বর্তমান ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতিঃকূটনৈতিক দিক থেকে পিছিয়ে ভারত, সাহায্য করছে জাপান
Saturday, 27th June 2020, 6.30 A.M
নিজস্ব সংবাদদাতা- বর্তমান ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতি দেশীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে এক বড়ো প্রভাব ফেলেছে।বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন ছেয়ে রয়েছে ভারত-চীন সম্পর্কের প্রসঙ্গ। অনেক সংবাদমাধ্যমে এমনও দাবি করা হচ্ছে যে, পাকিস্তানের ব্যাপারে ভারত সরকার যতটা তৎপর,চীনের ক্ষেত্রে ঠিক ততটা তৎপর নয় কেন?২০১৯ সালে পাকিস্তানের বালাকোটে ঘটে যাওয়া সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সময় আমরা ভারত সরকারের যে আগ্রাসন দেখেছিলাম,সেই তৎপরতা এখন দেখতে পাচ্ছি না কেন?
বর্তমান পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে, রাশিয়ার ইতিহাসবিদ, ভ্যাসিলি ক্লিওয়েভস্কির কথা খুব মনে পড়ছে। তার কথায়-“ইতিহাস আমাদের কিছু শেখায় না, কেবল তার পাঠগুলি না শেখার শাস্তি দেয়।”
দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় এর অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক এর মতে, “দক্ষিণ এশিয়ার প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে ভারতের সম্পর্ক চীনের তুলনায় খারাপ। “তার মতে, “বিদেশ নীতিতে ভারত, চীনের থেকে বেশ কিছুটা পিছিয়ে আছে।” এই সুযোগে চীনের সহয়তায় নিজেদের নতুন ম্যাপ তৈরী করে ভারতকে বেশ কিছুটা ব্যাকফুটে নিয়ে এসেছে নেপাল। এবং এটিও উল্লেখযোগ্য যে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ২০জন যেদিন শহীদ হন, ঠিক সেইদিন পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষে সকলের সম্মতিক্রমে এই কাজটি সম্পাদন করে নেপাল।
অনেক সংবাদমাধ্যম এর মতে, পাকিস্তানের উপর সঠিক সময়ে সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হলেও চীনের আগ্রাসন নীতির কাছে চুপ কেন সরকার?
চীনের ফৌজি লাদাখের গালওয়ান ভ্যালি ও পাংগাং হ্রদের ধারে প্রবেশ করলেও, এই তথ্য আমাদের কাছে গোপন রাখা হয়। এক্ষেত্রে ওই নির্দিষ্ট সংবাদমাধ্যমগুলি চীনের আগ্রাসন নীতির ওপর সরকারের তৎপরতার প্রশ্ন তুলেছেন।
কূটনৈতিক দিক থেকে ঠিক কতটা সফল ভারত, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পূর্বের ইতিহাস থেকে জানা যায়,অতীতে বাংলাদেশের তিন মন্ত্রী ভরত সফর বাতিল করেন, যখন ভারত, বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করে।সুতরাং,নিশ্চিত রূপে ধরে নেওয়া যেতে পারে বাংলাদেশ, নেপাল এর মতো ছোটো দেশগুলিও ভারত-চীন সম্পর্কের সাথে প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষ ভাবে জড়িত।
এটাও পড়তে পারেন – দক্ষিণ আফ্রিকা বনাম ভারতে নজর থাকছে রাবাদার ওপর
এদিকে চীন, দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের হাত শক্ত করতে ২০১৯ সালে বাংলাদেশের সহযোগিতায় মেগা অবকাঠামো প্রকল্প -বেল্ট ও রোডের দ্বিতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত করে। ২৫শে এপ্রিল থেকে ২৭শে এপ্রিল এই সম্মেলন চলে। এর কিছুদিন পূর্বে একটি অনুষ্ঠান আয়োজিত হয়, যেটিকে চীনা বেল্ট ও রোড প্রকল্পের প্রচারণা অনুষ্ঠানও বলা চলে। এই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী। রিজভীর মতে, এই আয়োজন তাদের দুই দেশের সম্পর্ককে আগামী দিনে আরও মজবুত ও সুদৃঢ় বানাতে সক্ষম হবে। এক্ষেত্রে চীনের মনোভাব সুস্পষ্ট।
বিশেষজ্ঞ কূটনীতিকদের মতে, বিসিআইম সম্পর্কে বেশ কিছু প্রতিবন্ধকতা থাকলেও ভারত কূটনৈতিক কারণে সর্বক্ষেত্রে আপত্তি জানাতে পারে না। কারণ এই নির্দিষ্ট বিষয়টির সাথে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ভবিষ্যত উন্নয়নের আকাঙ্খা। তবে ভারতের অসন্তোষের কারণটি প্রতিষ্ঠিত নিরাপত্তাজনিত বিষয়ের ওপর। যদিও, জাপান সিঙ্গাপুর সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন দেশে প্রযুক্তিকে হাতিয়ার বানিয়ে সেখানকার মানুষের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে,যাতে চীন সেসব জায়গার ওপর নজর না দিতে পারে।
আমরা সকলেই চাই একটি সুষ্ঠ-স্বাভাবিক পৃথিবী। আমরা যুদ্ধ চাই না। কবির কথায়-“সভ্যতার বিজয়রথ থেমে যাবে সেদিন, রণ দামামা বাজিয়া উঠিবে যেদিন। “শান্তির দেশে যুদ্ধ কাম্য নয়। তবে এটাও সত্যি যে,বর্তমান পরিস্থিতি ও ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতি আমাদের চোখের সামনে নিয়ত তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ পটভূমিকা রচনা করছে। আমরা চাই, ভারত-চীন সম্পর্কের অবনতি স্বাভাবিক হোক। এমন পরিস্থিতিতে যেখানে প্রতিদিন সহস্রাধিক মানুষ করোনার মতো মহামারীতে আক্রান্ত হয়ে প্রাণ হারাচ্ছে,সেখানে আবারও যুদ্ধের কারণে কিছু মায়ের কোল খালি হোক, আমরা চাই না।