আমাদের ছোটবেলায় সন্ধ্যেগুলো মায়ামাখানো ছিল… প্রায়ই লোডশেডিং হতো। চিমনি, হ্যারিকেনের আলোর পাশাপাশি এমার্জেন্সি লাইটও ছিল। কোনো কোনো গ্রীষ্মের সন্ধ্যেবেলা উঠোন কিংবা ছাদে শতরঞ্জি বিছিয়ে বইখাতা নিয়ে পড়তে বসা হতো। খোলা হাওয়ায় তারাভরা আকাশের নিচে বসে কেটে যেত আলোনেভা মুহূর্তগুলো। সেসবই সুখস্মৃতি।
ঝিঁঝিঁর ডাক শোনা যেতো কোনো কোনো সন্ধ্যেতে। ভাইবোনেরা একসাথে বসে মুড়িমাখা খেতে খেতে আড্ডা দেওয়া হতো। আমরা নব্বইয়ের দশকের ছেলেমেয়েরা তখন পিৎজা, বার্গারের নাম শুনিনি। এমনকি সেইসময়ে পাড়ার মোড়ের খাবারের দোকানে লাল কাপড়ে জড়ানো বিরিয়ানির হাঁড়ির দেখা মিলতোনা। তবুও মিঠে আলো ছড়িয়ে থাকতো মানুষজনের মুখে। সেইসময়ে কিছু কিছু বাড়িতে সাদা-কালো টেলিভিশন সেট থেকে সন্ধ্যেবেলা জন্মভূমি, মহাপ্রভুর মতো কালজয়ী বাংলা ধারাবাহিকের সংলাপ শোনা যেতো। জীবন এতো দ্রুতগামী হয়নি। কিছু কিছু বাড়িতে টেলিফোন ছিলো তবে সম্পর্কগুলো যোগাযোগ দিয়ে মাপা হতোনা। ডাকপিয়নের দেখা মিলতো, চিঠিপত্র আসতো বাড়িতে।
শরতের সন্ধ্যের বাতাসে ছাতিমের গন্ধ ছড়িয়ে পড়তো। থিমের পুজোর মাতামাতি ছিলোনা ঠিকই কিন্তু পুজোয় আনন্দ কম হোতোনা। শীতকালের ঝিমধরা সন্ধ্যেগুলোয় কয়েক কিলোমিটার দূরের রেলস্টেশন থেকেও ট্রেনের হুইসেলের আওয়াজ ভেসে আসতো। ঘরে ঘরে তখন বাইক কিংবা চারচাকার রমরমা ছিলনা, বাবার সাইকেলের ঘন্টির শব্দ চিনতো সব ছেলেমেয়েরাই।
আজকাল লোডশেডিং হয়না বললেই চলে। চারিদিকে ঝাঁ চকচকে আলো। কিন্তু, মনের ঘরে আঁধার ঘনায় প্রায়ই!
ছোটবেলার সন্ধ্যেগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করলে মনে পড়ে অনেককিছু। নব্বইয়ের দশকের বাঙালি ছেলেমেয়েদের ছোটবেলার ঝুলিতে রাখা আছে মুঠো মুঠো আবেগ আর রূপকথা। ব্যাঙ্গমা ব্যাঙ্গমীর গল্প শোনা থেকে ঘুমোতে যাবার আগে “চাঁদের পাহাড়” পড়া সবই থেকে যাবে জীবনের ডাউন মেমোরি লেনে!