নমস্কার।
ম্যাম, আপনাকে স্বাগত জানাই লাফালাফি-র তরফ থেকে। আপনার এই অতি মূল্যবান সময়ের থেকে কিছুটা সময় লাফালাফিকে দেওয়ার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ ।
▶প্রথমেই বলব ছোটবেলা থেকে আপনার লেখালেখির শখ, তো লেখালেখির পিছনে কোনো অনুপ্রেরণা আছে কি?
পড়ার বই ছাড়া সবকিছুই পড়তাম। ছোটবেলায় তিন জন প্রিয় লেখক ছিলেন যাদের নাম না বললে হয় না— সুকুমার রায়, শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায়। যাদের লেখা খুব প্রভাবিত করেছিলো। এবং সেই সময়ে আমার দু’জন স্যার ছিলেন যারা বোঝাতেন যে তুমি লিখতে পারো। তারা একটি ম্যাগাজিনেও লিখতে বলে তখন থেকেই প্রায় শুরু।
▶আপনার তো সেভেন থেকেই লেখা শুরু, আপনার প্রথম গল্প বোধ করি ‘চশমা’, শনিবাসরীয়তে প্রথম নিজের লেখা দেখে প্রথম কেমন লেগেছিল?
না সেরকম কিছুই মনে হয় নি, কারণ তখনও অতটা বুঝতাম না, তবে আমার বাড়ির লোকের খুব আনন্দ হয়েছিল। আসলে তখনও ভাবিনি লেখিকা হবো।
▶ তারপর যখন লেখিকা হলেন, স্বপ্নটা সত্যি হলো। তখন অনুভূতিটা কেমন ছিলো?
এদিক থেকে বলতে গেলে আমি খুব ভাগ্যবান, কারণ অনেকেরই স্বপ্ন থাকে অনেক কিছু হবার কিন্তু হতে পারে না, আর আমি খুব ঠাকুর বিশ্বাসী, আর যা কিছু হতে পেরেছি পুরোটাই আমার বাড়ির লোকের জন্য। কারণ মেয়ে ইঞ্জিনিয়ার না হয়ে সাহিত্যিক হবে ভাবা যায় না। যদিও এখনও অনেকটা পথ বাকি। সেরকম ভাবে বলতে গেলে আমি তুচ্ছই।
▶আপনার সৃষ্টি ‘অধিরাজ’ ৮ থেকে ৮০ সকলের খুব প্রিয় চরিত্র। হঠাৎ এরকম একটা গোয়েন্দা চরিত্র তৈরি করার ইচ্ছে হলো কেন?
যখন লেখালেখি করছিলাম, তখন আমার স্যার রাজেন্দ্রনাথ মণ্ডল আমাকে বলেছিলেন, তুই ছোট গল্প লিখছিস ভালো কথা, কিন্তু যে উপন্যাস না লিখতে পারলে কোনো গল্প পূর্ণতা পায় না। সেই প্রসঙ্গে বলেছিলেন তুই গোয়েন্দা গল্প লিখতে পারবি। এটা হচ্ছে একটা অঙ্কের মত। আর থ্রিলার লিখতে গেলে স্টেপে স্টেপে মেলাতে হয়। এটা না পারলে ঔপন্যাসিক হওয়া যায় না। তখনই আমি অধিরাজ’ চরিত্রটা সৃষ্টি ‘করি। আর যার কাজ হবে কেস সমাধান করা। আর তখন সদ্য ‘সি আই ডি’ বেরিয়েছে। আসলে অধিরাজ বাস্তব চরিত্র। এবং আমার পরিচিত একজনের আচার-ব্যবহার এবং টাকটি দেখে মিস্টার চ্যাটার্জীর চরিত্রটি তৈরি করি। (হেসে) এবার সেটা প্রথমে ‘সাহানা’ নামে একটা পত্রিকায় প্রকাশিত হতো। তারপর আস্তে আস্তে বই প্রকাশ।
▶অত কম বয়সে যখন প্রথম বই প্রকাশ করেছিলেন তখন কোনো বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল নাকি অনায়াসে?
প্রথম আনন্দলোক-এ উপন্যাস বেরিয়েছিল, তার আগে আমাকে প্রায়
৪ বছর ধরে চেষ্টা চালাতে হয়েছে, আমার প্রথম উপন্যাস নিয়ে যখন গেছি কেউ প্রথম পড়েও দেখেননি, বলেছেন, “বয়স কত” বলেছি ২১, বলে “৪১ হওয়ার পর এসো, তোমার কি অভিজ্ঞতা”! কেউ বললেন নতুন লেখকের লেখা আমরা ছাপি না। মেয়ে হওয়ার দরুন এবং কম বয়সের দরুন অনেকটা অপমান সহ্য করতে হয়েছে, অনেকেই ভাবেন বয়স না হলে গল্প লেখা যায় না। তারপর ২o১o সালে জমা দিই আনন্দধারা, সেটাই ছিল আমার turning point।
▶আপনার শঙ্খচিল গল্পটি সিনেমা হিসেবে অভিযোজিত হয়েছে। এরপর কি কোনো গল্প আছে যেটা সিনেমা হিসাবে দেখতে পাবো?
আছে, নেই নয়। তবে সেগুলো যেহেতু তৈরি হচ্ছে তো সেটা বলা যাবে না, কিছুদিন এর মধ্যেই ‘গরল’ নামে একটি গল্প নিয়ে শর্ট ফিল্ম বেরোতে চলেছে।
▶ভবিষ্যতে ছোটো গল্প বা উপন্যাস ছাড়া অন্য কোনো ধরণের কিছু লেখার ইচ্ছে আছে?
সেইরকম ভাবে কিছু ভাবিনি, কিছু জিনিস সামনে আনার চেষ্টা করছি, আমাদের ভারতে এমন কিছু জিনিস আছে যা অনেকেই জানে না সেগুলো সামনে আনার চেষ্টা করছি লেখার মধ্যে দিয়ে, আর আমার একটা উপন্যাস আছে ‘অসভ্য চোখ’ নামে যেই সিরিজটা চালিয়ে যাওয়ার ইচ্ছে আছে।
▶এখন নতুন প্রজন্ম বই পড়া ছেড়ে মোবাইলের দিকে নজর দিচ্ছে সেই সময় দাঁড়িয়ে একজন লেখিকা হিসাবে আপনি কি বলতে চান?
এখানে নতুন প্রজন্মকে আমরা দোষ দিতে পারি না। তারা আসলে হাতের কাছে অনেক কিছু পেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু কথাটা হচ্ছে নিশ্চয়ই মোবাইলে কিছু আকর্ষণীয় পাচ্ছে। আমরা যে বিনোদনটা তাদের দিতে পারছি না। আমরা তাদের ঘাড় ধরে গল্পটা পড়াতে পারছি না।
▶এরপর আপনার কি উপন্যাস আসতে চলেছে?
হ্যাঁ, এবছর আমি অনেক লিখেছি, আপাতত প্রকাশকের নামটা বলবো না তবে মহিলাদের একটি adult গল্প, আর যেটা আসছে হিউম্যান গিনিপিগ নিয়ে একটা গল্প আসতে চলেছে।
▶আপনার পাঠকদের জন্য কোনো বক্তব্য আছে?
কি আর বলবো পাঠকদের (হেসে) তবে পাঠকরা যেন নীরব না থাকে। পাঠকের মাধ্যমেই একটা গল্প আস্তে আস্তে ছড়াবে।
▶ম্যাম, লাফালাফি’র পুরো টিম কিছু শুনতে চায় আপনার তরফ থেকে লাফালাফির ব্যাপারে। যদি কিছু বলেন?
কোনো কিছুর শুরু খুব কষ্টকর হয়। লড়াইটাকে উপভোগ করো, চেষ্টা কখনো ছেড়ে দিও না। বাধা গুলো টপকে যাও। প্রত্যেক নতুন প্রচেষ্টাতে বাধা আসবেই।
ধন্যবাদ।