ সকাল থেকেই ব্যস্ত আমি রান্নাঘরে, জা কে খেতে দেওয়ারও সময় হয়ে এসছে,
খাবার সাজিয়ে দেবো, সব আত্মীয়-স্বজন রাও এসে গেছে।
রান্নাও করে ফেলেছি সব এবার শুধু গুছিয়ে খাওয়াবার পালা,
তার আগে খাবারগুলো গুছিয়ে সাজাতে হবে, গুছিয়ে জা-এর ঘরে যেই খেতে দিতে ঢুকলাম ঠিক তখনই শাশুড়ি বলে উঠল,
“কি করছ কি বড় বউমা,
তুমি এত জানো আর এটা শেখোনি একটা বাজা মেয়েছেলের এরকম শুভ অনুষ্ঠানের সামনে থাকতে নেই,
এক্ষুনি চলে যাও এই ঘর থেকে।”
সব আত্মীয়রা আমার দিকে এমন ভাবে তাকাল যেন আমি কোন বড় criminal, যে হয়ত এই শ্বশুরবাড়ী নামক জেলখানায় আট বছর ধরে জেল খাটছিল,
আমার ওই নিজের ছোট বোন ভাবা জা-ও মুখে কুলুপ দিয়ে বসে রইলো,
হয়ত ও আমার থেকে ছোট হয়েও সংসারের আসল সত্যটা আমার অনেক আগেই বুঝে গেছে।
আমি নিমেষের মধ্যে নিজের ঘরে ঢুকেই খিল লাগালাম,
বুকের কষ্টগুলো গলার কাছে এসে যেন ঠেলা মারছে আর উপহাস করে বলছে, ‘কি রিনিতা তুই কি এই মানুষগুলোর জন্যই এতোদিন এত করেছিলিস?’
এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন ঘুমিয়েই পড়েছিলাম।
ঘুম ভাঙল পলাশের দরজায় কড়া নাড়ার শব্দে।
দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথেই পলাশ বলে উঠল,
“তুমি কি গো! তুমি কি জানোনা তুমি এই সংসারে কোন বাচ্চার আনন্দ দিতে পারোনি,
যাকে কি যেন বলে ওই বাংলাতে? ও হ্যাঁ বাজা মেয়ে।
সেটা জানা সত্ত্বেও তুমি ওই ঘরে ঢুকে সব পন্ড করতে যাচ্ছিলে,
মা ছাড়াও বাকি সবাই তোমার উপর খুব অসন্তুষ্ট হয়েছে।
যাকগে যা হওয়ার হয়েছে সব মিটে যাওয়ার পর একবার গিয়ে ক্ষমা চেয়ে নিয়ো…”
এতক্ষণ সব কষ্টগুলো কান্নার সাথে গিলে নিচ্ছিলাম।
কিন্তু আমার পরম পতিদেবতার মুখে এই কথা গুলো শোনার পর ছোট বেলায় বাবার শেখানো একটা কথা খুব মনে পড়ে গেল,
“অন্যায় যে করে, অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা তারে যেন তৃন সমদহে”
তাই আর চুপ থাকতে না পেরে বলেই ফেললাম,
“জানো পলাশ, আজ এত বছর আমরা কম চেষ্টা করিনি আর কম doctor ও দেখাইনি,
কিন্তু প্রতিবারই সব doctor-ই বলেছে problem টা আমার মধ্যে না, আমার স্বামীর মধ্যে আছে,
আর সেটা তোমারও অজানা নয় পলাশ।
তাও সবাই যখন প্রশ্ন করে বিয়ের এতদিন পরেও কেন আমাদের সন্তান হচ্ছে না,
তখন উত্তরটা আমাকেই দিতে হয়,
আর কোন শুভ অনুষ্ঠানে আমার থাকার ইচ্ছেকে বলী দিয়ে আমায় তাদের কাছেই কথা শুনতে হয়, যাদের জন্য প্রায় সারাটা জীবনই দিয়ে এলাম।
কিন্ত তোমার অপারগতার কোন দায়ভারই তুমি কোনদিন নিলে না, সত্যির আড়ালে রইলে।
সব জায়গায় আমার উত্তরের জন্যে দাঁড়িয়ে রইলে।
কেউ জানেনা আমাদের বাচ্চা না হওয়ার কারণ শুধুমাত্র তুমি,
আমিও কোনদিন কিছুই বলিনি যদি তোমার খারাপ লাগে, কিন্তু পলাশ আমার আজ চেঁচিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে মায়েরাই শুধু বাজা হয়না, “বাজা বাপ” ও হয়।