-” ও বাবু দুডা টাকা দ্যান না, ছিলাডা ক’দিন কিচ্ছু খায়নিকো।” মন্দিরের ঢোকার মুখেই একটা শতছিন্ন শাড়ি পরা রোগাসোগা চেহারার মেয়ে কোলে একটা চার-পাঁচ বছরের বাচ্চাকে নিয়ে তরুণ বাবুর পথ আটকে দাঁড়ালো। মেয়েটির চেহারায় দারিদ্রের ছাপ স্পষ্ট। কোলের ছেলেটিও অপুষ্টির শিকার। এই হয়েছে এই ভিখিরিগুলোকে নিয়ে এক জ্বালা, যখন তখন সামনে এসে ছুঁয়ে দেবে, ঠাকুরের সামনে যাওয়ার আগে এইসব উটকো ঝামেলা একেবারেই নাপসন্দ তরুণ বাবুর। ভারী ধার্মিক উনি, প্রতি সোমবার ভক্তি সহকারে বাবার মাথায় জল ঢেলে আসছেন আজ অনেক বছর, এখন যদি এই মেয়েটি ছুঁয়ে দেয় তাহলেই হয়েছে, আবার বাড়ি গিয়ে স্নান সেরে শুদ্ধ হয়ে আসতে হবে।
– ” এই সর সর, সরে যা বলছি, ওই নোংরা হাতে একদম ছুঁবিনা আমায়, পাপ লাগবে। পুজোর সময় বয়ে যাচ্ছে আর এদিকে তোদের জ্বালায় দেখছি বাবা আমার অভুক্তই রয়ে যাবেন আজ।”
মেয়েটি তবু পথ ছাড়েনা, কতকটা নাছোড়বান্দা সে,
-” বাবু তা’লে একটা মিঠাই দিয়ে দ্যান না ঐ থালা থেইক্যে।”
কী সর্বনাশ, শেষে কিনা ঠাকুরের প্রসাদেও লোভ দিচ্ছে, এ যে তরুণ বাবুর ঘোর অমঙ্গল হবে এবার। তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন এবার তিনি।
– ” ওরে হতভাগী, ভারী লোভ না তোর! পুজোর প্রসাদটাতেও কুনজর দিচ্ছিস? জানিস পাপ লাগবে তোর?”
সত্যিই পাপ লাগবে কিনা তা বুভূক্ষু মেয়েটি বা তার অভুক্ত সন্তান এমনকি খোদ তরুণ বাবুরও সঠিকভাবে জানা না থাকলেও ঠাকুরের নৈবেদ্যর জন্যে বরাদ্দ থালা ভর্তি থরেথরে সাজানো মন্ডামিঠাই আর ঘটি ভর্তি দুধে ‘নজর’ দেওয়ার অপরাধে ‘বাবু’ই প্রায় তাকে শ্যেণ দৃষ্টিতে ভস্ম করে দেওয়ার উপক্রম করলেন। একান্তই পুজোর সময় অতিক্রম হওয়ার উপক্রম হলে তিনি দুটি অভুক্ত পেটকে এই যাত্রায় নিষ্কৃতি দেন। আরও একবার চোখ রাঙিয়ে ‘বাবু’ মন্দিরে ঢুকে গেলেন। মন্দিরের পাথুরে লিঙ্গ স্নান করে পবিত্র দুধে, প্রসাদে পায় থালা ভরা ‘মিঠাই’। তরুণ বাবু তাঁর পুণ্যের ঘড়াটা আর একটু সমৃদ্ধ করে তোলেন।
বাইরে খোলা আকাশের তলায় অভুক্ত মহাদেব কোলে এক মা বিড়বিড় করে ওঠে,
-” মঙ্গল হোক।”
পুনশ্চঃ: ভিক্ষাবৃত্তিকে সমর্থন করা উদ্দেশ্য নয় কোনোভাবেই, কিন্তু ঠিক সেইভাবেই পুণ্যার্জনের নামে এক শ্রেণীর মানুষকে বঞ্চিত করে খাদ্যের অহেতুক অপচয়ও কাম্য নয়।