আহ্লাদে আট- খানা

আহ্লাদে আট খানা!!!

আরজে নীলাঞ্জন এর কাছে অভিষেক এর আট টা প্রশ্ন;
১) তোমার কাছে বাচিক শিল্প ঠিক কোথায়-কোথায় এখনও পিছিয়ে আছে?
উত্তর— হ্যাঁ, বাচিক শিল্প বা শিল্পীরা এখনও বেশ অনেকটাই পিছিয়ে আছে৷ দেখো, ভাতের সাথে সব্জীটা আমরা খেতে হয় বলে বা ডাক্তাররা বলেন বলে খাই ঠিক তেমনই এখনও দর্শকের একটা বড় অংশ মনে করেন, সঞ্চালনা বা আবৃত্তিটা যে কেউ করে দিতে পারেন! তবে নাচ বা গানটা সবাই পারেন না! তাই নাচ কিংবা গান—এই দুই শিল্পকে যতটা গুরত্ব দেওয়া হয়, বাচিক শিল্প তুলনায় এখনও অনেকটা পিছিয়ে৷ এখনও কোনও অনুষ্ঠানে হয়তো কোন বিখ্যাত নৃত্য বা সঙ্গীতশিল্পী বা সিনেমার কলাকুশলীরা মুখ্য আকর্ষণ হতে পারে তবে খুব কম ক্ষেত্রেই বাচিকশিল্পীদের ক্ষেত্রে এমনটা হয়৷ তবে অনেক দর্শক আমাদের সাদরে গ্রহণ করে কিন্তু সেটা তুলনামূলক কম৷ ইংরেজীতে কিছু স্ট্যান্ডআপ কমেডির মাধ্যমে বাচিকশিল্প উঠে আসলেও বাংলায় বেশ পিছিয়ে৷

২) যদি এক বাক্যে কবিতা শব্দটিকে ব্যাখ্যা করত হয়, নিলাঞ্জন মুখার্জি তাহলে কি বলবে?
উত্তর— এই শব্দটা একবাক্যে ব্যাখ্যা করা বেশ কঠিন! তবে যদি একান্ত বলতেই হয় তো বলব ‘সহজাত’৷ ছোটবেলা থেকেই আমার কাছে ছন্দ এসেছে সহজাতভাবেই৷ না, খুব ভাল ছন্দ মেলাই তাও বলব না৷ তবে কোনভাবে চলে আসে ছন্দটা৷ তবে হ্যাঁ, সব কবিতা আমি বুঝিনা, তখন বুঝিয়ে দিলে ভালোই লাগে৷ কিছু কবিতা আমি বুঝি, কিছু বুঝিনা৷ তবে হ্যাঁ, লেখাটা আসে, ওই সহজাত ভাবেই৷এবং পড়াটাও সহজাত ভাবে আসে৷ তাই কবিতা মানে আমার কাছে ‘সহজাত’৷

৩) যদি শেক্‌সপীয়রের কোনো চরিত্র হিসবে দীর্ঘদিন কন্ঠ্য পরিচালনা করতে হয়, তাহলে সেই চরিত্র কোনটি হবে এবং কেন?

উত্তর- এই রে! আমি ‘শেক্ষোপীর-বোদ্ধা” নই। আমি গুরুগম্ভীর হয় বলতে পারব না যে কিং লিয়ারের চরিত্রটি আমায় গভীরে গিয়ে ভাবিয়েছে কিংবা ম্যাকবেথের ওই তিন ডাইনি ভীষণ রোমাঞ্চকর। হ্যাঁ লেডি ম্যাকবেথের ওই বিভিন্ন শেডস আমায় সত্যই আকর্ষণ করে, তবে শেক্‌সপীয়রভক্ত আমি নই। এর চেয়ে বৌঠাকুরুনের ওই ধূসর চারিত্রিক আভা আমায় বেশি ভাবায়। আমি পারলে, মহাভারতে শকুনির চরিত্রে কন্ঠ দিতে চাই। যেকোনো খল চরিত্রে অভিনয় করাটা একটা ভিষণ অ্যাডভেনচার আর আমার খল চরিত্র গুলো বেশি টানে। সবাই বলে রোম্যান্টিক ক্যারেক্টারে আমায় বেশি মানায় তবে আমার সব থেকে বড়ো পাওয়না— এক খল চরিত্র অভিনয় করে মঞ্চ হতে নামার পর এক মহিলা দর্শক বলেছিলেন, “তোমায় দু’গালে দুটো চড় মারতে ইচ্ছে করছিল।

৪) তোমার কাছে প্রেম ও পরকীয় প্রেমের মধ্যে ঠিক কি পার্থক্য। আর কোনটা বেশি নৈতিক!
উত্তর— এই রে! অভিষেক আমি সংবিধান সরকার নাকি সুপ্রীমকোর্ট? কোনটাই নই ফলতঃ নীতি নির্ধারণ করতে পারব না৷ তবে হ্যাঁ, প্রেম বললে বলব,আমার জীবনে একটিই প্রেম এসেছে, তিনি আমার গিন্নী৷ ইনিই আমার প্রথম এবং একমাত্র৷ এবার বলি, আমি কি পরকীয়ার বিপক্ষে? আরে, বাথরুম সবার থাকে তা বলে কি কেউ গঙ্গাস্নান করেন না? ভালোলাগা আপেক্ষিক এবং পছন্দ ব্যক্তিনির্ভর৷ একজনকে ভালোলাগা মানেই আর কাউকে লাগবে না, এটা মানিনা৷ তবে হ্যাঁ, প্রেমটা গায়ের জোরে হয়না৷ তাই আপনি যাকে ভালোবাসছেন, দুষ্টুমি করতে চাইছেন তাতে যেন উভয়েরই সম্মতিটা থাকে৷

৫) তুমি তো রেডিও শো গুলোর মাধ্যমে এত সেন্সিটাইজ্ করো মানুষকে। নিলাঞ্জন মুখার্জি কি কোনো ক্ষেত্রে একটু কনসার্ভেটিভ?
উত্তর— এ তো মারাত্মক কঠিন প্রশ্ন৷ হ্যাঁ কিছু ক্ষেত্রে মারাত্মক কনজারভেটিভ! ধরো, আমার কন্যা তিতাস, সে যখন বাংলা বই পড়তে চায় না বা বই পড়তে চায় না আমি খুব রেগে যাই৷ ওকে নতুন পন্থায় পড়াই কারণ আমি বিশ্বাস করি “পড়তে হয় না হলে পিছিয়ে পড়তে হয়!”এটা আমি সঞ্চালনার ক্ষেত্রেও মানি পড়তে হবেই এবং এক্ষেত্রে আমি বেশ গোঁড়া৷ এবং সম্পর্কের মানে পরিবারের ক্ষেত্রেও আমি গোঁড়া৷ বাড়িটাকে নগরে রেখে বাইরে সুরঙ্গ প্রাসাদ বানানোতে অবিশ্বাসী৷

৬) যদি সুযোগ পাও, তাহলে সমাজে প্রথম তিনটি কি বদল আনবে?
উত্তর— প্রথমেই একটা জিভ আনব, একটা সত্যি কথা বলার জিভ৷ সমাজে মিথ্যাচারটা একটা অসুখের পর্যায়ে চলে গেছে৷
তারপর, মানুষে-মানুষে ভেদাভেদটা দূর করতে চাইব৷ মানে ধর আমরা যে বলি, ওই ছেলেটা না মেয়েলি, ওর সামনে এসব বলিস না, ইত্যাদি৷ এগুলো মুছতে চাইব৷ কারণ সবাই তো সমান৷ মজা করব কিন্তু পার্থক্য আনব না৷
আর তৃতীয়ত, পারলে সব মানুষের উপার্জন সমান করতাম তাহলে মানুষে মানুষে অসূয়া কিংবা রাগটা থাকত না৷

৭) লেখক নিলাঞ্জন মুখার্জিকে মানুষ কবে বৃহৎভাবে পাওয়ার সুযোগ পাবে?
উত্তর— অভিষেক, ভীষণ ভীষণ দুর্বল জায়গা নিয়ে এই প্রশ্নটা৷ লিখতে চাই, লিখতে ভালোবাসি৷ উপায় থাকলে শুধুই লিখতাম কিন্তু লিখে পেট চালানোর মত প্রতিভাবান বোধহয় আমি নই৷ তবে একটা বই প্রকাশ করার ইচ্ছে বহুদিনের৷ নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে ভাবতে পারলে সেদিন নিশ্চয়ই লিখব আমি৷ তবে যেটুকু প্রশংসা পাই বেশ ভালোই লাগে কিন্তু!

৮) কমার্শিয়ালাইজেশনের চাপে পড়ে কি মুক্তমনা শিল্প পদপৃষ্ঠ হচ্ছে? সমাজ কি এখন প্রচুর অর্থোডক্স?
উত্তর— হ্যাঁ, সমাজ তো এখনও বেশ অর্থোডক্সই বটে! কমার্শিয়ালাইজেশনের চাপে পড়ে মানুষ পদপিষ্ট হচ্ছে—একথা অর্ধসত্য৷ দেখো, শিল্প সেটা যাই হোক না কেন, তার একটা আর্থিক ভিত্তি থাকতেই হবে এটাই বাস্তব কারণ পয়সা ই জগৎ চালায়৷ আমি যাই করি না কেন সেটা সবার জন্য করতে হবে৷ দেখো, আমি একটা শিল্প করলাম কিন্তু কেউ বুঝল না তাতে আদতে লাভ হবে না কিছু কিন্তু যেই সেটা সবার হবে তখনি সেটা কমার্শিয়াল হয়ে যাবে৷ আজ ব্রততী বন্দ্যোপাধ্যায় এত সফল, উনি বাচিক শিল্পকে কমার্শিয়াল ভাবেই সবদিক থেকে সফল করেছেন৷ শিল্পের তো কোন সীমা নেই তাই কমার্শিয়ালাইজেশনের কোন চাপ হতে পারে না৷

 

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *