আমি শ্রীময়ী, আর পাঁচজনের মতোই সাধারণ একটা মেয়ে,থুরি ডির্ভোসি মেয়ে। আজ ছমাস হল বাড়ি এসেছি, আমার নিজের বাড়ি। বিচ্ছেদটা হয়েই ছিল, কাগজে কলমেও হয়ে গেল শেষ পর্যন্ত। বেশ ভালই আছি বাবা-মাকে নিয়ে, একটা চাকরিও করছি।
বাবা-মা নাম রেখেছিলেন শ্রীময়ী, শশুরবাড়িতে বহুবার শুনতে হয়েছে,”ঢং করে নাম রেখেছে শ্রীময়ী, কোনো শ্রীই তো নেই,অলক্ষী একটা!” তবে এখন আর শুনতে হয়না। ছুটির দিনে সকালে একটু দেরী হয় উঠতে, কাজে ভুলও হয় একটু আধটু, তবে এখন আর শুনতে হয় না, আমার সহবত্ নেই, মা-বাবা কিছু শিখিয়ে পাঠায় নি। ক্লান্ত শরীরে না খেয়ে অপেক্ষা করলে শুনতে হয় না, “আবার এসব নাটক কীসের” প্রতিবাদের ফলস্বরুপ শরীরে কালশিটের দাগ পড়ে না আর। এখন মাঝে মাঝে খোলা চুলে বারান্দায় এসে দাঁড়াই, এখন আর কেউ বলে না “নির্লজ্জ,বেহায়া মেয়েমানুষ” এখন আর কেউ তুলনা টানে না, কথায় কথায় শুনতে হয়না,আমায় বিয়ে করে সে অসুখী। আর মিথ্যে হাসি নিয়ে বলতে হয়না,”আমি ভাল আছি” কষ্ট হলে মন খুলে কাঁদে পারি, শ্বাস নিতে পারি,কারর অনুমতি ছাড়া। বাঁচতে পারি প্রাণখুলে।
তবে এ পোড়া দেশে মেয়ে হয়ে জন্মেছি, তাই কথার শেষ হয়নি, শুনতে এখনও হয়… “শ্রীময়ী না! ওকে তো ওর বর ছেড়ে দিয়েছে!” “আরে ডির্ভোসি মেয়ে, চরিত্রের ঠিক আছে নাকি!” “বাবা-মা একেবারে মানুষ করতে পারেনি” “নিশ্চই কোনো দোষ ছিল মেয়েটার, নাহলে এরকম হবে কেন!” ইত্যাদি ইত্যাদি।
মাঝে মাঝে চিৎকার করে এদের জিজ্ঞাসা করতে ইচ্ছা করে, তারা কোথায় ছিল যখন আমার বাবা-মা কঠোর পরিশ্রম করে আমায় বড় করেছেন? কোথায় ছিল যখন তারা সর্বস্য দিয়ে আমার বিয়ে দিয়েছেন? আমি যখন রাতের পর রাত কেঁদেছি,কোথায় ছিল তারা? যখন মার খেয়েছি, যন্ত্রনায় ছটফট করেছি তখন কোথায় ছিল তারা? কোথায় ছিল?
Facebook Comments Box