ভ্যাপসানো গ্রীষ্মের রাতে যখন আমার মধ্যবিত্ত ঘর দমবন্ধ-করা হয়ে ওঠে…
তুমি সেখানে অবশ্যম্ভাবী হিমেল ভোরের মতো,
যার অপেক্ষায় ঘন্টার-পর-ঘন্টা জেগে থাকা যায়।
আমি জানি তুমি আসবেই, সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতির মতো বিভ্রম নও তুমি।
আমি জানি তুমি আসবে আর আমি ঘুমোবো।
শান্তির ঘুম কার না চাই বলো?
মন্ত্রী থেকে আমলা, সৈনিক থেকে কেরানি, ডাক্তার কিংবা রাঁধুনি… সবাই, সব্বাই একটু স্বস্তির ঘুম চায়;
ভীষণ ব্যস্ত মানুষকে গভীর-ঘুমে সদ্যোজাত ফুলের মতোই নিশ্চিন্ত লাগে
তুমি আমায় প্রতি ভোরে অমন করেই মুক্ত করো।
তোমার দিকে অবাক হয়ে মাসের-পর-মাস চেয়ে থাকা যায়
সুন্দর তো সব মানুষই, মায়াবী কজন হয় বলো?
তুমি বস্তা-বস্তা মুগ্ধতা নিয়ে আমার কানের কাছে নিঃশ্বাস ফেলো—
আমি হতবাক হয়ে শিউরে উঠি, মুগ্ধ হই।
মুগ্ধ হয়ে শুধুই শুনে যাই… যেন পরম সত্যগুলো তোমার কণ্ঠে বাঁধা।
প্রাচীন ইতিহাসে ঠিক যেমনটা গুরু-শিষ্যের সম্পর্কের কথা লেখা,
ঠিক তেমনটাই তোমার-আমার যা কিছু, আমাদের সবকিছু।
যেন এতদিন, এতকাল যা শিখেছি সব ভুল, ভুল…
তুমি ছাড়া বোধহয় এত স্পষ্ট করে জীবন কেউ বোঝেনি, বোঝাতে পারেনি,
এত তথ্য হয়তো পৃথিবীর তাবড়-তাবড় গ্রন্থাগারেও নেই
আমি সমৃদ্ধ হই, ঠিক যতখানি সিদ্ধার্থ হয়েছিলেন।
ভালবাসার মতো অত সহজ কখনও মনে হওনি তুমি
বরং তোমার প্রতি প্রতিটি আবেগ যেন পার্থিব সুখের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে।
যেন আমি দিকভ্রান্ত কোনো পথিক
আর তুমি সেই নামা-বারণ স্টেশন যে আমায় লক্ষ্যের দিকে একটু-একটু করে এগিয়ে নিয়ে যায়…
তুমি আমার পাশে বসে চা খাওয়ার বন্ধুটি নও, রাত বাড়লে সান্ত্বনার কাঁধও নও।
তুমি আমার সহচারী যার সাথে মিছিলে হেঁটে সমাজ পাল্টানো যায়
তুমি আমার সেই বোধগম্যতা, যা বারংবার বুঝিয়েছে মনুষ্যত্বের প্রথম পরিচয় সহিষ্ণুতা।
তুমি বোধহয় প্রেম নও, প্রেম এত বৃহৎ হয় নাকি?
তুমি বরং আমার সেইসব অনুভূতি যা দিয়ে আরেকজনকে ভালবাসা যায়, ভাল রাখা যায়।
তুমি আমার কাছে বিপ্লবের সুফলের মতোই স্পষ্ট, নিষ্পাপ এবং অনিবার্য।।
Obhishek Kar