প্রতি সপ্তাহে হেঁশেলের খবর আর খাদ্য অন্বেষণের মাধ্যমে আপনারা পৌঁছে যান হয় আমাদের হেঁশেলে, নয়তো বা শহরের কোনো নামী রেস্তোরাঁয়। তবে শুধু খেলে কি চলবে? ভালো খাবারের সন্ধানের পাশাপাশি আমাদের জেনে নিতে হবে যে আমাদের রোজনামচার জগতে ঠিক কী খাওয়া উচিৎ, কতটা খাওয়া উচিৎ, কিংবা কোনটা বাদ দেওয়া প্রয়োজন রোজের খাদ্য তালিকা থেকে। তাহলে আসুন জেনে নেওয়া যাক “কী খাব আর কী খাব না”।
১. আমরা সবাই ছোটো থেকেই বাড়িতে মায়েদের মুখে পেঁপের নানা গুনাগুন শুনে এসেছি। লিভারের জন্য পেঁপে অপরিহার্য সেটাও অজানা নয়। তবে আজ নতুন যেটা জানার তা হল পেঁপের মধ্যে, বিশেষত কাঁচা পেঁপেতে থাকে প্যাপাইন নামক উৎসেচক, যা খাবার হজমে সাহায্য করে। কিন্তু সেই পেঁপে আমরা নিয়মিত খেতে থাকলে বা প্রয়োজনের বেশি খেলে প্যাপাইন আমাদের পাকস্থলী থেকে বের হওয়া পাচক উৎসেচকের ক্রিয়া বিনষ্ট করে এবং তার ফলস্বরূপ পাকস্থলীর নিজস্ব হজম শক্তি বিনষ্ট হয় এবং সামান্য বেশি তেল-মশলা সহ খাবার-ও হজমে অক্ষম হয়ে পড়ে। তাই পেঁপে খান তবে যতটা শরীরের প্রয়োজন পথ্য হিসাবে ঠিক ততটা-ই।
২. পেঁপের পরে এবার আসা যাক আরেক ঘরোয়া পথ্যে, যেটা হল কাঁচকলা। পেটের কোনোপ্রকার সমস্যা মানেই ছোটো থেকে জেনে এসেছি “কাঁচকলা দিয়ে চারামাছের ঝোল” খেলে তবেই সেরে যাবে। তবে এই কাঁচকলা অতিরিক্ত খাওয়ার ফলে কিন্তু দেখা দিতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য। কারণ কাঁচকলায় থাকে অতিরিক্ত পরিমাণে শ্বেতসার, যে শ্বেতসার আমাদের শরীর হজম করতে পারে না।
৩. বড়োরা সাধারণত বলে থাকেন আপেল বা নাসপাতি জাতীয় ফল খোসা না ছাড়িয়ে খেতে কারণ ফলে উপস্থিত ভিটামিনের সিংহভাগ থাকে খোসার ঠিক নীচের অংশে। তবে বর্তমানে কোনো অবস্থাতেই কোনো ফল খোসা সমেত খাওয়া উচিৎ না কারণ ফল অনেকদিন টাটকা দেখানোর উদ্দেশ্যে ফলের উপর মোমের আস্তরণ ব্যবহার করা হচ্ছে এবং সেই সুদৃশ্য ফল খোসা সমেত খাওয়ার ফলে একাধিক রোগের সম্ভাবনা প্রবল হয়ে যায়।
৪. সব্জি আর ফলের পর এবার আসা যাক তেলে। সরষের তেল মানেই হবে ঝাঁঝালো গন্ধ, আর সেই গন্ধই নাকি বলে দেবে সেটা কতটা খাঁটি নাকি একেবারেই ভেজাল। কিন্তু ওই যে সরষের ভিতরেই লুকিয়ে থাকে ভূত। সরষের তেলের রঙ গাঢ় করতে তা জ্বাল দিয়ে পোড়ানো হচ্ছে এবং ঝাঁঝালো গন্ধের জন্য মেশানো হচ্ছে Alkyl isothiocyanate নামক বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ, যার ক্রমাগত সেবনে ক্যান্সার অবধারিত। তাই এবার থেকে সরষের তেলের গাঢ় রঙ দেখে আর ঝাঁঝালো গন্ধে চোখে জল চলে এলেও সেই তেল “নৈব নৈব চ”।
৫. চাইনিজ খাবার পেলে আমরা সবাই খুশি মনে চেটে-পুটে খেয়ে ফেলি। কিন্তু এই চাইনিজ খাবারের স্বাদবৃদ্ধিকারক হিসাবে ব্যবহার করা হয় মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট যাকে ছোটো করে বলা হয় MSG এবং যার বাজারে চলতি নাম “আজিনামোটো”। শুধু চিনে খাবার নয় প্যাকেটজাত যে কোনো খাবার, যেমন- ইন্সট্যান্ট নুডলস, স্যুপ অথবা মেয়োনিজেও থাকে এই MSG। এই MSG আমাদের স্নায়ুকোষগুলিকে উদ্দীপিত করে, অগ্ন্যাশয়কে উদ্দীপিত করে ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়, ফলে দেহে শর্করার মাত্রা বিঘ্নিত হয়। এছাড়াও এটি চোখের রেটিনার ক্ষতি করে এবং এর ক্রমাগত ব্যবহার আসক্তি সৃষ্টি করে।
৬. আমাদের রোজের রান্নার উপাদানগুলির মধ্যে একটা প্রচলিত উপাদান হল গুঁড়ো হলুদ। কিন্তু আজকাল গুঁড়ো হলুদে মেশানো হচ্ছে “Metanil Yellow” নামক রঙ, যা কেশরী রঙ নামে বাজারে পাওয়া যায়, যা একেবারেই খাদ্যপযোগী নয়। শুধু গুঁড়ো হলুদেই নয় এই রঙ মেশানো হচ্ছে দোকানের বিরিয়ানি, লাড্ডু আর বাজারে বিক্রি হওয়া চানাচুর বা ভুজিয়াতে। এই রাসায়নিক ক্রমাগত শরীরে প্রবেশ করলে ক্ষুধামান্দ্য, বমি ভাব, উদরাময় বা ডায়রিয়া প্রভৃতি হতে পারে। শুধু তাই নয়, এই রাসায়নিক ক্রমাগত দেহে প্রবেশ করে জমা হতে থাকে পাকস্থলীর অন্তঃগাত্রে এবং সেটি সৃষ্টি করে আলসার, লিভার সিরোসিস প্রভৃতি রোগ এবং যার অন্তিম পরিণতি হয় ক্যান্সার।
৭. আমাদের হজমের সমস্যা হলে বা পাকস্থলীর অম্লতা বেড়ে গেলে আমরা সাধারণত কোল্ড ড্রিংক বা ফ্রুট সল্ট খেয়ে থাকি। এইগুলিতে থাকে সোডিয়াম বাইকার্বনেট লবন যা পাকস্থলীতে উৎপন্ন অতিরিক্ত অ্যাসিডকে প্রশমন করে। কিন্তু প্রশমনের পরেও যে অতিরিক্ত লবন থেকে যায় তা পাকস্থলীতে ক্রমাগত জমা হতে থাকলে পাকস্থলীতে গভীর ক্ষত সৃষ্টি হয়ে আলসারে পরিণত হয়।
তাহলে জানা হয়ে গেল কী খাওয়া উচিৎ আর কী নয়। মায়েদের-ও এবার সচেতন হওয়া উচিৎ আর আমাদের নিজেদের ক্ষেত্রেও আরও সচেতনতা বাড়ানো উচিৎ। সঙ্গে থাকুন LaughaLaughi-র, আবারও ফিরব আপনাদের কাছে খাবার সংক্রান্ত অজানা তথ্যের সন্ধান দিতে।