বিষয়ের বোঝা জানো কাকে বলে?
হ্যাঁ, বোঝা।
পড়াশোনাটা তখনই বোঝা মনে হয়,যখন ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে মানুষ জোড় করে কোনো মানুষকে তার মতের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য করে।
যখন নিজের পছন্দের বিষয়গুলো নিতে বাধা দিতে সবাই এগিয়ে আসে।
নিজের মতের দাম যখন কাছের মানুষেরা ও দিতে ভুলে যায়।
ইতিহাসে দক্ষ মেয়েকে অঙ্ক এবং অঙ্কে ভালো ছেলেকে যখন জোড় করে ইতিহাসের বোঝা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
আর্টস নিয়ে পড়ার স্বপ্ন দেখা ছেলেকে ও মেয়েকে বিদ্রুপের ছলে শুনতে হয়- “ও বাবা! এতো ভালো খেটে, পরিশ্রম করে, ভালো নম্বর পেলি, আর সেটাকে কাজে লাগাচ্ছিস না, শেষে কিনা আর্টস নিয়ে… আরে সায়েন্স নে, অনেক লাইন আছে ওতে।”
এরকম কুৎসিত মন্তব্য করে নিম্নমনের মানুষেরা যাদের মনে আঘাত দিতে থাকে অনবরত…
তখনই পড়াশোনাটা তাদের কাছে বোঝা বলে গন্য হয়।
(ছবি- সংগৃহীত)
ধরো, মাধ্যমিকে প্রথম ছেলেটি বা মেয়েটি…
পেপারে, খবরে চারিদিকে যার নাম,
তার হয়তো ইচ্ছা ছিলো আর্টস নিয়ে পড়ার।
সে শিক্ষক হতে চেয়েছিলো হয়তো।
মা বললো না, আমার ছেলে সায়েন্স নেবে..
আর্টস এ আবার কোনো ভবিষ্যৎ আছে নাকি?
বাবা বললো, আমার ব্যবসা কে সামলাবে? ওকে কমার্স নিতে হবে।
ও এবার ফার্স্ট হয়েছে,একটা সম্মান আছে তো নাকি? দাদা বললো, আর্টস নিয়ে পড়লে কেউ পাত্তা দেবে না। বাবার টাকা আছে,ওকে আমি ইঞ্জিনিয়ারিং-এ ভর্তি করবো।
কাকু বলে উঠলো আরে আরে কি করছো কি? আমার ইচ্ছা আছে ওকে ভালো উকিল বানাবো।
কাকিমা থামিয়ে দিয়ে বললো, না, আমি ডাক্তার, ওকেও ডাক্তারিই পড়তে হবে।
বাড়িতে সবাই সায়েন্স নিয়ে পড়েছে। আর তুই না পড়লে লোকে বলবে কি?
এটাও পড়ুন- একটা সময়- যে আমাদের সম্পূর্ণ নতুনভাবে গড়ে তুলেছে !
ব্যাশ, চারিদিকে ঘিরে ফেললো সেই ছেলেটিকে এক ভয়াবহ গ্ৰহন।
সে দমবন্ধ হয়ে কঁকিয়ে উঠতে লাগলো।
তবু হাজার বিপক্ষের মাঝে,তার হয়ে পক্ষবাদিত্য করার কাউকে পাশে পেলোনা।
হয়তো তার প্রচুর জেদ ছিলো, সে পারতোও।
কিন্তু প্রতিনিয়ত অশান্তির কুঁড়ে কুঁড়ে খাওয়া গ্ৰাস থেকে বাঁচতে সে মতের বিরুদ্ধে যেতে বাধ্য হয়েছিলো। হার মানলো জেদের কাছে।
স্বপ্ন পূরণও স্থগিত রয়ে গেলো তার।
(ছবি- সংগৃহীত)
হতেও তো পারতো,সে বাংলা ভালোবাসতো,কিংবা ইতিহাস…
না, অঙ্ক, বিজ্ঞান, কেমিস্ট্রি কিংবা ডাক্তারী পড়ার মোটা মোটা বইয়ের বোঝা তাকে তখন ঘিরে ফেলেছে।
সে হয়তো ভালো গান গাইতো, কিংবা আঁকা…
ক্রিকেট খেলা এবং আবৃত্তিতেও হয়তো পারদর্শী ছিল।
উচ্চমাধ্যমিক-এর পর সে হয়তো গান নিয়ে পড়বে ভেবেছিলো,
কিংবা সে নাচ করতে চেয়েছিলো।
মা বললো-ওতে কোনো ভবিষ্যৎ নেই, পড়াশোনার মতো,কোনো জিনিস নেই ।
ছোটোতে নেচেছো, ভালো হয়েছে, তা বলে এত বড়ো ছেলে হয়ে আবার কেউ নাচে নাকি? ওসব মেয়েদের ই ভালো লাগে।
সময়ের অভাবে বন্ধ হয়ে যায়, তার শখের জিনিস।
পড়াশোনার বোঝায় সে নুইয়ে পড়েছে হয়তো,
কিংবা বারংবার ফেল করতে করতে সে হয়তো ডিপ্রেশন এ চলে গেছে।
হতাশা ও চাপে সে হয়তো ভুলে গেছে খেতে-পড়তে।
বাইরের জগতটা সে হয়তো লজ্জায় কতদিন দেখেনি,
কতদিন বন্ধুদের সাথে মাঠে খেলতেও হয়তো আর আসেনা।
যে ছেলেটা বাংলায় নব্বই এর ঘরে নম্বর পেতো, সে আজ অঙ্কে কোনোরকমে পাস।
এইজন্য ই হয়তো শিক্ষার হার এবং উন্নতির মাত্রা পিছিয়ে পড়েছে।
এভাবেই রোজ কত কত মানুষের স্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে তিলে তিলে সামান্য কিছু মানুষের অজ্ঞতার কারনে।
(ছবি- সংগৃহীত)
আচ্ছা বলতে পারো এভাবে বোঝা চাপিয়ে কি লাভ হয়?
কেন সে গান নিয়ে এগোতে পারবেনা?
খেলা নিয়ে কেনো সে এগোতে পারবেনা?
শুধু কি পড়াশোনা করেই এগোনো যায়?
একটা ছেলে ভালো রেজাল্ট করলে কেন তাকে সায়েন্স-ই নিতে হবে?
আর্টস নিলে কেমন করে তার সম্মান চলে যায়?
বলতে পারো আর্টসে ভবিষ্যত নেই বলে অজথা তুচ্ছ করা হয় কেনো?
সায়েন্স নিয়ে অনেক লাইন হয়তো আছে, কিন্তু যে টানতে পারবেনা সেই বোঝা, তাকে কেন জোড় করে চাপিয়ে দিয়ে পিষে মারা হয় প্রত্যেকটা মুহূর্তে?
কেন জিততে থাকা ছেলেটাকে হারিয়ে দেওয়া হয়?
একজন ভালো ছেলেকে বা মেয়েকে বোঝা চাপিয়ে যখন সে ফেল করতে করতে কমায় চলে যায়, কিংবা তার আর বাঁচার আশাটাই হয়তো থাকে না…
সেই ছেলেটা বা মেয়েটা হাসপাতালের বেডে শুয়ে যদি প্রশ্ন করে সেই সব লোকেদের উদ্দেশ্যে, যারা একজন ভালো ছেলে বা মেয়ের ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে নানারকম বোঝা চাপিয়ে…
তাদের এই পরিস্থিতির জন্য আজ কারা দায়ী? কোনো উত্তর আছে তাদের কাছে?
তারা কি বলতে পারবে যে কোন উন্নতি টা এই হেরে যাওয়া ছেলে-মেয়েদের হলো?
এই অবনতি নামক উন্নতি টার কাছে কি জবাব দেবে তারা?
যে কাছের মানুষেরাও তাদের ছেলে-মেয়েদের ভালোবাসার বিষয় কে গ্ৰহন করতে দেয়না,
বলতে পারো, তোমরা কি জবাব দেবে?
যারা প্রতিনিয়ত হারতে থাকে, তাদের তুলে দেবার মতো পাশে কেউ থাকেনা।
আর যারা জিতে যায়, তারা এভাবেই হারতে থাকে।