রক্ষক যখন ভক্ষক, কাঠগড়ায় বিচার!

রক্ষক যখন ভক্ষক। এই কথাটি সত‍্য কিনা খুঁজতে গেলে আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোয় কান পাততে হবে। খুঁটিয়ে দেখলে গলদ গোড়াতেই শুরু।

শাহজাহানপুরের আইনী শিক্ষার্থী, ২৩ বছরের এক যুবতী বিজেপি নেতা চিন্মায়ানন্দের ওপর ধর্ষণের অভিযোগ করেছিলেন। বুধবার সকালে চাঁদাবাজির মামলায় বিশেষ তদন্তকারী দল গ্রেপ্তার করেছে ওই তরুণীকে। তাকে ১৪ দিনের বিচারিক হেফাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। এবার বুঝুন! উলটপুরাণ কাকে বলে!

তার বাবা ও ভাইয়ের উপস্থিতিতে তাকে সকাল ৯.১৫ টার দিকে তার বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং পরে তাকে মেডিকেল পরীক্ষার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।  এরপরে তাকে অতিরিক্ত চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বিনীত কুমারের আদালতে হাজির করা হয়, যা তাকে ১৪ দিনের বিচারিক হেফাজতে প্রেরণ করেছে। রক্ষক ভক্ষকের এটা যেন কোনো স্ক্রিপ্ট এর চেয়ে কম কিছু না! এই মামলায় আরও তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

কিছুদিন আগেই স্বামী চিন্ময়ানন্দের সদৃশ একজনের অশালীন ভিডিও প্রকাশ‍্যে আসে। এই ভিডিও নিজের শারীরিক নির্যাতনের ও ধর্ষণের প্রমাণ হিসেবে ব‍্যবহার করেছে তরুণী। রক্ষক কিভাবে ভক্ষকের রূপ ধারণ করতে পারে এই জঘন‍্য ঘটনা তার প্রমাণ।

গ্রেপ্তার হওয়া চারজনের পেনড্রাইভ এবং মোবাইল সহ বেশ কয়েকটি প্রমাণ ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য প্রেরণ করা হয়েছে।। শিক্ষার্থী এবং অন্যদের দ্বারা ব‍্যবহার করা মোবাইল লোকেশন এবং কলগুলিও যাচাই করা হয়েছিল এবং একটি চার্ট তৈরি করা হয়েছিল যা থেকে দেখা গেথে যে গ্রেপ্তার  হওয়া চারজনের (আইনী শিক্ষার্থী এবং ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হওয়া তিন) এক সাথে যোগাযোগে ছিল।

এলাহাবাদ হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ তাকে আগাম জামিন প্রত্যাখ্যান করার দুই দিন পরে আইনী শিক্ষার্থীর গ্রেপ্তার হয়। আদালত তাকে উপযুক্ত আদালতে যাওয়ার জন্য বলেছিল। তার পরে শিক্ষার্থীর আইনজীবী অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা আদালতে যোগাযোগ করেন, যা আবেদনটি গ্রহণ করে বৃহস্পতিবার শুনানির জন্য নির্ধারণ করে।

সমাজের সাধু কিংবা গুরু, যারা নিজেদের সমাজের রক্ষক মনে করেন, তাঁদের এই কাজকর্ম সত‍্যিই শোভা পায় না। তবে ভণ্ড সাধুর যৌন নির্যাতনের ঘটনা এর আগেও ঘটেছে।

স্পেশাল ইনভেস্টিগেশন টিম (এসআইটি) তার তিন বন্ধুকে একটি ভিডিও ক্লিপ সম্পর্কিত জিজ্ঞাসাবাদ করার পরে এর আগে তাদের বিরুদ্ধে বুকিং দিয়েছিল যেখানে তারা চাঁদাবাজি নিয়ে আলোচনা করছিল।  এসআইটি প্রধান নবীন অরোরার মতে, তিনজনই তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলায় তাদের জড়িত থাকা মেনে নিয়েছিল, যদিও আইনী শিক্ষার্থী অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

২৩ বছর বয়সী ওই শিক্ষার্থী আইন কলেজের ছাত্রী ছিল। তাকে হস্টেল থেকে জোর করে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করতেন সমাজ রক্ষক স্বামী চিন্ময়ানন্দ। এমন অভিযোগ করেছে তরুণী। প্রমাণ হিসেবে ভালো ভিডিও করতে বাধ‍্য হয়েছে অসহায়া। আর এখন উল্টে মিথ‍্যে মামলায় তরুণীকেই ফাঁসানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে তরুণী‌।

“আমি জানি না যে মানুষ আমাকে চিন্মায়ানন্দ থেকে পালাতে সহায়তা করেছিল তারা আমাকে ব্যবহার করছিল কি না।  চাঁদাবাজির মামলার সাথে আমার কোনো যোগ নেই।  আমি মনে করি, এই ধরণের নাটক আমার ধর্ষণের অভিযোগকে ম্লান করার জন্য করা হচ্ছে, “আইনটির শিক্ষার্থী বলেছিলেন।

এদিকে, যৌন-নির্যাতনের মামলায় গ্রেপ্তার হওয়া বিজেপি নেতা স্বামী চিন্মায়ানন্দের জামিনের আবেদন মঙ্গলবার উত্তরপ্রদেশ আদালত প্রত্যাখ্যান করেছিল। তবে উত্তরপ্রদেশের মুখ‍্যমন্ত্রী যোগী আদিত‍্যনাথ এর স্নেহভাজন এই ভন্ড সমাজ রক্ষক স্বামী চিন্ময়ানন্দ।

সোমবার, তিনি লখনউয়ের সঞ্জয় গান্ধী পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল সায়েন্সেস ইনস্টিটিউট অফ মেডিকেল সায়েন্সে ভর্তি হয়েছিলেন, বুকে ব্যথার অভিযোগ করেছিলেন এবং সেখানে তিনি পর্যবেক্ষণে রয়েছেন।

তবে ভারত ঘাঁটলে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় এরকম আরো রক্ষক ভক্ষক হয়ে ওঠার ঘটনা প্রকাশ‍্যে আসবে এবং গত কয়েক বছরে এসেছেও। বিচার হয়তো হয়েছে সুবিচার পেয়েছে কজন!

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *