“স্বাদে আর আহ্লাদে”

॥ স্বাদে আর আহ্লাদে ॥

বাঙালি যে খাদ্যরসিক এ নিয়ে কারোরই সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই; অগত্যা ‘এসো বসো আহারে’ কথাটা একজন খাঁটি বাঙালির জন্য যথার্থরূপেই প্রযোজ্য।
মহানগরী কলকাতার রাস্তায় হরেকরকম খাদ্যসম্ভারের কোনো অভাব নেই। সস্তা-দামী, টুকটাক খাবার থেকে শুরু করে পেট ভরানোর মতো সমস্ত উপকরণই মজুত এখানে। বিশেষত একজন পেটুক বাঙালির পক্ষে নিতান্তই উপাদেয় সব খাদ্যদ্রব্যের অশেষ সম্ভার খুলে বসে থাকে নানা বিক্রেতারা।

বিশেষত রান্না-বান্না করার ঝোঁক কোনোকালেই না থাকায় এসমস্ত লোভনীয় খাদ্যসামগ্রীর প্রতি আকর্ষণ আমার বরাবরই। তাই একজন পেটুক বাঙালি হিসেবে আমার এই তিলোত্তমা কলকাতার বিভিন্ন জায়গার নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ বিশেষ খাবারের খোঁজ খবর রাখা আমার কর্তব্য।

এই যেমন ধরুন রবীন্দ্রসরোবর চত্বর, আশা করি এই জায়গায় সকলেই কখনো না কখনো গেছেন, কিন্তু রবীন্দ্রসরোবর মেট্রো স্টেশনের ৬ নং গেটের ঠিক সামনে যে বিশেষ উপাদেয় এবং সুস্বাদু চকোলেট চায়ের ঠিকানা মেলে তা কি জানেন?ছোটো-বড়-মাঝারি মাপের চায়ের দোকানের সংখ্যা কলকাতার রাস্তায় কিছু কম নেই। তবু একটু ভিন্ন স্বাদের চকোলেটের আস্বাদ যুক্ত ‘চকোলেট চা’ হাতছাড়া করার অর্থ নিছকই খাদ্যরসিক বাঙালির অপমান। রবীন্দ্রসরোবর চত্বরের তৃপ্তি নামক এই ছোট্ট দোকানটিতে চকোলেট চা ছাড়াও চকোলেট কফি, মালাই চা, তুলসী চা এবং আরও বিবিধ চায়ের খোঁজ মেলে।

এবার পানীয় ছেড়ে একটু সস্তায় লোভনীয় এবং মুখরোচক জলখাবারের কথায় আসা যাক। ধর্মতলা-নিউ মার্কেট চত্বর সংলগ্ন একটি এলাকা ডেকার্স লেন নামে খ্যাত। এখানে হরেকরকম ভিন্ন স্বাদের জলখাবারের খোঁজ পেতে পারেন। এই অঞ্চলের বহু পুরনো এবং লোকমুখে খ্যাত
‘চিত্তদার দোকান’। এই দোকানের বিখ্যাত ‘পাউরুটি আর ঘুগনির’ টানে দিনভর দোকান সরগরম থাকে। এছাড়াও এই অঞ্চলে কমখরচে চাউমিন, এগরোল, ফ্রায়েড রাইস এধরনের বিবিধ চটজলদি খাদ্যের সন্ধান পাওয়া যায়।

মিষ্টান্ন দ্রব্যের নাম শুনলেই কি আপনার জিভে জল আসে? তবে কলকাতার বিখ্যাত মিষ্টান্ন ভাণ্ডার ভীমনাগের দোকানের ‘মিষ্টি দই’ চেখে দেখতেই পারেন। এ এক অতুলনীয় স্বাদ।

এতক্ষণ টুকটাক চটজলদি কিছু খাবারের কথা বলছিলাম। এবার একটু কবজি ডুবিয়ে খাওয়া যাক! কলকাতার একটি অতি পরিচিত ব্যস্ত জনবহুল এলাকা শ্যামবাজার পাঁচমাথার মোড়। ঠিক মোড়েই “গোলবাড়ির লোভনীয় কষা মাংসের” কথা অনেকেই জানেন আশা করি! রসনার তৃপ্তি মেলানোয় এখানকার কষা মাংসের জুড়ি
মেলা দায়! কলকাতার বাসিন্দা হয়েই গোলবাড়ির কষা মাংস না খাওয়ার অর্থ সত্যি দুর্ভাগ্য। তাই যারা এখনও যাননি, ঘরে বসে জল্পনা না করে চটজলদি আস্বাদ মিটিয়ে নিন কারণ প্রকৃত অর্থেই ‘এ স্বাদের ভাগ হবে না’।

কলকাতার অপর এক প্রান্তে শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী রোডে বলবন্ত সিং-এর খাবারের দোকানের দুধ কোলা এবং দুধ ফান্টা স্বাদ করে রোজকার খাবারের মধ্যে থেকে একটু নতুনত্বের খোঁজ পেতে পারেন।

এবার আসছি কলকাতার একটি নিজস্ব বিশেষ রকমের খাদ্য “কাঠি রোল” নিয়ে।

এগরোল, চিকেন রোল, মাটন রোল, পনীর রোল সবার মুখে হরদম শোনো এবং কিছুটা একঘেয়েও বটে। তবে আমি হলপ করে বলতে পারি যে এই কাঠি রোলের স্বাদ গ্রহণ থেকে এখনও বহুুল পরিমাণে কলকাতাবাসী বঞ্চিত কারণ তারা হয়তো এই বিশেষ খাবারটির সঙ্গে পরিচিত নন।
তাই আজই চটজলদি পার্কস্ট্রীট, নিউ মার্কেট, কলেজ স্ট্রিট প্রমুখ নানান এলাকার বিভিন্ন দোকানের কাঠি রোলের সাথে
আলাপটা সেরেই ফেলুন!

বাঙালির খাদ্যরসের পরিতৃপ্তি মেটানোর উপকরণ স্বরূপ আজ বেশ কিছু টুকটাক স্বল্প খরচে রসনীয় খাদ্যদ্রব্যের সন্ধান দিয়ে গেলাম। তাই রসে-কষে সমস্ত রকম স্বাদ উপভোগ করে বাঙালি জীবন সার্থক করে তুলতে মোটেই দ্বিধা করবেন না।।

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *