আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন প্রাক্তন ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি। নিজের ইনস্টাগ্রাম অ্যকাউন্টে এই কথা জানিয়েছেন তিনি। ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসে ধোনি একটা বৃহৎ নাম। তাঁর অধিনায়কত্বে ভারত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের সব ট্রফি জয় করেছে। একজন ক্যাপ্টেন হিসেবে তাঁর মতো এই কৃতিত্ব আর কোনো ভারতীয় অধিনায়কের নেই। তাঁর অধিনায়কত্বে ২০০৭ টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ২০১১ তে ৫০ ওভার বিশ্বকাপ ও ২০১৩ তে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি জিতেছে ভারতীয় ক্রিকেট টিম। শুধু ভারতীয় ক্রিকেট নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেও মহেন্দ্র সিং ধোনির অবদান অনস্বীকার্য। ক্রিকেট জগতে তিনি ‘ক্যাপ্টেন কুল’ নামেই অধিক পরিচিত। তাঁর তীক্ষ্ণ ও ক্ষুরধার বুদ্ধিদীপ্ত ক্যাপ্টেন্সির মনোমুগ্ধ সমগ্র ভারতবাসী। নিজের খেলার সঙ্গে সঙ্গে একজন সফল ক্যাপ্টেন হিসেবেও তিনি প্রতিষ্ঠিত।
মহেন্দ্র সিং ধোনি আন্তর্জাতিক স্তরে শেষ ম্যাচ খেলেছেন ২০১৯ এর বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তিনি টেস্ট ক্রিকেট থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরেই অবসর নিয়েছিলেন। তারপর তিনি একদিনের ক্রিকেট ও টি টোয়েন্টি ফর্ম্যাটে খেলা চালিয়ে গেছিলেন। ২০১৫ তে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ৫০ ওভারের বিশ্বকাপে ও ২০১৬ তে টি টোয়েন্টি ওয়ার্ল্ড কাপে তিনি ভারতের হয়ে শেষ অধিনায়কত্ব করেন। আন্তর্জাতিক স্তরে ৩৫০ টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলে তাঁর ঝুলিতে রয়েছে ১০৭৭৩ রান। সচিন তেন্ডুলকর, বিরাট কোহলি, সৌরভ গাঙ্গুলি ও রাহুল দ্রাবিড়ের পর তিনিই পঞ্চম ভারতীয় ক্রিকেটার যাঁর ঝুলিতে এতো রান রয়েছে। উইকেট কিপার হিসেবে ধোনির নাম ছিল বিশ্বজোড়া। তিনি উইকেট কিপার হিসেবে ৮২৯ টি ডিসমিসাল করেছেন যার নিরিখে বিশ্বে তিনি তৃতীয়। মার্ক বাউচার ও অ্যডাম গিলক্রিস্ট রয়েছেন তাঁর আগে।
২০১৯ এর বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে হারের পরই মহেন্দ্র সিং ধোনির ক্রিকেট ভবিষ্যৎ নিয়ে জল্পনা শুরু হয়ে গিয়েছিল। গত ১ বছরছ তিনি কোনোরকম ফর্ম্যাটে ক্রিকেট খেলেননি। ভারতীয় তেরঙায় তাঁর খেলা দেখার অপেক্ষায় ছিল সমগ্র ভারতবাসী। কিন্তু সমস্ত জল্পনা কল্পনা উড়িয়ে দিয়ে স্বাধীনতা দিবসের দিনেই নিজের বিদায়ী ঘোষণা করবেন, ভাবতে পারেনি কেউই। যদিও আইপিএল খেলবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। ২০২০ তে ইউএই তে অনুষ্ঠিত হবে ত্রয়োদশ আইপিএল। আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে অধিনায়কত্ব করতে দেখা যাবে এই কিংবদন্তি ক্রিকেটারকে।
ঝাড়খন্ডের রাঁচি থেকে ভারতীয় ক্রিকেটে মহেন্দ্র সিং ধোনির প্রবেশ ঘটেছিল ২০০৪ সালে। বিশাখাপত্তনমে ২০০৫ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে তাঁর দুর্ধর্ষ ১৪৮ রানের ইনিংসের পর ধোনি স্টার হিসেবে পরিচিত হন ভারতবাসীর কাছে। তারপর আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি ধোনিকে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে তাঁর অনবদ্য ইনিংসের পর তিনি বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিশ্বকাপে লজ্জাজনক হারের পর ধোনির কাঁধে ক্যাপ্টেন্সির দায়িত্ব আসে। তারপরই টি টোয়েন্টি বিশ্বকাপ জিতে নজির গড়েন তিনি। ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ট্রাই সিরিজ জয়ও ছিল তাঁর অন্যতম কৃতিত্ব।
মহেন্দ্র সিং ধোনিই একমাত্র ক্রিকেটার যিনি প্রথম দুবার আইসিসি ওডিআই প্লেয়ার অব্ দ্য ইয়ার হয়েছেন ২০০৮ ও ২০০৯ সালে। ধোনির অধিনায়কত্বে ভারত টেস্ট ক্রিকেটে এক নম্বর স্থানে এসেছিল। ভারতীয় ক্রিকেটে তাঁর অপূরণীয় অবদানের জন্য ধোনি ২০০৭ সালে রাজীব গান্ধী খেলরত্ন, ২০০৮ সালছ পদ্মশ্রী ও ২০১৮ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে সম্মানিত হয়েছেন। ক্রিকেট জগৎ থেকে অবসর নিলেই ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ধোনি শুধু একটা নাম নয় কোটি কোটি ভারতবাসীর আবেগ। সোশ্যাল মিডিয়ায় ধোনির রিটায়ারমেন্ট ঘোষণার পর সচিন তেন্ডুলকর ট্যুইট করে জানান ” ভারতীয় ক্রিকেটে ধোনির অবদান অপরিসীম। ২০১১ সালের বিশ্বজয় আমার জীবনের অনেক বড় মূহুর্ত।”। অবসর পরবর্তী জীবনের জন্য ধোনিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন সচিন।
সোশ্যাল মিডিয়ায় ধোনি নিজের রিটায়ারমেন্ট ঘোষণা করার পরেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে নিজের অবসর ঘোষণা করেছেন সুরেশ রায়না। ২০২০ র আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংসের হয়ে খেলতে দেখা যাবে দুজনকেই।