পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসছে মহাজাগতিক বিস্ময় ‘নিওওয়াইস’। এটি আদতে একটি ধূমকেতু, যার বৈজ্ঞানিক নাম – ‘সি/২০২০-এফ-৩’। গত ২৭ শে মার্চ নাসার বিজ্ঞানীদের নজরে পড়ে এই বিস্ময়টি। নাসার টেলিস্কোপ ‘নিওওয়াইস’ এর পর্যবেক্ষণে প্রথম ধরা পড়ে ধূমকেতুটি। তাই এই নামেই প্রচলিত নামকরণ হয়েছে ধূমকেতুটির। প্রায় ৬৮০০ বছর পর দেখা যাচ্ছে এই বিরল দৃশ্য। বিজ্ঞানীদের মতে এরকম মহাজাগতিক বিস্ময় দেখা যাবে আরোও ৬৫০০ বছর পর।
গত ১৩ জুলাই সূর্যের সবচেয়ে কাছছ এসেছিল ‘নিওওয়াইস’। ১৪ জুলাই থেকে কলকাতার উত্তর পশ্চিম আকাশে সুস্পষ্টভাবে দেখা যাবে এই ধূমকেতু। এতদিন সূর্যোদয়ের আগে ভোররাতে দেখা যাচ্ছিল ধূমকেতুটি, তবে ১৪ জুলাই থেকে সন্ধ্যের আকাশে খালি চোখেই দেখা যাবে মহাজাগতিক বিস্ময়ের বিরল দৃশ্য।
ধূমকেতু হল ধূলো, জলীয় বরফ, পাথর ও বরফায়িত গ্যাস-কার্বন মনোক্সাইড, মিথেন, অ্যমোনিয়ার সংমিশ্রণে তৈরি মহাজাগতিক বস্তু। সূর্যের খুব নিকটে পরিভ্রমণের সময় ধূমকেতুকে দেখা যায়। সূর্যের প্রচণ্ড তাপ ও সৌরবায়ুর প্রভাবে ধূমকেতুর নিউক্লিয়াস ও তার অভ্যন্তরের বরফ গলতে, এর ফলে দীর্ঘ লেজও দেখা যায়। নিউক্লিয়াস বরফ , ধূলো ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণিকার সমন্বয়ে গঠিত। ধূমকেতু প্রস্থে কয়েকশো মিটার থেকে দশ কিমি এবং এর লেজের দৈর্ঘ্য কয়েকশো কোটি কিমি পর্যন্ত হতে পারবেন। পৃথিবী সৃষ্টির সুপ্রাচীনকাল থেকে মানুষ ধূমকেতু পর্যবেক্ষণ করছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যত উন্নত হচ্ছে মানুষের মধ্যে মহাজাগতিক বিস্ময়ের ওপর উৎসাহ বাড়ছে আরও বেশি।
এর আগেও সূর্যকে প্রদক্ষিণ করতে এসেছে হাজার হাজার ধূমকেতু, তাদের মধ্যে কিছু মানুষের নজরে পড়েছে কিছু বা পড়েনি। এরকম কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ধূমকেতু হল ‘হ্যালির ধূমকেতু’, যা ১৯৮৬ খালিচোখে দৃশ্যমান ছিল। এছাড়াও ১৯৯৭ সালে ‘হেল বপ’ নামক ধূমকেতুটিও খালি চোখে দেখা গিয়েছিল। সাম্প্রতিক ২০১৩ সালে টেলিস্কোপে ধরা পড়েছিল ‘প্যান স্টার’ ধূমকেতু। তবে তা খালি চোখে দেখা যায়নি।
বিজ্ঞানীদের নজরে আসতেই ধূম লেগে গেছে ‘নিওওয়াইস’ কে নিয়ে। ‘নিওওয়াইস’-এর ইতিমধ্যেই সূর্যকে প্রদক্ষিণ করা হয়ে গেছে। এবার সে তার নিজের জায়গা ‘ওরট ক্লাউড’-এ ফিরে যাবে। ফেরার পথেই আগামী ২২ জুলাই পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে এই ধূমকেতু। সেই দূরত্ব প্রায় ১০ কোটি ৩০ লক্ষ কিলোমিটার। এই দিনই সবচেয়ে বেলি উজ্জ্বল দেখা যাবে ‘নিওওয়াইস’কে। এই মহাজাগতিক বিস্ময় দেখায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে বর্ষার মেঘ। এই বিরল দৃশ্য এবার মিস করলে অপেক্ষা করতে হবে ৬৫০০ বছরের।