২৬৩ বছর আগের কথা। ২৩জুনেই পলাশির প্রান্তর যেমন সাক্ষী ছিল ক্লাইভ, মীরজাফর, রায়দুর্লভদের ষড়যন্ত্রও বিষ্শ্বাসঘাতকতার।তেমন একই সাথে মীরমর্দন, মোহনলাল ও মহম্মদ কাজিমের বিশ্বস্ততা,বীরত্বর। এবং সর্বোপরি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজ ও তার বিভ্রান্তিকর অবস্থার।
পাপ কেন আমার ভূমিতে, অভিযোগী পলাশি।
হীরাঝিল প্রহর গোনে,খোশবাগও নিথর।
আমরা স্বাধীনতার রথ টানি, পরাজয় বানভাসি।
ক্লাইভের খিল্লি ভুল এবং দোষী হয় সিরাজ।
ঘড়ির কাঁটা তখনও তিনের ঘরে পৌঁছায়নি। কোম্পানির সৈন্য পর্যুদস্ত। ক্লাইভ প্রায় সিদ্ধান্ত নিয়েই ফেলেছিল রাতে কলকাতা পালানোর। হঠাৎ গোলা আঘাত হানলো মীরমর্দনের ওপর। মৃত্যু ঘনিয়ে আসার সাথে সাথেই ইতিহাসও নতুন মোড় নিলো। সময় ও সুযোগ দুই-ই প্রশ্রয় দিলো ষড়যন্ত্র ও বিশ্বাসঘাতকতাকে। মীরজাফর যুদ্ধ বিরতি ঘোষণা করতে বললো। ভুল করে নবাবি সেনা পেছন ফিরতেই ইংরেজ সৈন্যরা ঝাঁপিয়ে পড়লো। বাংলা বিজয়ের মাধ্যমে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভিত্তিস্থাপন হলো।
এসব অধিকাংশের কাছে মনে রাখা নিষ্প্রয়োজন ঘটনা মাত্র। বরং তারা মনে রাখেন যে সিরাজ দুশ্চরিত্র ও লম্পট ছিল। এবং প্রজারা বীতশ্রদ্ধ হয়ে পড়েছিল।তাই পলাশির পরাজয়। এই ভেবেই খুশিও হন অনেকে। অনেকটা, “ঘুঁটে পোড়ে গোবর হাসে”র মতো ব্যাপার। নবাব হওয়ার পরেও কি সিরাজ আগের চরিত্রেই বিচরণ করেছিলেন?
না,তাকে মহান প্রতিষ্ঠিত করাও আমার অভিপ্রায় নয়। পলাশি চক্রান্ত এবং বাংলা পরাজয়-এসমস্ত খতিয়ে দেখার জন্যে ফেলে আসা জীবনযাপন,সিরাজ চরিত্র ঘাঁটার কি কোনো যুক্তি আছে?
জাঁ ল’, লিউক সক্রাফটনের লেখা পড়লেই জানা যায়। নবাব হওয়ার আগে ও পরের সিরাজের চরিত্রে আশমান জমিন ফারাক।
ছা পোষা মানুষের চোখে দেখলেও এটা বোঝা যায়। সিরাজ যদি সুশাসক ও দেশপ্রেমিক না হতেন, তাহলে বাংলা বাঁচানোর জন্যে পলাশির মাঠে মীরজাফরের পা ধরতেন না। আলিনগরের সন্ধি করতো না। ইংরেজদের কুঠিতে গিয়ে সুরা পান করা ভুল ভাবতেন না।
পলাশির চক্রান্তের মূল নায়ক কে?
– বলবেন,বিশ্বাসঘাতক মীরজাফর। প্রমাণ ও সাক্ষ্য অনুযায়ী সম্পূর্ণ পরিকল্পনা ক্লাইভের। অনেকে মানতেই চাননা যে,মুর্শিদাবাদের স্বার্থান্বেষীরা ইংরেজদের দাবার ঘুঁটি মাত্র। কোম্পানির মনোনীত প্রার্থী ছিলেন ইয়ার লতিফ খান। কিন্তু জগৎশেঠ দের প্ররোচনাতেই মীরজাফরকে নবাব আসনে বসানোর সিদ্ধান্ত নেয়।
পলাশি চক্রান্ত কেন?
আসল কারণ কোম্পানির কর্মচারীদের ব্যক্তিগত ব্যবসা বাণিজ্যের শ্রীবৃদ্ধি ঘটানো। তাতে বাধাপ্রদানকারী সিরাজ সরানো। এর জন্যে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল তারা। এদিকে আলীবর্দীর মৃত্যুর পর মসনদের দাবিদার হন তিনজন। সিরাজ,এক্রামুদুল্লা এবং শওকত জং। তাদের পিছনে থাকে সুবিধাবাদী বড়ো বড়ো মাথা (যেমন:এক্রামদুল্লার পক্ষে ঘসেটি বেগমের)। স্রেফ স্বার্থসিদ্ধি ও ক্ষমতার অধিকার।
আলিবর্দীর প্রিয় উত্তরাধিকারী সিরাজকে নবাব মানতে অনেকেই নারাজ ছিলেন। এই শত্রুতার চরম সুযোগ নিয়েছিল পলাশির চক্রান্তের মূল নায়ক ক্লাইভ।
সম্পূর্ণ পরিকল্পনা ছিল কোম্পানি তথা ক্লাইভের। প্রমাণস্বরূপ একটা ঘটনা বলায় যায়। পলাশির যুদ্ধের পর মীরজাফরের বার্তা, “আপনার পরিকল্পনা সফল হওয়ার অভিনন্দন গ্রহণ করুন”পেয়েছিলেন ক্লাইভ।
সম্ভবত ২৮জুন। সিরাজের ছিন্নভিন্ন দেহ হাতির পিঠে চড়িয়ে মুর্শিদাবাদ ঘোরানো হয়। কি মর্মান্তিক দৃশ্য!
এই বর্বরতা দেখেও হয়তো সেদিন দেশবাসী আঁচ করতে পারেননি। ভুল গুনবে মাশুল। শুরু হবে ২০০বছরের ইংরেজ শাসনের কালো অধ্যায়।