কলিংবেলের শব্দে ছুটে এসে দরজা খুললে পাটের তৈরী ব্যাগটি এগিয়ে দেয় একটি মেয়ে, হাসি মুখে শ্রীপর্ণা বলল
– “ইস্ত্রি করা কাপড়গুলোর টাকা বিকেলে দোকানে দিয়ে আসবো।”
নিস্পাপ মুখের কোণে একফালি হাসির সাথে মাথা নাড়িয়ে চলে যায় মেয়েটি।
শ্রীপর্ণা বাড়ির ছোটো মেয়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছে সে। সন্ধ্যাবেলায় প্রজেক্টের কিছু সরঞ্জাম কিনতে গিয়ে শ্রীপর্ণা পৌঁছে যায় একটি দর্জির দোকানে। পঞ্চাশটাকার নোটটি এগিয়ে দিয়ে সে বলল
– “বিমলদা, এই নাও ইস্ত্রির টাকাটা। সকালে অনলাইন ক্লাসের ব্যস্ততায় দিতে পারিনি। তোমার পাশের মিষ্টি মেয়েটি কে গো?”
– “এটা আমার একমাত্র মেয়ে সোনালী।”
– “তোমার মেয়েকে একা লোকের বাড়িতে কাপড় দিয়ে পাঠিয়ে দাও কেন? তুমি দিয়ে আসতে পারো না!”
– “সত্যি বলতে, ইস্ত্রি কাপড়গুলো বাড়ি পৌছে দিলে পাঁচ টাকা লাভ হয় আর আমার তো অনেক কাজের চাপ, তাই মেয়েকে পাঠাতে বাধ্য হই।”
– “হুম, কিন্তু তোমার মেয়েটাকেও একটু পড়ার সুযোগ দিও…”
– “এই কঠিন পরিস্থিতির সঙ্গে যুদ্ধ করে মেয়েটাও পড়তে পারছে না।”
– “কেন বিমলদা?”
– “স্কুলের দিদিমনিরা বাড়িতে এসে পড়াতে চায় না এই সময়ে। শুধু বলে, মোবাইলে অনলাইন ক্লাসে পড়াবে। এই মুহূর্তে মোবাইল কিনে দেওয়ার সামর্থ্য নেই আমার, তাই ভেবেছি ওই লাভের টাকাগুলো জমিয়ে মোবাইল কিনে দেবো মেয়েকে।”
আকর্ষণীয় দামি মোবাইলের ওপর অফারের লোভে পুরনো মোবাইল অবহেলা করে, নতুন ফোন কিনে ফেলি আর এরা একটু পড়ার জন্য রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বাড়িতে কাপড় পৌঁছে দাওয়া টাকা জমাতে থাকে মোবাইল কিনে পড়ার আশায়, এই ভেবে হাতে থাকা ফোনটা সোনালীর হাতে দিয়ে শ্রীপর্ণা বলল, “সোনা মা, কিছু দিনের পুরনো আমার মোবাইলটা দিয়ে স্কুলের ক্লাসগুলো করবি, আর রোজ বিকেলে আমার বাড়িতে চলে আসবি, আমি তোকে পড়াবো।”
ভোরবেলায় ফোটা ফুলের মতো হাসি ফুটেছে নিস্পাপ সোনালীর মুখে।