এই পুজোয় ঘুরে এলাম “হায়রোগ্লিফের দেশে”। নামটা শুনেই নিশ্চয় আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠছে পিরামিড, মমি এইসব, তাই না? হ্যাঁ, একদম ঠিক ভেবেছেন আমি মিশর ভ্রমণের কথাই লিখতে চলেছি তবে এটা দেহের ভ্রমণ না এই ভ্রমণটা মনের, লেখক অনির্বাণ ঘোষের কলমের উপর ভর করে।
ইতিহাস পাঠ্য বই হিসাবে অনেকেরই অপছন্দের। তবে এই অপছন্দের তালিকার বিষয়টি জানতে আবার বেশ ভালোও লাগে আর দেশটা যখন মিশর তখন তো আর কথাই নেই! টিভির ওপারে টিনটিন হোক বা কাকাবাবু এই দেশটার প্রতি ছোট থেকেই আমাদের আগ্রহের গ্রাফ ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী করে তুলেছেন। তাই বন্ধুর সাজেসেনে এই বইটির নাম শুনে আর দেরি করিনি, পড়তে শুরু করলাম পুজোতেই। পড়তে পড়তেই বুঝলাম আসলে গল্পের ছলে ইতিহাস বলা কাকে বলে। পঁচিশটি ছোট ছোট গল্প রয়েছে বইটিতে তার মধ্যে রয়েছে তিনটে প্রধান চরিত্র আর একটুকরো মিশর।
চরিত্র তিনটির মধ্যে দুইজন মেডিক্যাল কলেজের ছাত্র আর একজন কলেজ স্ট্রিটের ছোট্ট একটা বই দোকানের মালিক, ভবেশ সামন্ত। স্বভাব চরিত্রের মধ্যে অনেক অমিল থাকলেও এই তিনজনেরই আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু কিন্তু সেই মিশর! এই বইয়ের প্রতিটা গল্প একটার সাথে পরেরটা সম্পর্কিত আর রহস্যের সুবাস কিন্ত একদম বইয়ের শেষ শব্দ অবধি অটুট। বইয়ের ভিতর রয়েছে অনেক অনেক ছবি তার মধ্যে কিছু রঙিন আর কিছু সাদাকালো, রয়েছে কিছু স্কেচ আর রয়েছে কিছু হায়রোগ্লিফ ভাষার লেটার অর্থাৎ চিহ্ন।
এই চিহ্নগুলো মনে রেখে আমরাও গল্পের চরিত্রদের মতোই কিন্তু হায়রোগ্লিফে অনুবাদ করে ফেলতে পারি বেশ কয়েকখানা শব্দ। বইটির একদম শেষ অংশে রয়েছে মিশরীয় সভ্যতার দেবদেবীর সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আধুনিক মিশরের ম্যাপ যা এই মিশরীয় ইতিহাস মনে রাখতে ভীষণভাবে সাহায্য করবে। শিল্পী অনিকেত মিত্র’র আঁকা প্রচ্ছদ বইটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে, হৃদয়ের গহীনে এই ছবি সংরক্ষণ করে রাখার মত। বইয়ের একদম শেষ পাতায় রয়েছে লেখকের এই ইতিহাস লেখার ভিত্তি, ইংরেজি ভাষায় লেখা মিশরীয় ইতিহাসের কিছু সহায়ক বইয়ের নাম।
সব মিলিয়ে এই বই ইতিহাসের সহায়ক গ্রন্থ তো নিঃসন্দেহে হয়েছে সাথে এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মতোই আকর্ষণীয়। অমীমাংসিত রহস্যের সমাধান নিয়ে এই বইটির দ্বিতীয় অংশ যাতে খুব তাড়াতাড়ি প্রকাশ হয় এই অনুরোধ রইল লেখকের কাছে, আর আগামীতে যেন এরকম বই বাংলা পাঠক সমাজ আপনার থেকে উপহার পেতে পারে এই ইচ্ছাই পোষণ করি।
– অন্বেষা দে
ছবি : গুগল