চার্লি চ্যাপলিন বলেছিলেন , “ A day without laughter is a day wasted ’’ । এই ব্যস্ত জীবনে সামান্য হাস্যরসই দিনের শেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস এনে দিতে পারে । এখন তো ফেসবুক খুললেই হাজার হাজার জোকস্ উঁকি মারে আমাদের টাইমলাইনে কিন্তু বাঙালির শৈশবের অলিগলিতে যে মানুষটির লেখা প্রথম ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়েছিল তিনি হলেন সুকুমার রায় । ছোটবেলায় আবোল তাবোল বা পাগলা দাশু পড়ে বিছানায় গড়াগড়ি খায়নি , এমন বাঙালি দুরবিন দিয়ে খুঁজেও পাওয়া যাবে না । সেই সুকুমার রায় ছিলেন একজন বহুমুখি মানুষ । লেখালেখি ছাড়াও আরও অনেক কাজে নিজেকে ব্যস্ত রাখতেন । বিলেত থেকে ফিরে ১৯১৫ সালে তিনি তৈরি করেন ‘ MONDAY CLUB ’ , বাংলায় ‘ মণ্ডা সম্মিলন ’ । আমাদের সবারই সোমবার অফিসের প্রতি বিকর্ষণ চরমে থাকে । সেই দুঃখটা বুঝেই হয়তো‘ MONDAY CLUB ’ তৈরি করেছিলেন সুকুমার । না এই ক্লাবের কোন ক্লাবঘর ছিলনা , বিভিন্ন ক্লাব মেম্বারদের বাড়ীতেই আসর বসত মাঝে মাঝে । সেসময় সুকুমারের ব্যাক্তিত্বের আকর্ষণে অনেক নামি লোক এই ক্লাবের সদস্য হয়েছিল । তাদের মধ্যে প্রসান্তচন্দ্র মহালানবিশ , কবি সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত , অজিত কুমার চক্রবর্তী , অতুল প্রসাদ সেন , সুনীতি কুমার চট্টোপাধ্যায় , কালিদাস নাগ , এরা ছিল অন্যতম ।
হাসিঠাট্টা নয় , রীতিমত সিরিয়াস বিষয়ে আলোচনা হত মণ্ডার বৈঠকে । সমাজ , রাজনীতি , বিজ্ঞান , দর্শন , কবিতা , সাহিত্য , নাটক আরও অনেক গুরুগম্ভীর শুধুমাত্র কথাবার্তা চলত এখানে ।
এই ক্লাবের আমন্ত্রনপত্র লেখা হত ছড়ার মত করে , নিজের বিরল শৈলীতে সেগুলি লিখতেন সুকুমার নিজে । তার মধ্যে একটির কথা উল্লেখ করা যায় ,
সম্পাদক বেয়াকুব
কোথা যে দিয়েছে ডুব –
এদিকেতে হায় হায়
ক্লাবটিত যায় যায় !
তাই বলি , সোমবারে
মদগৃহে গড়পারে
দিলে সবে পদধূলি
ক্লাবটিরে ঠেলে তুলি ।
রকমারি পুঁথি কত
নিজ নিজ রুচিমত
আনিবেন সাথে সবে
কিছু কিছু পাঠ হবে ।
করজোড়ে বার বার
নিবেদিছে সুকুমার
সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত “ আমাদের শান্তিনিকেতন ’’ এর সুরে একটি গান লিখেছিলেন “ আমাদের মণ্ডা সম্মিলন ’’ । সেটি গাওয়াও হয়েছিল বৈঠকে। সত্যেন্দ্রনাথ লিখেছিলেন ,
মোদের গানের বিপুল বেগে
পাড়া আঁতকে ওঠে জেগে ,
ঢিল ছুড়িতে শুরু করে বেজায় রেগেমেগে ।
মোদের নাচ যদি পায় , তবে
কি যে হয় শোনো টা সবে ,–
নাগ বাসুকীর ঘাড় খচে যায় , হয় ভুমিকম্পন !
যায় MONDAY CLUB এর পথচলা । সমাজের দিকপাল মানুষেরা একত্র হয়ে আলোচনা , সমালোচনা আর সুস্থ বিতর্কে অংশগ্রহণ করবে , এটাই তো সুস্থ সমাজের প্রতীক । সুকুমার কিন্তু পেরেছিল একটা ক্লাবের মাধ্যমে সবাইকে এক করে রাখতেএভাবেই রঙিন হয়ে থাকত MONDAY CLUB এর প্রতিটি কর্মসূচী । ১৯২১ সালে সুকুমার অসুস্থ হয়ে পড়েন , আর তারসাথেই ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে । আজকের এই দিনে চারিদিকে কত হিংসা , কত তর্ক , এ ওর পেছনে লাগছে , শিল্পী সাহিত্যিকরাও রাজনীতি করে নিজেদের মধ্যে দলাদলি করছে , একে অপরের গায়ে কাদা ছুড়তে ব্যস্ত সবাই । এ সব কিছু ভুলে গিয়ে আবারো একটা MONDAY CLUB তৈরি করা যেতে পারে । সৃষ্টিশীল মানুষগুলো আবার একসঙ্গে বৈঠক করতে পারে । সুকুমার রায় যেটার সূচনা করেছিল সেই MONDAY CLUB কে আবার ফিরিয়ে আনা যায়না !!! আসুন না সবাই মিলে একটা উদ্যোগ নিয়েই ফেলি । সবাই হাতে হাত দিয়ে এগিয়ে আসি । একবার এগিয়েই দেখুন না , আপনার সাথে কেউ না থাকলেও থাকবে laughalaughi .
( তথ্যসূত্র- ‘A documentary on Sukumar Ray’ by Satyajit Ray & Google )