ভোজন রসিক বাঙালির কি পুজো, আর কি বা সাধারণ দিন। রসনা তৃপ্তিই অনেক বাঙালির জীবনের প্রথম এবং একমাত্র উদ্দেশ্য। আর বাঙালি প্রিয় হাজারটা পদের মধ্যে একটি অন্যতম প্রিয় পদ হল, চিংড়ি মাছের মাথা বাটা।
ইলিশ ও চিংড়ির ঠান্ডা লড়াই এ যেই জিতক না কেনো, বাঙালি বনেদী বাড়ির সুস্বাদু খাবারের তালিকা এই পদের নাম।
তবে বর্তমানে এ উপাদেয় পদ হারিয়ে যাচ্ছে বাঙালির খাদ্য তালিকা থেকে। এটা অবশ্য বিশ্বায়নের কুফলই বলা যেতে পারে। নানারকম ফাস্টফুডের দাপটে বাঙালি হারিয়ে ফেলছে জিভে জল আনা একান্ত নিজস্ব রেসিপি চিংড়ি মাছের মাথা ব্যাথা তাদের মধ্যে একটি।
বিশ্বায়নের যুগে বাঁটা-ছেঁচা বেশি কেউছবি কেউ পছন্দ করেনা। তাই সবার প্রিয় সুস্বাদু রান্না তাই জায়গা হারিয়ে আজ অতীতের পাতায়।
এই রেসিপিটি রান্না করার জন্য কুঁচো চিংড়ি বা গলদা চিংড়ি যে কোন মাছের মাথাই আপনারা নিতে পারেন। গলদা চিংড়ি হলে প্রায় দশটা চিংড়ি মাছের মাথা, আর কুচো চিংড়ি হলে প্রায় দুইশো গ্রাম মাথা নিলেই যথেষ্ট চারজনের জন্য।
প্রথমে মাথাগুলোকে ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে জল দিয়ে। তারপর লবণ হলুদ মাখিয়ে কিছুক্ষণের জন্য ম্যারিনেট করে রেখে দিতে হবে।
এরপর চিংড়ির মাথা বাটা করার জন্য, তিনটে মত মাঝারি আকারের পেঁয়াজ ও চারটে লঙ্কা তিন কোয়া রসুন এবং এক কর আন্দাজে আদা একসাথে বেটে নিতে হবে। তারপর সাদা জিরা আর শুকনো লঙ্কা, তেল ছাড়া কড়াইয়ে ভেজে, ভালো করে বেটে নিতে হবে।
রান্নাটা হবে সম্পূর্ণ সরিষার তেলে। গরম হওয়া কড়াইয়ে প্রথমে টু টেবিল স্পুন তেল দিয়ে তাতে কালো জিরা ফোড়ন দিতে হবে।এবার তাতে আগে থেকে বেটে রাখা পেঁয়াজ আদা রসুন ও কাঁচা লঙ্কা বাটা দিয়ে তৈরী করা পেস্টটি দিয়ে দিতে হবে।তারপর সেটাকেভাল করে ভেজে নিতে হবে।
এরপর দিতে হবে জিরা বাটা ও শুকনো লঙ্কা বাটা। সব মসলাগুলো ভালো করে কষিয়ে নেওয়ার পর তাতে, আগে থেকে ম্যারিনেট করে রাখা চিংড়ি মাছের মাথাগুলো দিয়ে দিতে হবে। তারপর সমস্ত গুলোকে একসাথে ভেজে নিতে হবে ভালো করে।
ভাজা হয়ে গেলে স্বাদমতো চিনি ,নুন ও হলুদ দিয়ে আমার নাড়াচাড়া করে নিন। পুরানাটাই হবে গ্যাস থাকে সিম করে। কোনভাবেই গ্যাসের আঁচ বারানো চলবে না।ভাজাটা সম্পূর্ণ হয়ে গেলে যখন তার থেকে তেল ছাড়বে তখন নামিয়ে নিয়ে, শিলপাটাতে ভালো করে বেঁটে নিতে হবে।
এ ক্ষেত্রে অনেকেই মিক্সের ব্যবহার করতে পারেন সুবিধে হল। তবে আমার মতে শীলপাটায় বাটলে স্বাদটি একটু বেশি পাওয়া যায়।
এরপর কড়াইয়ে আবার একটু সরিষার তেল দিতে হবে। তেলটা গরম হয়ে গেলে তাতে দিয়ে দিতে হবে আগে থেকেই বাটা চিংড়ি মাছের মাথাগুলো। তারপর আবার ধীর আঁচে অনেকটা সময় ধরে ভেজে নিতে হবে বাটাটা। এবং সেটাকে ততক্ষণ ভাঁজতে হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত তার মধ্যেকার সমস্ত জল শুকিয়ে না যায়।
সবশেষে ধনেপাতা কুচি ছড়িয়ে নামিয়ে নিতে হবে কড়াই থেকে। তাহারলেই তৈরি হয়ে যাবে, চিংড়ির মাথা বাটা নামক এই সুস্বাদু রেসিপটি। দুপুরবেলায় গরম ভাতের সাথে অল্প ঘি আর চিংড়ি মাছের মাথা বাটা দিয়ে কাউকে খেতে দিলে, জিভের জল আর বাদ মানবে না,একথা বলে দেওয়া যেতেই পারে।
উপকরণ
- ১ + ১/২ কাপ বাগদা চিংড়ির মাথা
- শুকনো লঙ্কা ৩ – ৪ টি
- কাঁচা লঙ্কা ৪ টি
- কালো জিরে ১ + ১/2 টেবিল চামচ
- রসুন ১/৩ কাপ
- ১/২ কাপ বেরেস্তা বা ভাজা পেঁয়াজ
- নুন স্বাদ মতো
- হলুদ ১/২ চা চামচ
- সর্ষে তেল ২ + ১/২ টেবিল চামচ
- পেঁয়াজকুচি তিনটে
- আদা বাটা
নির্দেশাবলী
- মাথা নুন হলুদ দিয়ে মেখে কড়াইয়ে ২ টেবিল চামচ তেল গরম করে ভেজে তুলে নিন ।
- সব উপকরণ ওই মাথা ভাজার কড়াইয়ে থেকে যাওয়া অল্প তেলেই ভেজে নিন ।
- এবার এই সমস্ত উপকরনকে শিল নোরা দিয়ে ভালো করে বেঁটে নিতে হবে ।
- এবারে এই বাটাতে স্বাদ মতো নুন দিয়ে কড়াইয়ে ১/২ টেবিল চামচ তেল গরম করে অল্প নাড়াচাড়া করে নামিয়ে ওপরের ধনেপাতা ছড়িয়ে দিন। এরপর গরম ভাতের সাথে পরিবেশন করুন ।
বাটা বাঙালির সর্বকালীন প্রিয় একটি পদ । সে যে কোনো বাটাই হোক না কেন । গরম ভাতের সাথে একটু বাটা মেখে খেতে খুবই ভালো লাগে । এরকমই একটি সুস্বাদু বাটা হলো চিংড়ি মাছের মাথা দিয়ে বাটা । বাংলাদেশের এটি চিংড়ি মাছের মাথার ভর্তা নামে বিখ্যাত। বাংলাদেশ ভারতবর্ষ ছাড়া এই রেসিপিটি আর কোথাও সেভাবে ভাবা যায় না। তবে সঠিক স্বাদ পেতে এসিপি অনুযায়ী রান্না করে দেখতেই হবে চিংড়ি মাছের মাথা বাটা।