কলকাতা শহরটির পত্তন হয় ১৬৯০ সালের ২৪ আগস্ট এবং সেইদিন থেকেই আজও ঐতিহ্যবাহীভাবে ২৪ আগস্ট কলকাতা মহানগরের জন্মদিন হিসাবে উদযাপিত হয়। কলকাতা শহরটি ‘সিটি অফ জয়’ কিংবা সুন্দরী তিলোত্তমা নামেও আমাদের কাছে বহুল পরিচিত। শহরটি সংস্কৃতি, ভালবাসা, রহস্য, শ্রদ্ধা, উৎসাহ এবং অবশ্যই সুন্দর রূপ ধারণের জন্য ‘আনন্দের শহর’ বা ‘সিটি অফ জয়’ ডাকনামটি অর্জন করেছে।এটি বর্তমানে একটি মহানগর হিসাবে পরিচিত, যা আধুনিক এবং আধুনিক শহরের মধ্যে একটি নিখুঁত অবস্থানকে সমর্থন করে।
চিত্র : সংগৃহীত
কলকাতা শহরটি গঠনের জন্য একীভূত করা হয়েছিল গোবিন্দপুর, কালিকাতা এবং সুতানুটি এই তিনটি গ্রামকে। এক্ষেত্রে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রশাসক জোব চার্নক শহরটির প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সসম্মানে যুক্ত। কলকাতা, পূর্বে ক্যালকাটা নামে পরিচিত ছিল। অনেকের মতে, কালিকাতা বাংলা শব্দ কালীক্ষেত্র থেকে উদ্ভূত, যার অর্থ “দেবী কালী”। কেউ কেউ বলেছে যে শহরের নামটি খালের তীরে অবস্থিত তার আসল বসতির অবস্থান থেকে এসেছে। ২০০১ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে শহরটির নাম কলকাতায় পরিবর্তন করে।
চিত্র : সংগৃহীত
কলকাতা ১৭৭৩ -১৯১১ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ শাসনের অধীনে ভারতের রাজধানী ছিল। শহরটি আজও তার দুর্দান্ত ঔপনিবেশিক স্থাপত্য, আর্ট গ্যালারী, সাংস্কৃতিক উৎসব, নাটক, চারুকলা, নাট্যশালা এবং সাহিত্যের জন্য পরিচিত। এখানেই মাদার হাউস, মিশনারিস অফ চ্যারিটির সদর দফতর অবস্থিত, যা মাদার টেরেসা দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।ভারতের পূর্ব অংশের শিক্ষাগত, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং এটি ভারতের তৃতীয় সর্বাধিক জনবহুল মহানগর হল কলকাতা।
চিত্র : সংগৃহীত
কলকাতা নিয়ে লিখতে গিয়ে প্রাক্তন সিনেমার একটা কথা খুব মনে পড়ছে, কলকাতা হল প্যাশনের শহর অর্থাৎ মানুষের একটা আবেগ একটা ভালোলাগা শহরটির সাথে মিশে আছে। যারা কলকাতায় বসবাস করে কিংবা যারা কাজের সূত্রে দৈনন্দিন কলকাতায় যাতায়াত করে তাদের মধ্যে হয়তো এক আবেগের যোগসূত্র এই শহরের সাথে জুড়ে রয়েছে বাইরে থেকে যারা কলকাতা দেখতে আসে তারাও যেন অল্প সময়েই কলকাতাকে আপন করে নেয়। বহু বছর ধরে এই ঐতিহ্য চলে আসছে যা এখনো পাল্টায়নি আসলে দিনের সাথে সাথে কলকাতা নিজের অনেক পরিবর্তন ঘটালেও শুধুমাত্র স্মৃতিসৌধ, ঐতিহ্য, আভিজাত্য বা কংক্রিটে মোড়া আবাসন নিয়েই নিজের অবস্থান পাকা করেন; সময়ের সাথে সাথে শহরটি অনেক বদলে গেছে অনেক এগিয়ে গেছে তবুও এখানে বসবাসকারী মানুষদের এই শহর নিয়ে আবেগ, মাতামাতি, খাওয়া – দাওয়া, ভালোবাসায় একটুও ছেদ পড়েনি। উত্তর কলকাতার সাবেকিয়ানা থেকে দক্ষিণ কলকাতার আধুনিকতা সমস্তটা জুড়ে কলকাতার আভিজাত্য আজও বজায় রয়েছে।
চিত্র : সংগৃহীত
এটাও পড়তে পারেন : স্মৃতির সান্নিধ্য
এই শহর শিখিয়েছে একই সাথে মানুষকে আনন্দ – দুঃখ ভাগ করে নিতে, যেমন এই শহরে মানুষ কখনো দুর্গাপুজোয় মেতে উঠেছে আলোর রোশনাইয়ের সাথে আনন্দের জোয়ারে আবার কখনো বা ঈদের খুশিতে কিংবা বড়দিন ও নতুন বছর আগমনের এক উষ্ণ আপ্যায়নে। ঠিক তেমনই এই শহর শিখিয়েছে ফুটপাতে থাকা মানুষগুলোকে দুঃখ কষ্টের কাছে মাথা নত না করে লড়াই করে বাঁচতে, নতুনভাবে স্বপ্ন দেখতে। রোজ কত মানুষ কাজের সন্ধানে কলকাতা পাড়ি দেয় তারা শেখে, তারাও থাকে, তারাও স্বপ্ন দেখে কলকাতাকে আঁকড়ে বাঁচার। আসলে কলকাতা রোজ নিজেকে একটু একটু করে তার চারপাশের মানুষগুলোর সাথে নিজেকে আবদ্ধ করেছে, নিজেকে নতুন আঙ্গিকে গড়ে তুলেছে; যেখানে কলকাতা ও তার মানুষরা এক আনন্দ, এক আবেগের সূত্রে আবদ্ধমান।
চিত্র : সংগৃহীত
হয়তো কলকাতার সমস্ত অলিগলি রাস্তাঘাট খুব সুন্দর করে সাজানো বা বাঁধানো নয় কিন্তু তাতেও কলকাতাবাসী অনেক অসম্পূর্ণতার মধ্যে দিয়েও কলকাতার সম্পূর্ণতা খুঁজে পেয়েছে। একটা মানুষের সাথে আরেকটা মানুষের যেমন রাগ অভিমান দুঃখ আনন্দ ভালোবাসা নিয়ে সম্পর্ক তৈরি হয় ঠিক তেমনই কলকাতার কিছু অসম্পূর্ণতা বা অগোছালভাব যেন এক নীলচে আলোর মোড়কে কলকাতাবাসীর সঙ্গে তার যোগসূত্র স্থাপন করেছে। তাইতো অনেক ঘাত – প্রতিঘাত পেরিয়ে, বহু ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে কলকাতা নিজেকে সুন্দরী তিলোত্তমা রূপে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
চিত্র : সংগৃহীত
সমগ্র বিশ্বের কাছেই ২০২০ সাল এক নতুন অধ্যায়। যেখানে মানুষ করোনাকে সঙ্গী করে বাঁচার নতুন পন্থা অবলম্বন করেছে, তাই এই বছর কলকাতার জন্মদিনটা একটু অন্যরকম। এইবছর নিউ নরমালকে সঙ্গী করে কলকাতার জন্মদিন পালন; যেখানে কলকাতাবাসী সচেতনতার সাথে কলকাতাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, কলকাতার সাথে দিনযাপন করছে। তাই সবশেষে কলকাতার জন্মদিনে আজ অনুপম রায়ের সেই গানটা বলাই যায় ”তুমিও হেটে দেখো কলকাতা, তুমিও ভেবে দেখো কলকাতা; যাবে কি না যাবে আমার সাথে”। যেখানে আবেগ – ভালোবাসা – আনন্দ সমস্ত দুঃখ – কষ্টকে ছাপিয়ে যায়; সেটাই আমাদের কলকাতা, সেটাই আমাদের সিটি অফ জয়।