টিমটিমে লণ্ঠনের আভাসটুকু নিয়ে, বুকের শেষ ভয়টাও বিসর্জন দিয়ে,যখন সে এসে দাঁড়ালো নদীর চড়ায়,
তখন ছলকে ওঠা জলের ধাক্কায় তীরের কোলে মুখ গোঁজরাচ্ছিল ছোট্ট ডিঙিটা।
জলদস্যুদের ভয় আর সে পায় না।
পায় না ,একলা মেয়ের পথ হারিয়ে বিপথে যাবার ভয় ও।
জোনাকির মৃদু আলোয় আর মরা চাঁদের সোহাগি আভায়, পরিস্কার দেখতে পেল দূরে বাঁধা নৌকোয় সাহেবি বাবুদের মিলনের ছটফটানি।
নির্বোধ নৌকোটা যেন বারবার দুলে দুলে তার ই ইঙ্গিত দিচ্ছে ক্ষণে ক্ষণে।
আর ভেসে আসছে বাঁশির সুরের মতো বেশ্যার গলার স্বর।
সুর আর স্বরের অপূর্ব মিলন ঘটেছে সে রাতে।
বেশি দাঁড়ানোর সময় নেই আর আজ —
ভোরের আগেই সারতে হবে কাজ।
মরদগুলোর কোনো মাতলামিরই আমল আজ আর দেবে না সে।
নেশার ঘোরে হিংস্র বাঘের মতো যদি ঝাঁপিয়ে পড়েও কেউ,তবে পেটে গোঁজা ধারালো ছুরিটা দিয়ে,এক কোপে গলাটা নামিয়ে দিয়েই ঝাঁপ দেবে মাতলায়।
মাতলার মাতাল ঢেউ হয়তো বহুদূর ভাসিয়ে নিয়ে যাবে তার আচ্ছন্ন দেহটাকে।
তা যাক না ভয় কি?
না হয় সব কিছু ছেড়ে কোনো এক আধডোবা নৌকোর তলায় ঠাঁই পাবে সে,
অথবা ঝুলে রইবে সুন্দরীর কোনো এক শাখায়।
এই দেহ যেটাকে বাঁচাতে বাঁচাতে কোনোক্রমে টেনে হিঁচড়ে এতোদূর নিয়ে আসা, ক্ষুুধার্ত হায়না গুলোর থেকে বাঁচাতে বাঁচাতে এত পথ ছুটে আসা,
না হয় সেটাকে শেষ বারের মতো শান্তি দেবে সুন্দরবনের সেই বিখ্যাত পশুটা।
ভয় নেই আর–
যার জলে, স্থলে ,অন্তরীক্ষে বিপদের ঘনঘটা,
তার আশঙ্কা নেই আর কোথায়?
তার ভয় সর্বত্র,শুধু তার ভয় নেই আজ প্রাণে।
রাতের আঁধার কাটুক না কাটুক,লণ্ঠনের আলো জ্বলুক না জ্বলুক,জোনাকিও পথে থাকুক বা না থাকুক যোদ্ধাদের এগোতেই হবে।
সে যে এক প্রকৃত যোদ্ধা ।
সে লড়ে আসছে পেট বাঁচানোর লড়াই,লড়ে আসছে শরীর বাঁচানোর লড়াই,লড়ে আসছে ইজ্জত বাঁচানোর লড়াই।
আজ সমস্ত লড়াই সমাপ্ত করবে সে এই অন্ধকারের প্রাচীর ভেঙ্গে আলোর দিশায় উড়িয়ে দেবে বিজয়ধ্বজা।
ওই মরদ গুলোর বুকে লাথি মেরে সে এগিয়ে যাবে জয়ের পানে।
কাকে বলে ভয়?
সুন্দরবনের এক অখ্যাত গ্রাম থেকে শুরু করে কুরুক্ষেত্রের ময়দান পর্যন্ত সর্বত্রই প্রথিত হবে তার জীবনগাথা,তাকে এগোতেই হবে জীবনের টানে,
তাই কোনোদিন থামবে না সে।