।। হিয়ার মাঝে ।।
— তোহ্ কী খেলা হবে?
— শোন আমাদের ডিপার্টমেন্টে একটা খেলা বলতে পারিস ট্র্যাডিশান অনুযায়ী চলে আসছে, সেকেন্ড ইয়াররা তো জানেই! ফার্স্ট ইয়ারদের জন্যই বলছি পিকনিকে এসে ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলা আবশ্যিক।
— ওকে! তাহলে লেটস স্টার্ট! বাই দ্য ওয়ে, সবার নিয়ম জানা আছে কি খেলাটার?
— একবার বলে দিলে মন্দ হয়না।
— দেখ, আমরা যেরকম সার্কেল করে বসে আছি, তার মাঝে একটা বোতলকে ঘোরানো হবে, বোতলটা যে দুজনের সামনে এসে থামবে, তার একজন অন্যজনকে যেকোনো ধরণের প্রশ্ন করবে। বুঝলি সব?
— একদম!
বোতলটা ঘোরানো হলে তার দুদিকে যারা পড়ল তারা হল হিয়া আর থার্ড ইয়ারের প্রকাশ। প্রকাশকে প্রশ্ন করতে বলা হলে সে হিয়ার দিকে তাকিয়ে এক মুহূর্তের জন্য থমকে গেল।
*************************
হিয়ার সাথে প্রকাশের প্রথম দেখা হয়েছিল ফার্স্ট ইয়ারের সাথে আলাপ পর্ব সারতে আসার সময়। সবার মধ্যেও হিয়া ছিল যেন সবচেয়ে বেশি উজ্জ্বল, না! বিশেষ সুন্দরী হিয়া নয়। তবে হিয়ার ছেলেমানুষি, না বুঝে পাগলামো ডিপার্টমেন্টের মোস্ট হ্যান্ডসাম ছেলে প্রকাশকে খুব টেনেছিল। তারপর আস্তে আস্তে হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুকের গ্রুপ থেকে টুকটাক অ্যাসাইনমেন্ট, প্রোজেক্ট —এই সমস্ত নিয়েই কথাবার্তা চলাচল শুরু হয় ওদের। ওদের গল্পটা হয়তো এইভাবেই এগোতে পারতো, কিন্তু হিয়াকে মনের কথাটা বলে ওঠার আগেই প্রকাশ জানতে পারল হিয়ার মন অন্য কেউ কেড়ে নিয়েছে। তাই এই সুপ্ত ভালোবাসাটাকে কোনোরকমে দুমড়ে মুচড়ে প্রকাশ নিজের মধ্যেই ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে। কিন্তু বারংবার হিয়াকে চোখের সামনে দেখেও তাকে না পাওয়ার কষ্টটা বুকের মধ্যে মোচড় দেয়। রিনি প্রকাশের সবথেকে কাছের বন্ধু, রিনি হিয়ার ব্যাপারটা আগাগোড়া পুরোটাই জানে। রিনির পাশে থাকাটাই প্রকাশের কষ্ট অনেকটা লাঘব করে।
— কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি? প্রশ্নটা কর!
প্রকাশের আচমকা চুপ করে যাওয়ায় রিনি বলে উঠল। যদিও রিনি জানে প্রকাশের মনে এখন ঠিক কি চলছে। প্রকাশের কষ্টটা রিনি ভালোই বোঝে কারণ সে নিজেও যে ভুক্তভোগী। রিনি প্রকাশকে চিনত ক্লাস ইলেভেন থেকে। টিউশনের সূত্রেই আলাপ। প্রথম থেকেই প্রকাশের কথাবার্তা, হালচাল রিনিকে এক পাগলামোর নেশায় মাতিয়ে তুলছিল। হাসি-ঠাট্টা-খুনসুটির মাঝে কখন যেন প্রকাশ রিনির সব হয়ে গিয়েছিল।
ক্রমশ…