কবিতা কী? এই প্রশ্নটা যদি বর্তমান সমাজের মুখে ছুঁড়ে মারি তাহলে সেটা একটা বিতর্কমূলক আলোচনার পর্যায়ে পৌঁছে যাবে।আচ্ছা আমরা কবিতা কেনো লিখি বলুন তো? নিজের মনের ভাব বহিঃ প্রকাশের জন্যে নাকি এই মুখোশধারী সমাজের বুকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে নাকি বেকারত্বের হাত থেকে রেহাই পাবার একটু কিঞ্চিৎ প্রচেষ্টা হল কোনটা? কবিতা কী, কেন লিখি এই সব দ্বন্দ্বে না গিয়ে চলুন কবিতাকেই জিজ্ঞেস করা যাক আসলে কবিতা কী?
স্বরবর্ন এবং ব্যঞ্জনবর্নের সাতরং মিলিয়ে হয় সব ছন্দের রচয়িতা
অন্তহীন কিম্বা অন্তমিলেই রচনা করে সে নিজেকে নাম হল তার কবিতা
মনের সাদা পৃষ্ঠাতেই ভাসিয়ে দেয় সব অব্যক্ত কথকতা
বিরহ, প্রেমেরা করে সবাই আমার সাথে সখ্যতা
কেউ বা বাঁচে আমায় আগলে নিয়ে,কেউবা লেখে নিজের সখে
কেউ বা সাজায় আমায় নোনতা রেখা দিয়ে, তো কেউ আবার মুক্তি চায় আমার বুকের মাঝে ঠোঁট রেখে।
যারা উপার্জনের একমাত্র পথ হিসেবে কবিতাকে বেছে নেন, কবিতা কী তাদের জন্যে? কবিতারা হল ব্যথার মলম যেখানে সমস্ত অভিমানেরা আস্তে আস্তে আদর খেয়ে দিব্যি গুছিয়ে যায় নানান শব্দের কোলাহলের ভিড়ে।
তাই তো লিখতে চেয়ে বুঝেছি আসলে কবিতা কী
অবিশ্বাসেরা হয়েছে দূর ,চেনা ছন্দেরা বাঁচে একাকী
প্রেমালাপের বৃষ্টি যত সব কালি কলমের লেখনীতে
বিচ্ছেদের সংলাপও সৃষ্টি হয় ঐ কবিতার গাঁথুনিতে
কবিতারা বাসা বাঁধে আজ স্বপ্নের অলীক কথামালায়
প্রভাতী মেঘে অবকাশের বাতাসে জংলীরা ভাসে কাগজের ভেলায়
অতীতে খুঁজে পাওয়া কবিতা কী ধূলোয় বাঁচে সম্মানে
কখনো বা হারিয়ে যায় তারা শত অভিমানে
কবিতারা হল শক্তির উপাসক। ভোগবিলাস, ঐশ্বর্য ঝাঁ চকচকে তার ধাতে সয় না।সুন্দরের প্রতীক সে। সে কিন্তু সবার মাঝে আনন্দ দেয়।অনালোকিতের তলদেশের মাঝেই কিন্তু তার অগাধ জ্ঞানের সঞ্চার। যেখানে ছলনা বা মিথ্যার কোনো স্থান নেই। সুতরাং তারা কবি সাজেন কিন্তু তারা প্রকৃতপক্ষে মুখোশরূপী এক প্রতিবিম্ব তাদের জন্য কবিতা নয়। আসলে কবিতারা হল আলিঙ্গনের ছায়াতুর ভাষায় লিখিত এক অন্তরা।সে কখনো বা বেজে ওঠে অভিমানী সরগমে আবার কখনো আঁচড় কাটে বিরহের ছিন্ন বীনায় অভিযোগের সুরে।
জড়িয়েছি তাই কবিতার জালে নিজেকে
আটকে পড়েছি এখন স্বরবর্ন এবং ব্যঞ্জনবর্নের ফাঁকে
মাত্রাগুলো যেমন অক্ষর বিনা পরিচয় হীন
কবিতা বিনা আমার জীবন উদ্দেশ্য বিহীন