অসমাপ্ত কবিতা

– কবির কবিতা এত ভালোবাসলি আর কবির জন্য এতোই অনীহা?

– ধুর! দু-চার পাতা লিখলেই কি আর কবি হওয়া যায়!

– তবে ওর লেখার খাতাগুলোকে নিয়ে প্রত্যেকদিন নাড়াচাড়া করিস কেন?
– সে মনের খেয়ালে। আসলে ওর লেখাগুলো আমার প্রত্যেকদিনের অভ্যাস হয়ে গেছে। কেমন যেন নাম না জানা হৃদ্যতায় জড়িয়ে গেছি ওদের সাথে।

– মিথ্যে বলছিস তুই, ডাহা মিথ্যে। আসলে ওর লেখাগুলোর মধ্যে তুই ওর ছোঁয়া পাস।

– যে মানুষটাকে কোনদিন ভালোই বাসলাম না তার ছোঁয়া পাওয়ার জন্য আমার কীসের আকুতি থাকতে পারে বল তো?

– তবে কাল চিলেকোঠার ঘরে ওর প্রথম লেখা চিঠিটা বুকে জড়িয়ে কাঁদছিলিস যে বড়!

– হাসালি! ওরকম কত চোখের জল ঝরিয়েছি তার কি ইয়ত্তা আছে রে! ওর লেখাটা তো একটা উপলক্ষ মাত্র।

– উপলক্ষ যতই ছোটো হোক না কেন তোর চোখের জলের ফোঁটাগুলো তো মিথ্যে নয়।

– মিথ্যেগুলোকে সত্যির আড়ালে ঢেকেই তো বেঁচে রইলাম এতকাল… তাই এখন আর সত্যি মিথ্যে নিয়ে বিশেষ মাথা ব্যথা নেই রে আমার।

– পিউ, কাল কৌশিকদার বাড়ি গেছিলাম। মানুষটা একেবারে অগোছালো হয়ে গেছে রে! লেখালেখির পাঠ তো সেই কবেই চুকিয়েছে।বলছিল কলমটা নাকি আজকাল আর সায় দেয়না।

– সময় কত কিছুই না বদলে দেয়! যে মানুষটা লেখা ছাড়া নিজের জীবনের মানে খুঁজে পেত না, সে লেখার পাঠ চুকিয়ে দিল! এত সহজে!

– অভিমানটা ছুঁড়ে ফেলে রেখে একটিবারের জন্য মানুষটার সাথে কথা তো বলতে পারতিস! ওর শেষ লেখা অসম্পূর্ণ গল্পটা নিয়ে এলাম তোর জন্য, পারলে পড়ে দেখ। পাতার পর পাতা জুড়ে শুধু তুই আছিস। তোকেই এঁকেছে কল্পনায়…
– এত ভালোবাসে আমায়!
ভালো তো আমিও বাসি…
তবে সব ভালোবাসাকেই যে প্রেমের বাঁধনে বাঁধতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই।
প্রেম তো অনেকেই করল, আমি না হয় দূরে থেকে শুধুই ভালোবাসলাম…

“ভালোবেসে, সখী, নিভৃতে যতনে
আমার নামটি লিখো– তোমার
মনের মন্দিরে।…”

Facebook Comments Box

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *