– কিরে? এতকাল বাদে আমার সাথে কথোপকথন করতে ইচ্ছে হলো! এতদিন তো ঘুরেও তাকাসনি!
– মনে তোকে সবসময় পড়তো রে! কিন্তু কি করবো বল, এত কাজের চাপ যে…
– রাখ তোর কাজ! ছোট্টবেলা থেকে তোর সাথে আছি। আগে তো আমাকে ছাড়া থাকতেই পারতিস না। রোজ একবার হলেও আমার স্পর্শ তোর লাগতোই! আর যেদিন থেকে বিয়ে করে এই বাড়িতে পা দিলি, সেই যে আমাকে দূরে সরালি, আর তো একবার ও চেয়ে দেখতিস না।
– সবই আমার কপাল রে! বিয়ের আগে তোর সাথে আমার সম্পর্কের কথা শ্বশুরবাড়িতে জানিয়েছিলাম। তখন সবাই হাসিমুখে মেনেও নিয়েছিল। কিন্তু বিয়ের পরে সব কেমন পাল্টে গেলো! সংসারের ভালোর কথা ভেবেই বাধ্য হয়ে…আর তারপর তো কুটু এলো।
– হ্যাঁ তোর সেই গুণধর ছেলে! যে ছেলের আবদার মেটাতে তুই লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের বিয়ের গয়না বিক্রি করে ল্যাপটপ কিনে দিয়েছিলি, স্বামীকে মিথ্যে বলেছিলিস যে তোর বাপেরবাড়ী থেকে দিয়েছে যাতে রাগ না করে। তোর ছেলে তো সব জানত। বিদেশে চাকরি করতে চলে যাওয়ার পর ক’বার খোঁজ নেয় তোর? এখন তো কোন মেমসাহেবকে বিয়ে করে বহাল তবিয়তে আছে। মাঝখান থেকে তুই নিজের শখ-আহ্লাদ বিসর্জন দিলি।
– আমি জানি তো, সবাই ছেড়ে চলে গেলেও তুই আমার পাশে সবসময় থাকবি। তাই তো আজ এতবছর পরে সেই তোর কাছেই ফিরে এলাম।
– নে, শুধু কি কথাই বলবি নাকি বাজাবিও? ভালো করে আগে ধুলো ঝেড়ে নে, যা ময়লা করে রেখেছিস আমায়…
নিজের মনে নিজে হাসে অন্তরা। পরম যত্নে ধুলো ঝেড়ে বের করে নিজের সবথেকে প্রিয় বন্ধুকে।
তানপুরাটা হাতে নিয়ে সুর তোলে অন্তরা, “এই আকাশে আমার মুক্তি আলোয় আলোয়…”